Cvoice24.com

‘গণগ্রেপ্তার’ : নগর বিএনপির পর ডা. শাহাদাতের প্রতিবাদ

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
১৮:৫৩, ৩১ জুলাই ২০২৪
‘গণগ্রেপ্তার’ : নগর বিএনপির পর ডা. শাহাদাতের প্রতিবাদ

পুলিশ পুরোনো কায়দায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামকে একটি অবরুদ্ধ কারাগার বানিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। 

বুধবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় হতাহতের ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চট্টগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার, বাসায় বাসায় তল্লাশির নামে হয়রানি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন, গত ১৫ দিনে বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুধু নগরের থানাগুলোতে ২২টি মামলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে আসামি করেছে। গত ১৫ দিনে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বেড়েছে এক হাজার বন্দি। অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ ও দৈনিক পত্রিকার সচিত্র খবরে দেখা যায়, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর হামলা ও গুলি করেছে। 

শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রামবাসী সবাই জানে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর হামলার নির্দেশ সরকারই দিয়েছে এবং এর পর থেকেই দেশে গণহত্যা শুরু হয়। কিন্তু যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুলিবর্ষণকারী অস্ত্রধারী সেই চার যুবককে গ্রেপ্তার তো দূরের ব্যাপার, সহিংসতার কোনো মামলায় আসামিও করা হয়নি। অথচ এদের গুলিতেই চট্টগ্রামে ছয় জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আড়াল করতে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপকৌশল হিসেবে বিএনপির নির্দোষ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। 

তিনি বলেন, গত সোমবার নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনে জড়ো হলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এর মধ্যে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য কোতোয়ালী থানার এসআই মোশারফ হোসেনসহ আরো কয়েকজন। তবে পুলিশ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে, বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছে। অথচ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ভিডিও চিত্র ও গণমাধ্যম কর্মীরা দেখেছে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেডেই অপর পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্য আবু রায়হান বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই জানেন না, তিনি কিসে আহত হয়েছেন। মামলার সাক্ষী নাজিম উদ্দীনও গণমাধ্যমকে বলেছেন, ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু পুলিশ ঠিকই সেই পুরোনো কায়দায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আজকে পুরো চট্টগ্রামকে যেন একটি অবরুদ্ধ কারাগার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমি পুলিশ বাহিনীর এ ধরনের আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি। 

বিএনপি নেতা শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রাম নগরে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের থাকার জন্য গড়ে ওঠা ছাত্রী হোস্টেলগুলোতে পুলিশের লোকজন গিয়ে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ জারি করেছে। কোন সময় না দিয়ে দূরদূরান্তের ছাত্রীদের এভাবে হোস্টেল ছাড়তে বলা অমানবিক। যে সকল ছাত্রী এসব হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে নগরে তাদের কোন আত্মীয়স্বজন নেই। প্রশাসনের এই অনৈতিক নির্দেশনা প্রমাণ করে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। দুর্নীতিগ্রস্ত এই সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এতই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে যে বিভিন্ন ছাত্রী হোস্টেলে থাকা সাধারণ ছাত্রীদেরও ভয় পাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার মিথ্যা অভিযোগে ঢালাওভাবে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য দোষারোপ করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা যে ধরনের বক্তব্য রাখছেন তাতে মনে হচ্ছে, তারা সরকারী দলের কোন পদে অধিষ্ঠিত আছেন। আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী সরকারের এ ধরনের আগ্রাসী ও নির্মম ভূমিকার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা বার বার বলেছি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি জড়িত থাকতো, তাহলে তাদের ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়নি কেন? এটাই জনগণের প্রশ্ন। এতে প্রমাণিত হয় যে, বিএনপি কিংবা বিরোধীদলের কেউই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এইসব ঘটনার জন্য দায়ী চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, গণগ্রেপ্তার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তারকৃত বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সব নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি।

রাজনীতি সব খবর