শুধু কী আমেরিকায় নীড় পেতে চেয়েছিলেন এমরান?
সিভয়েস ডেস্ক

নাটকের ক্লাইমেক্সটা তখন জমে উঠে যখন সপরিবারে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হাজির হন এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই এই কাজ করেন তিনি। তবে কী সত্য হল ব্যরিস্টার সুমনের মন্তব্য?
সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি ড. ইউনূস প্রসঙ্গে দেয়া এমরানের বক্তব্যকে বড় কোন পরিকল্পনার অংশ বলে মন্তব্য করেন। দুদিন পরই ‘সেই পরিকল্পনার’ কিছুটা সামনে আসে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন ব্যারিস্টার সুমন। এতে এমরান আহমেদ ভুঁইয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীর জীবনে যখন সংকটময় মুহূর্ত আসে তখনই কিন্তু সুবিধাবাদী মানুষের জন্ম হয়। ডিএজি এমরান সাহেব হঠাৎ করে বললেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব ভালো মানুষ। তার সঙ্গে বিচারিক ঝামেলা করা হচ্ছে এবং উনি তার বিরুদ্ধে কোন সাইন করবেন না।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হয়ে, সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও এই এমরান সাহেবকে আমি বহু দুর্নীতিবাজের পক্ষে শুনানি করতে দেখেছি। ওই সময় কোনদিন তার বিবেক জাগ্রত হয়নি। হঠাৎ করে উনার বিবেক জাগ্রত হয়ে বললেন যে, ইউনূস সাহেব ভালো মানুষ। উনি ব্যক্তিগত মতামত দিতেই পারেন কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে ডেকে এনে বললেন যে, আমি এটা সাইন করিনি। এর মানে, আপনি নিশ্চিত থাকেন এই ভদ্রলোকের বড় রকমের কোন প্ল্যান আছে। বড় কোন প্ল্যানের অংশ হিসেবে তিনি এই কাজ করছেন।
ব্যারিস্টার সুমনের এই বক্তব্যের দুদিন পরই শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সপরিবারে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হাজির হন এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই এই কাজ করেন তিনি।
যে মার্কিন দূতাবাসের সামনে দিয়ে সর্বসাধারণের চলাচল সময়ই নিয়ন্ত্রিত থাকে, সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সপরিবারে এমরান কিভাবে ঢুকলেন? তবে কি নাটকের প্লট সাজানো ছিলো আগে থেকেই? এমন প্রশ্ন সামনে আসে।
জানা যায়, নাটকের প্লট সাজানো ছিলো আগেই। এমরানকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই শুরু হয় সেই নাটকের মঞ্চায়ন।
শুক্রবার সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, জনস্বার্থে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বলেন, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিয়ম হলো, সরকারি চাকরিতে থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে প্রেসের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তিনি সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এছাড়াও তিনি সরকারি পদে থেকে সরকার সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলেছেন।
এরপরই সামনে আসে নাটকের ক্লাইমেক্স। ঢাকার বারিধারায় মার্কিন দূতাবাসের আশপাশে বরাবরই থাকে কড়া নিরাপত্তা। এমনকি জন সাধারণের চলাচলও নিয়ন্ত্রিত সেখানে। অথচ একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, পরিবার ও তল্পিতল্পাসহ দূতাবাসে ঢুকে পড়েছেন এমরান। তিনি নিজেও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে দূতাবাসে যাওয়ার কথা জানান। অথচ ড. ইউনূসের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেয়া কিংবা বিবৃতি দেয়া বহু বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী এবং সাধারণ মানুষ কোনো ধরণের ভয়ভীতি এবং শঙ্কা ছাড়াই দেশে অবাধে চলাচল করছেন।
গেলো ৪ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. ইউনূসের শ্রমিক ঠকানোর মামলার বিষয়ে সপ্রণোদিত হয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তখনকার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হয়রানি।’
রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন এমরান। এমনকি উচ্চ আদালতে অবকাশকালীন ছুটি চলায় সেদিন কোর্টে তার কোনো কাজও ছিলো না। শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিলো, তবে কি শুধুমাত্র বিতর্ক সৃষ্টি করা কিংবা কোনো পক্ষের স্বার্থ উদ্ধারের নাটক করার জন্যই সেদিন গণমাধ্যমের সামনে এসেছিলেন এমরান?
৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, সংবাদ মাধ্যমে কথা বলার আগে কোনো অনুমতি নেন এমরান। এমনকি তাকে ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেয়ার জন্যও অফিসিয়ালি কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। নির্দিষ্ট কাউকে খুশি করতে এমরান বিবৃতি দিয়েছিলেন বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
সেদিন চার ঘণ্টার নাটকের পর রাতে মার্কিন দূতাবাস থেকে বেরিয়ে এমরান তার লালমাটিয়ার বাসায় চলে যান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অব্যাহতি পাওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই সপরিবারে মার্কিন দূতাবাসে অবস্থান নেয়া এবং সেখানে বসে গণমাধ্যমে কথা বলা প্রমাণ করে আদতে এমরান কারো স্বার্থ উদ্ধারের নাটকের চরিত্র হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, এমরান আহম্মদের এই পদক্ষেপের সঙ্গে বিশেষ মহল জড়িত থাকতে পারে। তারা অনেক সময় এইসব কাজ করায়। এটি একটি নীলনকশার অংশ। এমরান অ্যাটর্নি জেনারেল হলেও সেখানে ঢুকতে পারতেন না, যদি এটা নীলনকশার অংশ না হতো। তাকে ভিতরে ঢুকতে দেয়া হতো না।
এদিকে ভিডিও বার্তায় ড. ইউনূস প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম থেকে ঋণ নিয়ে কেউ বৃহৎ হয়েছে বলে আমার জানা নাই। অথচ ড. মুহম্মদ ইউনূসের মতো লোকেরা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে এত বড় হয়ে গেছেন যে, হিলারি ক্লিংটনের মতো মানুষের নির্বাচনী প্রচারণায় টাকা ব্যয় করছেন। বাংলাদেশে থেকে বাংলাদেশি মানুষের টাকা তিনি হিলারি ক্লিংটনের নির্বাচনি প্রচারণায় দিচ্ছেন। এটার ফলও কিন্তু উনি পাচ্ছেন। ১৭৫ জন বিশ্বনেতা বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করতে হবে।