চবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সভা, ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো অংশ নেয়নি
চবি প্রতিনিধি, সিভয়েস২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত 'জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ' পালনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মধ্যকার এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ কনফারেন্স রুমে ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, স্টুডেন্ট'স এল্যায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা ও অধিকার রক্ষা পরিষদ অংশ নেয়। প্রত্যেক সংগঠনের প্রতিনিধি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে তাদের অবস্থান, সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তবে সভায় অনুপস্থিত ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘কে কতোবড় সংগঠন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কে কতটুকু শিক্ষার্থীদের পক্ষে রয়েছে। অনেকে বলছেন জুলাই আন্দোলনে আমরা ছাত্র সংগঠনের অবদান অস্বীকার করছি। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি না। কখনো আমরা এবং ব্যাক্তিগতভাবে আমি কারো অবদান অস্বীকার করিনি। আমি মনে করি ছাত্র সংগঠনগুলো পেছনে ছিলো বলেই আজকে আমরা সামনে আসতে পেরেছি। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি।’
ইসলামি ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মুহাম্মাদ ইব্রাহীম বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এখনো মাঠে থাকতে হচ্ছে। আইনের শিথিলতার অভাবে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যা, প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের উপর এসে পড়ছে। অথচ তাদের এখন রাষ্ট্র গঠনে সভা-সেমিনার এবং সিম্পোজিয়াম করার কথা। সংস্কার প্রক্রিয়া কিভাবে হওয়া উচিত তা দেখানোর কথা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রশাসনের কাজ কি? প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব পলিসি মেকারদের। কিন্তু তারা যদি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পেছনে অন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে ভুল করবে। দেখা যাবে শিক্ষার্থীরা তাদের থেকেল মুখ ফিরিয়ে নিবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়রুল হাসান আরিফ বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির দুটি কনসার্ন৷ একটি হচ্ছে জুলাই গণহত্যার বিচার। আমরা দেখছি জুলাইয়ের বিচার সঠিকভাবে হচ্ছে না। আবার আমরা মবেরও পক্ষে না। আমরা আইনের মাধ্যমে এমনভাবে বিচার করতে চাই যাতে কখনো কেউ বলতে না পারে ক্যাঙারু কোর্টের মাধ্যমে খুনিদের বিচার হয়েছে।’
ইসলামী ছাত্র মজলিস চবি শাখার সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি বলেন, ‘আফসোস হচ্ছে মুখে আমরা ঐক্য এবং সংহতির কথা বলি। কিন্তু আজকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে সংহতি সভায় অনেক ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন উপস্থিত নেই। সংহতি কি শুধুই ব্যানারে দেখানোর জন্য?’
ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো: রোমান রহমান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদলের একটা বড় অবদান ছিলো। কিন্তু আজকে ছাত্রদল উপস্থিত নেই যেটা হতাশজনক। আমরা সকলে দলের মধ্যে যদি ঐক্য ধরে রাখতে না পারি তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সকলের মধ্যে ঐক্য চায়, বিভেদ নয়।’
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আমাদের ছাত্র সংহতি শুধুই এক সপ্তাহের জন্য হওয়া উচিত না। এটা যতদিন পর্যন্ত একটা স্ট্যাবল সরকার আসবে ততদিন থাকা উচিত। কারণ ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। কখনো তারা রিক্সাচালক লীগ, কখনো ইসকন লীগ, কখনো সাকিব লীগ হয়ে ফেরত আসবে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে ২৫ নভেম্বর এক সপ্তাহব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।