বাংলাদেশের মানুষ কারও ধমকে ভয় পায় না: শেখ পরশ
সিভয়েস ডেস্ক

যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন আর ধমক ভয় পায় না। বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বাঙালি জেগে উঠবেই। শত বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঙালিকে টিকে থাকতে হয়। সুতরাং এই সকল সাময়িক মানুষ প্রদত্ত প্রতিকূলতা বাঙালি ভয় পায় না। এই সকল নিষেধাজ্ঞা এবং বঞ্চনাও বাঙালি বীরত্বের সাথেই মোকাবিলা করবে।
বুধবার রাজধানীর শ্যামপুর থানার সম্মুখে বালুর মাঠ রাস্তায় শ্যামপুর-কদমতলী থানার অন্তর্গত ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,১৯৭১ সালে যখন রাজাকার, আলবদর, আল-সামস বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নি সন্ত্রাস করেছে তখন এই সকল বিশ্ব বিবেকের ভূমিকা কি ছিল? তখন কি তারা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলেছিল? বা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল? এমনকি ২০০১ সালেও ঐ জামাত-বিএনপি সরকার যখন সেই পাকিস্তানী কায়দায় আমাদের সনাতন ধর্মালম্বী ভোটারদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তাদেরকে উৎখাত করেছিল, তখনো কি এই মানবিক মূল্যবোধের ধারক এবং বাহকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন? বাংলাদেশের প্রায় এক যুগের বেশি সময় যে অগণতান্ত্রিক মিলিটারি, স্বৈরশাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, সেই সময়ও কি তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসাবে সরব ছিল? ১৫ই আগস্ট যখন নারী শিশু হত্যা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল কিনা, আমার তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে। পরিষ্কারভাবে এখানে একটা পক্ষপাতিত্ব লক্ষণীয় এবং একটা দ্বিচারিতা বিরাজমান।
‘এটা শেখ হাসিনার উপর অন্যায় এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্যও খুবই দুর্ভাগ্যজনক অবিচার, যে এত প্রগতি এবং উন্নয়নের পরেও এই সকল সমাজের তথাকথি বিবেকদের শাসন আমাদের বরদাস্ত করতে হয়? দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার! দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের হতভাগা জনগণের! বাংলাদেশের মানুষের যখন পরনে কাপড় থেকে বঞ্চিত, তখন তারা সবক দেয় নাই। বাংলাদেশের মানুষ যখন শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত, স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত তখন তারা নিষেধাজ্ঞা দেয় না। বাংলাদেশে মানুষ যখন দুর্ভিক্ষ কবলিত তখন তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে খাদ্য জাহাজ মাঝ সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এমন একটা সময় যখন এদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হয়ে, এদেশের মানুষ মাথা উচু করে দাঁড়াচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এমন একটা সময় যখন বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নির্মূল করে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে যুবলীগ সভাপতি পরশ বলেন, রাজনীতিতে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নাই। আমাদের এই সময় পরিশ্রমী কর্মীবাহিনী একান্ত প্রয়োজন। ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া পদ সর্বস্ব রাজনীতির দিন শেষ। এখন জেগে উঠার সময়। আমাদের সেই রকম আজকের প্রজন্মের নেতা-কর্মী দরকার যারা স্বপ্রণোদিতভাবে সক্রিয় থেকে নতুন ভোরের আলো ছড়াবে, নবসম্ভাবনা জাগ্রত করবে, নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। জনবিচ্ছিন্ন এবং নিষ্প্রভ কর্মীবাহিনী আমাদের কাম্য না। আমাদের কাম্য সেই নেতৃত্ব যারা নদীর মোহনা থেকে সাগর ডেকে এনে জনসমুদ্রতে রূপান্তরিত করবে। নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন তৃণমূল নেতৃত্ব আমাদের আজকের প্রত্যাশা। এই ওয়ার্ড সম্মেলনের মাধ্যমে আপনারা সেই নেতৃত্ব সৃষ্টি করবেন যাদের ডাকে জনসমুদ্র সৃষ্টি হবে, যে পর্বতসম বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পাহাড় চুড়ায় উঠার জন্য প্রস্তুত থাকবে। নেতৃত্বের সেই ভিত্তি আপনাদেরই সৃষ্টি করতে হবে আজকের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে।
‘আপনাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি কঠোর পরিশ্রম করে রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে হওয়া সত্বেও একজন কর্মী হয়ে পায়ে হেটে রাজনীতি করেছেন। কোনরকম জাক-জমক বা জৌলুশ ছিল না তার আচার-আচরণ, চাল-চলনে। অতি সাধারণ জীবন যাপন করেছেন; পোশাক-আসাক, বেশ-বাস, চাল-চলনেও ছিল অতি সাধারণ এবং সাধারণ মানুষের কাতারে মিশেই তিনি রাজনীতি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আজকে অনেকে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে। আমার প্রশ্ন
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আজকের এই সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ওয়ার্ড পর্যায়ের যে নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে সেই নেতৃত্ব আমাদের সুখী-সমৃদ্ধ, শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। তাঁর হাত ধরেই ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত রাষ্ট্রে। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যুবকদের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথমত, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদেরকেই রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার আবারো রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসে। সেই লক্ষ্যে আমাদের ৩টি কাজ করার প্রয়োজন। প্রথমত, সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়াবার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনৈতিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত্ব সর্বোপরি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ এবং গ্রুপিং বন্ধ করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বিএনপি-জামাত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিদেশীদের কাছে নালিশ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে রুখে দিতে পারবে না। তিনি বলেন, আজকে যারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে আসবেন তারা হবেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, শেখ হাসিনার আদর্শের কর্মী। কোন দুষ্কৃতিকারীদের জায়গা এই যুবলীগে হবে না। এই অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুকন্যা যাকেই নৌকা প্রতীক দিয়ে পাঠাবেন তাকেই বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে স্বাধীনতাবিরোধী দল, ’৭৫-এর ঘাতক চক্র, দেশের টাকা আত্মসাৎকারীরা ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীরা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামাত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, তাদের সকল ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়ে আবারো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ঘরে ফিরবে যুবলীগ।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাড. সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা,সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি সৈয়দ আহমেদ, সঞ্চালনা করেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের অর্থ সম্পাদক ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ সায়মন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক হাজী মুক্তার হোসেন।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাইফুর রহমান সোহাগ, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হারিছ মিয়া শেখ সাগর, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক আরমান হক বাবু, দপ্তর সম্পাদক মোঃ এমদাদুল হক এমদাদ, সহ-সম্পাদক আইয়ুব আলী, সদস্য গোলাম মোস্তফা।
উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকতসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।