Cvoice24.com

‘আওয়ামী লীগ উঁকিঝুঁকি মারছে, সজাগ থাকতে হবে’
এখন নতুন বয়ান সংস্কার, জনগণের ভোট নিয়ে কথা নেই : আমীর খসরু

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ৯ নভেম্বর ২০২৪
এখন নতুন বয়ান সংস্কার, জনগণের ভোট নিয়ে কথা নেই : আমীর খসরু

শেখ মুজিবুর রহমান বয়ান দিয়ে কিছুদিন স্বৈরাচারী রাষ্ট্র চালিয়েছেন। পরবর্তীতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরেক বয়ান দিয়েছেন। আর দেশে এখন নতুন করে ‘সংস্কারের বয়ান’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে তা এ বয়ানের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে সেই বয়ান নেই। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেই বয়ান নেই। বয়ান হচ্ছে, সংস্কারের বয়ান।’

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঐতিহাসিক ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যৌথ আয়োজনে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার আগে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির আগে সংস্কার কি ‘আপনারা’ দিয়েছেন প্রশ্ন করে খসরু বলেন, ‘৬ বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া সংস্কারের কথা বলেছিলেন। আমরা জনগণের কথা বুঝেছি বলে আমরা দিয়েছি। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা সবাই একটি নতুন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওই সংস্কারে সবকিছু আছে। কিছু বাকি নেই। আপনারা যা বলেছেন, তাও আছে; তার বাইরে আছে। সংস্কারে আপনাদের চেয়ে আরো বেশি আছে।’

জনগণের সমর্থন ছাড়া কিছু টিকে থাকে না উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বয়ান দিয়ে কিছুদিন ষ্বৈরাচারী রাষ্ট্র চালিয়েছে। ওই বয়ানে ছিল, বাংলাদেশকে এখন এক... না করলে দেশটা চলবে না, থাকবে না। এই বয়ান দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান দেশ চালিয়েছিল। সেটা থাকে নাই। জনগণের সমর্থন ছাড়া কিছু টিকে থাকে না। পরবর্তীতে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ আরেক বয়ান দিয়েছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাকে আমরা পরাজিত করে পাঠিয়ে দিয়েছি’।

জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা। 

যে সংস্কারে ঐক্যমত হবে না সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নিবে, সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এ কারণেই ঐক্য ঘটানো হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ উঁকিঝুঁকি মারছে, ফ্যাসিস্টরা উঁকিঝুঁকি মারছে, এই ঐক্য ভাঙা যাবে না— উল্লেখ করে খসরু আরো বলেন, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাদের আমরা সমর্থন দিব, তাদের আমরা শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিব। আমরা এ সরকারকে যখন আসা মাত্রই সমর্থন দিয়েছি, এ সরকারকে আমরা এখনো সমর্থন দিচ্ছি। আমরা চাই এ সরকার গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। তার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করবো। আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। তারেক রহমান যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা অটুট থাকতে হবে। ঐক্য অটুট রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচনের দিকে যেতে, নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।’

শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। যদি পটভূমি, সেই অবস্থা সৃষ্টি না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না। এখন অনেক গল্প শুনছি, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে।’ 

‘১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, জেলে গিয়েছি বারবার; তখন তো তোমাদের এসব গল্প দেখিনি। তোমাদের ছিল কেউ, আমাদের সঙ্গে তো তখন কেউ আসেনি।— মন্তব্য করেন আমীর খসরু।

সব হিসাব করলে অসুবিধা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেই আন্দোলনকে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে। দেশ একটা গণতন্ত্রের অবস্থা ফিরিয়ে আনুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিতাহীন কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।’

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না, জনগণের কষ্ট বুঝবে না। কারণ বুঝতে হলে জনগণের কাছ যেতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে। বিদ্যুতের বিল দিতে পারছে না, সেটা বুঝতে হবে; দুবেলা খেতে পারছে না সেটা বুঝতে হবে।’

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: