Cvoice24.com

পোস্টার-ব্যানারের জঞ্জাল, বদল শুধু নাম-ছবি!

মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পোস্টার-ব্যানারের জঞ্জাল, বদল শুধু নাম-ছবি!

নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গণপূর্ত ভবনের সামনে বিশালাকার ব্যানার

‘আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সময়ে যেভাবে পোস্টার ছিল ঠিক একইভাবে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। শুধু ছবিগুলোর পরিবর্তন হয়েছে।’— চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক-অলিগলি ঢাকা পড়া ব্যানার-ফেস্টুন দেখে এমন মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরের লালদীঘিতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় ও সমাবেশ করেন ছাত্রআন্দোলনের অন্যতম এ নেতা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আন্দোলনকারীদের হাতে ব্যানার-ফেস্টুনমুক্ত হয়েছিল নগর। তবে এর কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের ব্যানারের জঞ্জাল ছড়িয়েছে গ্রাম-শহরজুড়ে।

এর আগে সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনাজুড়ে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যানার। ক্ষমতাছাড়া এ দলের পোস্টার ফেস্টুন এখন আর নেই। তবু নগরের অলিগলি-মোড়ে ছেয়ে গেছে পোস্টার ব্যানার ফেস্টুনে। পরিবর্তন হয়েছে শুধু নাম আর ছবির। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা এসব পোস্টার ফেস্টুন লাগিয়েছেন।

কোতোয়ালী থানার সামনে লাগানো দুটি ব্যানার।

নগরের জিইসি, ওয়াসা মোড়, টাইগারপাস, নিউমার্কেট, বহদ্দারহাট, নতুনব্রিজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশের খুঁটি, বিভিন্ন স্থাপনা, ফ্লাইওভারের পিলার, আর গাছের সঙ্গে বেঁধে হরেক রকমের। আকৃতি ছোট-বড় বিশালাকার। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় ও নগরের নেতাদের ছবি সম্বলিত এসব ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছেন। যদিও দলটির কেন্দ্রীয় ও নগরের দায়িত্বশীল কারো ব্যানার ফেস্টুন চোখে পড়েনি কোথাও। এসব ব্যানার কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের রাঙানো গ্রাফিতি দেয়ালও আড়াল করেছে।

জিইসি মোড় এলাকা...

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিমকে ফোন দিলেও তারা সাড়া দেননি। পরে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনিও সাড়া দেননি। তবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ফোন রিসিভ করলেও বক্তব্যের বিষয় শুনে ‘পরে কল করবেন’ জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ব্যানার ফেস্টুন শোভাযাত্রায় কেন্দ্রের মানা

ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে একটানা চেষ্টা করেও চট্টগ্রাম নগর বিএনপি ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা চার শীর্ষ নেতা মুখ খুলেন নি। তবে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ব্যানার পোস্টার ও শোভাযাত্রার লাগাম টানতে এ বিষয়ে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর। জনদুর্ভোগ ও দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে ওই চিঠিতে বলা ব্যানার পোস্টার ফেস্টুনের বিষয়ে বলা হয়,  

“ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রং-বেরঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করছেন। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ, অনভিপ্রেত এবং দলের শৃঙ্খলাপরিপন্থি।

“দলের অতি উৎসাহী কতিপয় নেতা নিজেদের ছবি সংবলিত পোস্টার প্রকাশ করছেন এবং ফেস্টুন ও ব্যানার ঝুলিয়ে রাখছেন। এহেন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করা থেকে নেতাকর্মীদের বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।”

এছাড়া শোভাযাত্রা জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাংগঠনিক সফরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা পরিহার করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

কী বলেন সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা…

ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে নেতাদের সাথে কর্মী সমর্থকদের ছবি দিয়েই চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে উঠে মন্তব্য করে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্য কলামিস্ট মুহাম্মদ মুসা খান বলছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতির অপসংস্কৃতি হলো— ‘ব্যানার-পোস্টারের রাজনীতি’। এই ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে নেতাদের সাথে কর্মী-সমর্থকদের ছবি দিয়েই উত্থান হয় কিশোর গ্যাং আর চাঁদাবাজদের। নির্বাচনের সময় ভোট ডাকাতি করে এসব ইয়ং গ্যাং এর সদস্যরা। বিএনপির ব্যানার-পোস্টার সেই পুরানো কালচার ফিরে আসার ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজন রাজনীতিতে সুন্দর পরিবেশ।’

‘এখন হয়তো অতিউৎসাহী কিছু বিএনপির নেতাকর্মী অপসংস্কৃতি ফিরে আনতে চাচ্ছেন। সরকার উৎসাহ না দিলে বা টাকাপয়সা না পেলে তাদের এই কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে।’- বলে মত তাঁর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে দেশ সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত হবে এমন প্রত্যাশাও করেন রাজনীতি বিশ্লেষক মুহাম্মদ মুসা খান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘রুটস অ্যান্ড হাইওয়ে সড়কের ওপরে যে ফুটওভার ব্রিজ থাকে; এগুলোতে যে দূরত্ব চার্ট অর্থাৎ কোন জায়গা থেকে কোন জায়গা কতটুকু দূরত্ব। ব্যানারের কারণে সেগুলো কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এখন তো আগের চেয়ে আরো বেড়েছে। তারা (বিএনপি) তো এখন নতুন। তাই ব্যানার পোস্টার বেশি দিচ্ছে। তবে ব্যানার তো সহনীয় হয়ে গেছে; আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।’

‘তবে জনগণের প্রশ্ন এখন সরকারে কারা আছে! এই যে দুদিনের মধ্যে এত প্রমোশন, বঞ্চিত বলে দিয়ে দেওয়া। এগুলো জনগুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যাপার! এটা দুদিন পরে সিস্টেমেটিক্যালি করলে কি সমস্যা হতো’ —যোগ করেন তিনি।

অ্যাডভোকেট আখতার কবির আরো বলেন, ‘এটা হচ্ছে সুবিধাভোগীরা সবসময় নেয়। আর এটা সুযোগ পেয়েছে। মামলা থেকে শুরু করে দেশে এখনো সাধারণ জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক কোনো খবর নেই। জনগণ প্রত্যাশা পূরণের কিছুই পাচ্ছে না। শুধু দখলদারিত্ব পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমরা চাই ভালো কিছু হোক।’ 

শিগগির অপসারণ, বলছে চসিক

চট্টগ্রাম নগরের যেখানে যেখানে পোস্টার ফেস্টুন ব্যানারে ছেয়ে গেছে সব শিগগির অপসারণের কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী।

সিভয়েস২৪’কে তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে ব্যানার-পোস্টার লাগানো আছে সেগুলো অপসারণ করা হবে। তবে ব্যানার-পোস্টার লাগানোর বিষয়ে চসিকের একটি নিয়ম আছে। যদি সেই নিয়ম মেনে এসব ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়; তাহলে স্বাভাবিক সময় পর্যন্ত রাখা যাবে। এরপরই অপসারণ করা হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: