Cvoice24.com

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত এম এ সালাম বললেন— ‘নিচে চলে যাও’

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ১৩ আগস্ট ২০২২
ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত এম এ সালাম বললেন— ‘নিচে চলে যাও’

‘এখানে যারা বাইরে আছ তোমরা হয়তো নিচে চলে যাও নাহলে ভেতরে এসে বসো, কথা শুনো।  এখানে যে কাজে এসেছো সেটা কিছুটা হলেও লাভে আসে কিনা সেটা একবার দেখো।’ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে শুরুতেই অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশমুখে বিশৃঙ্খল অবস্থায় ভিড় করা ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে এভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। সজ্জন মৃদ্যুভাষী হিসেবে পরিচিত এম এ সালাম এমন বিরক্তির কারণও ব্যখ্যা করেন খানিকটা পর। বলেন ইতিহাসের সত্য জানার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনাগ্রহের বিষয়টি হতাশ করছে তাকে। 

শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

ইতিহাসের সত্য জানার বিষয়ে ছাত্রলীগের অনাগ্রহ নিয়ে এম সালামের বিরক্তি আরও ব্যাখ্যা করতে চলতি বছরের ৭ মার্চের একটি অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে এম এ সালাম বলেন, ' গত মার্চের ৭ তারিখে আমাদের পুলিশ বাহিনী সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠান করেছিল। আমাকে চট্টগ্রামে পুলিশের একটি অঞ্চলের একটি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। তো রিমা কমিউনিটি সেন্টারে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে শ’দুয়েক মহিলা উপস্থিত ছিলেন। বাকি ৩০০-৪০০ ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলো। অনুষ্ঠানের শুরুতে ৭ মার্চের ভাষণ প্রজেক্টরে চালিয়ে শুনানো হয়। তার উপর সকলে বক্তব্য রাখেন। সবাই ৩-৪ ঘন্টা বক্তব্য রাখার পর আমি প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে উঠলাম।' 

‘উঠেই আমি বললাম অনেকক্ষণ ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে আলোচনা হলো। এখন কেউ একজন আমাকে বলতে পারবেন কোন সালে, কোথায়, কোন জায়গায় বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলো? যে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন তাকে আমি ১ হাজার টাকা পুরষ্কার দিব।’— বলেন এম এ সালাম।

কিন্তু দীর্ঘ আলোচনা শুনার পর সেখানে উপস্থিত কেউই সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি জানিয়ে এম এ সালাম বলেন, ‘প্রথমে আমি নারীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তারপর আমি ছাত্রলীগের যারা ছিল তাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করি কেউ বলতে পারে নাই। ইতিহাসের সঠিক সত্যটা জানার জন্য আমি এই কথা বললাম। আমার এক হাজার টাকা সেদিন বেঁচে গিয়েছিল কাউকে দেয়ার জন্য পাই নাই।’

ইতিহাস চর্চায় ছাত্রলীগকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে এম এ সালাম বলেন, ‘ইতিহাসের সত্য না জানলে বঙ্গবন্ধুর মত একজন মহামানব যিনি তাঁর জীবন যৌবন বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। যাকে পাকিস্তানিরা হত্যা করার সাহস করেনি, স্বাধীন দেশে কারা কেনো তাঁকে হত্যা করলো? এটা কী ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নাকি আদর্শকে হত্যা করার চেষ্টা এসব না জানলে চলবে না। এসব জানতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে কত রকমের কত সুবিধা দিলেন। নগদ টাকা, বিভিন্ন ভাতা। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন একটু তেলের দাম বাড়তেই সেটাকে কাজে লাগিয়ে মাঠ গরম করছে বিএনপি। তাদের এসব মোকাবেলা করতে হলে আপনাকে জানতে হবে তেলের দাম কেন বেড়েছে। এসব বিষয়ে সমুচিত জবাব দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।’

শোক দিবসের আলোচনা সভার বেশিরভাগ সময়ই ছাত্রলীগকে এসব পরামর্শ দেন এম সালাম। এতে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ অবাক হলেও সালামের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন মূলত পড়ুয়া ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির নেতা এম এ সালাম সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকটাই বিরক্ত। শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সেই বিরক্তিই প্রকাশ করলেন এম এ সালাম। 

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অধ্যাপক মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, মহিউদ্দিন রাশেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, জসিম উদ্দিন শাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বেদারুল আলম বেদার, সেলিম উদ্দিন, আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বাসন্তি প্রভা পালিত ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী তপু।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়