Cvoice24.com

পদ্মা সেতু নিয়ে চট্টগ্রামে দলীয় নেতার স্ট্যাটাসে চটেছে বিএনপি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ২৬ জুন ২০২২
পদ্মা সেতু নিয়ে চট্টগ্রামে দলীয় নেতার স্ট্যাটাসে চটেছে বিএনপি

‘যুগ যুগ অপেক্ষার পর আজ দক্ষিণ পশ্চিম বাংলার স্বপ্ন পূরণ হলো, আলহামদুলিল্লাহ।’— পদ্মা সেতুর পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেয়ায় ‘তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে’— উল্লেখ করে মো. ফজলুল হক নামের এক নেতাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরের আকবর শাহ থানা বিএনপি। অভিযুক্ত ফজলুল হক আকবর শাহ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

শোকজ নোটিশ দেয়ার পর পদ্মা সেতু নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে দেয়া আরেকটি স্ট্যাটাসে ফজলুল করিম লিখেছেন, ‘৪৫ বছর আগের কষ্টটা মনের মধ্যে চেপে রাখতে না পারার জন্য দুঃখিত।’

রবিবার (২৬ জুন) আকবর শাহ থানা বিএনপির সভাপতি আবদুস সাত্তার সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ফজলুল হককে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে—‘আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পদ্মা সেতু নিয়ে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাহা ভাইরাল হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে এবং চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার কারণ দর্শিয়ে আগামী ৩ দিনের মধ্যে আকবর শাহ থানা বিএনপির সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেয়া হলো।’

এর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের ফেসবুক টাইম লাইনে দেয়া স্ট্যাটাসে আকবর শাহ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক লিখেছেন— ‘যুগ যুগ অপেক্ষার পর আজ দক্ষিণ পশ্চিম বাংলার স্বপ্ন পূরণ হলো, আলহামদুলিল্লাহ। ছোটকালে বরিশাল থেকে ঢাকা আসতাম তখন খুব ভয়ে থাকতাম কখন লঞ্চ পদ্মা নদী পাড়ি দিবে। রাত ১১টা- ১২টার সময় খালাসিরা ডেকে বলতো লঞ্চ এখন পদ্মা পাড়ি দিবে, সকলে আল্লাহকে ডাকুন দোয়া কালাম পড়ুন ছোটরা ঘুমিয়ে যাও। তখন ডরে খাতা মুরা দিয়ে শুয়ে থাকতাম। তুফান বাতাসের শো শো আওয়াজে ভয়ে কেপে উঠতাম, এই বুঝি লঞ্চ ডুবে গেল। রাত ২টা - ৩টার সময় খালাসি ডাকতো চাঁদপুর চাঁদপুর।’

‘খাতার তলের থেকে মাথা বের করে দেখতাম চাঁদপুরের বিদ্যুৎ বাতি দেখা যায়। আবার ঢাকা থেকে বাড়ি আসতে একই কষ্ট। বাড়ি এসে মুরুব্বিদের সাথে কষ্টের কথা বলতাম। আমার বড় চাচাকে বললাম আচ্ছা জাদু পদ্মা নদীর উপর দিয়ে একটা পোল বানাইয়া দিতে পারে না! জাদু বললো—ও স্বপ্নের কথা। আমি অর্থ না বুঝে চলে গেলাম। আজ ৪৫ বছর পর (আমার হিসেবে) দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার স্বপ্ন পূরণ হলো। সেটা পোল নয়, স্বপ্নের বহুমূখী পদ্মা সেতু। আজ ২৫ জুন ২০২২ ইং উদ্বোধন হলো স্থলপথের যাতায়াত। আমাদের টাকায় আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কথাটি সত্য কিন্তু একজন উদ্যোক্তা লাগে। আর সেটা করলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’— স্ট্যাটাসে যোগ করেন বিএনপি নেতা ফজলুল হক। 

এই স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতেই ফজলুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আকবর শাহ বিএনপি। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর শাহ বিএনপির সভাপতি আবদুস সাত্তার সেলিম সিভয়েসকে বলেন, ‘এটা আমাদের সাংগঠনিক বিষয়। এই বিষয়ে আপনি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছেন? যাকে শোকজ করা হয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করুন। এই বিষয়ে আমি সংগঠনের বাইরে কোন কথা বলবো না।'

ফজলুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। তবে এর মধ্যে আগের স্ট্যাটাসের জন্য ক্ষমা চেয়ে ফজলুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে ফজলুল হক লিখেছেন,  ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সম্মানিত নেতা ও সহযোদ্ধা ভাই ও বোনেরা আসসালামুয়ালাইকুম। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত যে , কেন আমি আজ থেকে ৪৫ বছর আগের কষ্টটা মনের মধ্যে চেপে রাখতে পারলাম না। ১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন দক্ষিণ বাংলার কৃতি সন্তান ৯১ এর জাতীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. ইউনুস খান, আমার আত্মীয় এবং রাজনৈতিক গুরু সংসদে পদ্মা সেতু নির্মানের প্রস্তাব করেন। পরে তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সারে মারা যান। আজ যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে, তখন বরিশালের ছেলে হিসেবে আবেগটাকে চেপে রাখতে পারিনাই। আবেগ যে মাফিয়ার পক্ষে যাবে সেটা বুঝতে পারিনাই, সেজন্য সকল বিএনপির পরিবারের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

সিভয়েস/এআরটি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়