Cvoice24.com

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা
নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলও চিহ্নিত

শাহরুখ, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ৩০ জুলাই ২০২৪
নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলও চিহ্নিত

আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের সামনে লাঠিসোটা হাতে দলবল নিয়ে অবস্থান নেন জামায়াতের সাংস্কৃতিক শাখার চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি ইসমাইল চৌধুরী।

১৯ জুলাই (শুক্রবার) নগরের জামালখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, আন্দরকিল্লা-কাজীর দেউড়ি-নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশ বক্সে হামলাসহ নারকীয় তাণ্ডবে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া জুবিলী রোডের সহিংসতায় জড়িত দুজন ছাত্রদল নেতাকেও চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ‍কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নিহতদের স্মরণে ওই দিন জুমার নামাজ শেষে  লালদীঘি মাঠে গায়েবানা জানাজার পর বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

ওই দিনের ঘটনার একাধিক ছবি ও ভিডিওতে তাণ্ডবের নেতৃত্বে দেখা গেছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ এবং বর্তমান সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলসহ একাধিক নেতাকর্মীকে। পুলিশও একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। 

সিভয়েস২৪’এর হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের সামনে লাঠিসোটা হাতে দলবল নিয়ে অবস্থানে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাংস্কৃতিক শাখার চট্টগ্রাম মহানগরের সেক্রেটারি ইসমাইল চৌধুরী।

এছাড়া অন্য একটি ভিডিওতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের নিয়ে ভাঙচুরের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ ও বর্তমান সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলকে। 

চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ ও বর্তমান সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েল

আরেকটি ভিডিওতে জুবিলি রোড এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তরিকুর রহমানকে। তার নেতৃত্বে নগরের জুবিলি রোড এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া সেদিন মহসিন কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. আব্দুল আলী রাব্বীরও উপস্থিতি ছিল এনায়েতবাজার মোড়ে।

এনায়েত বাজার মোড়ে সহিংসতা চলাকালে মহসিন কলেজ ছাত্রদল নেতা আবদুল আলী রাব্বীর সেলফি।

এসব ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন বাকলিয়া রসুলবাগ ওয়ার্ড ইসলামী ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক ফাহিম উদ্দিন আস সাবিক, ইসলামী ছাত্রশিবির জুবিলী রোড এলাকার কর্মী ওমাউল ইসলাম সাফিন, টেরিবাজার ইউনিট ছাত্রশিবিরের কর্মী এরফান উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থক জামশেদ তালুকদার, মো. শহিদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মো. তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ, আল আমিন রায়হান, রমজান আলী, সাইফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মো. জুনায়েদ হোসেন, আনাছ উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম, মো. ফয়সাল, তাহসান মাহাদি, মো. সাকিবুল ইসলাম এবং দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা থানা ইউনিট ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথী মোর্শেদুল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, সিসিটিভি, বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত একাধিকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকেই ২৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। যাদের বেশিরভাগ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি, ভিডিও, ছবি সংগ্রহ করেও তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলছে। তাদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম ওবায়েদুল হক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নামে ওইদিনের গায়েবানা জানাজার আয়োজক ছিল জামায়াত-শিবির ও বিএনপি। আমরা তাদের চিহ্নিত করছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে জামায়াত-শিবির, বিএনপি-ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘ইতোমধ্যে নাশকতার সাথে জড়িতদের অনেককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’ 

জুবিলী রোডে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তরিকুর রহমানের ‘অ্যাকশন’।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯ জুলাই দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের আয়োজন ও অংশগ্রহণে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সেখানে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। জানাজার মাঠে তাদের রাজনৈতিক স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। জানাজা শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কোতোয়ালী মোড় হয়ে নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছালে সেখানে দোস্ত বিল্ডিংয়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে থাকা কাঁচ ভেঙে যায়। এর আগে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় কোতোয়ালী থানাতেও। এরপর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায় মিছিলকারীরা।

ভাঙচুরের পর মিছিলটি নিউমার্কেট থেকে জুবিলি রোড হয়ে কাজীর দেউড়ি এলাকায় আসে। পথে কয়েক দফা ভাঙচুর চালানো হয় আশপাশের এলাকায়। ওরা সড়কে অগ্নিসংযোগ করে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশের সাথেও।
 
কাজীর দেউড়ি মোড়ে এসে সেখানে আগে থেকে দায়িত্বরত ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মিছিলকারীরা। একপর্যায়ে তাদের ধাওয়া দিয়ে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের কাছাকাছি নিয়ে যায় পুলিশ।
 
বারবার ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে একপর্যায়ে পেছনে থাকা সাঁজোয়া যান থেকে শর্ট রেঞ্জের টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে জামালখান ও বহদ্দারহাটের দিকে চলে যায়। তাদের একটি পক্ষ জামালখানে এসে সিনিয়রস ক্লাবের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: