Cvoice24.com

চট্টগ্রামে নেতাকর্মীদের কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্ব
ক্ষমতায় গেলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনব : তারেক রহমান

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
ক্ষমতায় গেলে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনব : তারেক রহমান

ক্ষমতায় আসলে অবৈধভাবে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা’ নিয়ে নেতাকর্মীদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদুল উল্লাহ বলেন— ‘গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দেশের যে টাকাগুলো বিদেশে পাচার হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এগুলো আনার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’  

এ প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে আমাদের দেশের ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যেই তা আবিস্কার করতে পেরেছে। এর মানে ভেতরে আরো অনেক কিছু আছে। যদি ভেতরে আরো গভীরভাবে...তাহলে দেখা যাবে দেশের কয়েক বছরের বাজেটের টাকার সমান চলে গেছে। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একটা সামঞ্জ্যের মাধ্যমে দেশের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোকাল ফোরামের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করেছে। আমরা দেখবো, অবজারভ করবো, তারা সেটা কতটুকু করতে পারেন। যদি পারেন তাহলে ভালো, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাবো। আর কি পারেন সেটা দেখে জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দেন; তাহলে বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বন্দোবস্ত করেই ছাড়বো।’

এর সঙ্গে যোগ করে তারেক রহমান আরো বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতা নিব। তবে এর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রাইভেট সংস্থাগুলো আছে; তাদের সাথে আমরা কথা বলবো। আমাদের দেশের সম্পদ (পাচার হওয়া টাকা) দেশের মানুষের সম্পদ যে এনে দিতে পারবে; আমরা তার সাথেই কথা বলবো-বসবো।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুপারিশ বিএনপি গ্রহণ করবে কিনা—

খাগড়াছড়ি জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার জানতে চান— বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার প্রথমেই ছিল ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা।’ তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিটি করেছে। সেই কমিটির সুপারিশ যদি বিএনপির সঙ্গে কনফ্লিক্ট (সাংঘর্ষিক) হয় সেই ক্ষেত্রে কি করা হবে? বা তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যে সুপারিশ; সেটা বিএনপি গ্রহণ করবে কিনা! করলেও কতটুকু করবে?

এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশ এবং দেশের মানুষের জন্যই আমরা (বিএনপি) ৩১ দফা দিয়েছি। প্রথমে যখন শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে ছিল তখন ২৭ দফা; পরবর্তীতে যে দলগুলো ছিল সবার সঙ্গে আলোচনা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে। তাই মনে করি না, এর বাইরে কোনো কিছু আছে। এরপরও যদি বেটার  কোনো দফা আসে; কোনো একটা দফার ক্ষেত্রে বেটার কোনো কিছু ঘটে এবং যেটি জনগণের ইচ্ছার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, দেশের স্বার্থে সামঞ্জস্যপূর্ণ আমরা অবশ্যই সেটিকে গ্রহণ করবো।’

তাঁতশিল্প ফের চাঙ্গা হবে

ফেনী জেলা তাঁতীদলের আহ্বায়ক সরোয়ার জাহান শ্রাবণ জানতে চান— ‘বাংলাদেশের তাঁত শিল্প ফেনী অঞ্চলে নেই, আগামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিএনপি এলে তাঁত শিল্পের জন্য পদক্ষেপ নিবে কিনা?
 
তারেক রহমান বলেছেন, ‘তাঁত শিল্প শুধু শিল্প নয়; এটি আমাদের ঐতিহ্য। তাঁত শিল্পের সঙ্গে বহু মানুষ জড়িত; তাদের পরিবারের জীবিকা আছে। তাঁত শিল্পের বিষয়ে যেটা হয়েছে— সুতার দাম বেড়েছে, কেমিক্যালের দাম বেড়েছে, কিন্তু সেভাবে পণ্যের দাম বাড়েনি। আরেকটা সমস্যা আছে— মানুষের রুচির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে। কাপড়ের মিক্সড রয়েছে। আমরা যেটা উদ্যোগ গ্রহণ করবো— বিভিন্ন উপায় বের করে সুতার দামগুলো কমানোর চেষ্টা করা হবে। একইভাবে কেমিক্যালের দাম কমানোর চেষ্টা করা হবে এবং একইসময়ে যাঁরা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের জন্য ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করতে পারে। আর এ ডিজাইনের মাধ্যমে মার্কেটে তাদের পণ্য বৃদ্ধি করতে সুবিধা হবে। এ পরিকল্পনাগুলো মাথায় রয়েছে। একইসঙ্গে তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংকিং সহযোগিতাও দরকার। তাই চেষ্টা করবো সেই সহযোগিতা করার। যেহেতু তাঁত শিল্প আমাদের ঐতিহ্য; তাই চেষ্টা থাকবে কিভাবে আমাদের এ ঐতিহ্যকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়।’

সন্দ্বীপ-হাতিয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রকল্পটি পুনরায় আরম্ভ হবে

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাবস্থায় উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি প্রকল্প ছিল। কিন্তু ফ্যাসিবাদি সরকার সেই প্রকল্পটি বাতিল করেছে। আবার যদি বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপ-হাতিয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য এ প্রকল্পটি পুনরায় আরম্ভ হবে কিনা— জানতে চেয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন।

তাঁর এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘যে কাজটি (প্রকল্প) করলে জনগণ উপকৃত হবে। সেই কাজটি যদি তারা বন্ধ করে থাকে তাহলে সেই কাজটি ইনশাআল্লাহ আমরা শুরু করে দিব।’

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু।

আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহসভাপতি নেওয়াজ হালিমা আরলি, গণশিক্ষা বিষয়ক সহসম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন ও ব্যারিস্টার আবু সায়েম, বিএনপির তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদা হাবিবা, বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

সিভয়েস২৪/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: