একই মামলার ‘পার্টনার’ জাবেদ-ওয়াসিকা
আনোয়ারা প্রতিনিধি
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান— রাজনীতির মাঠে দুজন দু-মেরুতে। নিজ এলাকায় ‘কর্তৃত্ব’ নিয়ে ছিল মুখোমুখি অবস্থান। বিভেদ থাকলেও একই মামলার ‘পার্টনার’ হতে হয়েছে দুজনকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মামলায় একসঙ্গে আসামি হলেন তারা।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে জাবেদ-ওয়াসিকাসহ দুই গ্রুপের ২৬২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় মামলা হয়েছে। বিএনপি কর্মী তৌহিদ মিয়া (৩৪) বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছোট ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি, জাবেদের পিএস রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম, জেলা পরিষদের সদস্য এস এম আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মান্নান মান্না।
উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে, নোয়াব আলী, এম কাইয়ুম শাহ্, আমিন শরীফ, শামসুল ইসলাম, হাছনাইন জলিল চৌধুরী শাকিল, অসিম কুমার দেব, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, আজিজুল হক বাবুল, কলিম উদ্দিন, মাস্টার ইদ্রীচ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে, ইয়াসিন হিরু, শাহাদাত হোসেন, আবু ছৈয়দ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাফর উদ্দিন চৌধুরী (ভিপি জাফর), সুগ্রীব মজুমদার দোলন, বুরহান উদ্দিন চৌধুরী মুরাদ, জসিম উদ্দিন, আবদুল মালেক, সাহাব উদ্দিন, হাফেজ কাসেম, আলী আব্বাস (ডুমুরিয়া)। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শওকত ওসমান, যুগ্ম আহ্বায়ক অনুপম চক্রবর্তী বাবু, মোজাম্মেল হক (গাছ মোজাম্মেল), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুর রহমান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম (কলেজ নজরুল), সাইফুদ্দিন দস্তগীর (বৈরাগ), মাঈন উদ্দিন খোকন (বারশত), জসিম উদ্দিন (জুঁইদণ্ডি), জাহাঙ্গীর (বারখাইন), আবু হানিফ (বটতলী), উৎফল সেন (সদর) সহ এজহার নামীয় ১১২ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫০০/৬০০ শতাধিক নেতাকর্মী পিএবি সড়কের কালাবিবির দিঘির মোড়ে সমাবেশের জন্য সমবেত হলে বিকেল ৫টার দিকে এজহারনামীয় আসামিরা দেশী ও বিদেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, কিরিচ, লোহার রড এবং লাঠি সোডা নিয়ে সমাবেশে সমবেত বিএনপির নিরস্ত্র নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে। হামলায় ১৮-২০ জন বিএনপি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এসময় বাদী তৌহিদ মিয়া এবং নয়ন নামের বিএনপি কর্মীকে মোহাম্মদপুর পাহাড়ের টিলা নিয়ে যায় আসামিরা। পরবর্তীতে পুলিশের হস্তক্ষেপে উদ্ধার হয়ে ২মাস চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরে তারা।
এ বিষয়ে মামলার বাদী তৌহিদ মিয়া বলেন, এতোবছর স্বৈরাচার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকায় এবং ঘটনার পরবর্তী সরকার দলীয় লোকজনের নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে পালিয়ে থাকায় পরবর্তীতে যথাসময়ে এজাহার দায়ের করতে পারিনি। এখন দলীয় নেতাকর্মী এবং পরিবারের লোকজনের সাথে আলোচনা করে এবিষয়ে উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছি।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক অর্থ-প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের উপর সহিংসতার মামলা হয়েছে।