মেয়রে ‘থিতু’ শাহাদাত, বক্করের ‘বসতি’ কই
মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪
![মেয়রে ‘থিতু’ শাহাদাত, বক্করের ‘বসতি’ কই মেয়রে ‘থিতু’ শাহাদাত, বক্করের ‘বসতি’ কই](https://www.cvoice24.com/media/imgAll/2022September/sahadat-Bokkor-2501091054.jpg)
টানা ৮ বছর চট্টগ্রাম নগর বিএনপির রথ টেনে নিয়েছিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন-আবুল হাশেম বক্কর। শাহাদাত এখন দলের দায়িত্বশীল কোনো পদে না থাকলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের আসনে থিতু হয়েছেন। কিন্তু তাঁর ‘সারথি’ বক্করের এখনো কোনো ‘গতি’ হয়নি।
কমিটি বিলুপ্তের পর তাঁকে কেন্দ্রে ফেরানোর গুঞ্জন উঠলেও শেষমেশ তা হয়নি। দলীয় কোনো পদপদবি ‘টার্গেটে’ না থাকলেও আপাতত চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া-চকবাজার) আসন ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন নগর বিএনপির একসময়ের এই কাণ্ডারি। তবে সম্প্রতি পদভার নিতে নেতাকর্মীদের দাবি জোরালো হচ্ছে।
গত ১৩ জুন ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বাধীন ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। শাহাদাত-বক্করের হাতে ফের দায়িত্ব যাওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। শাহাদাত-বক্কর ‘ছিটকে’ গেলে তাদের স্থলে ৭ জুলাই নতুন দায়িত্ব পান বিলুপ্ত কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাজিমুর রহমান।
নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের দমনপীড়নের মধ্যে শাহাদাত-বক্কর দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন টানা ৮ বছর। মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হলেও ‘সুসময়ে’ এসে দলীয় কোন্দলের ‘বলি’ হতে হয়েছে তাদের। ‘সান্ত্বনা’ দিতে ৫১ জনের কমিটিতে তাদের সদস্য হিসেবে রেখে উল্টো ‘অবমূল্যায়ন’ করা হয়েছে।
তবে সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের ঘনিষ্টজনরা বলছেন, দলের জন্যই রাজনীতি করেন তিনি। পদপদরির লোভে মুখিয়ে থাকার লোক নন। যখন যে অবস্থাতেই থাকেন না কেন, দলীয় কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন আমৃত্যু।
ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির মাধ্যমে তৃণমূল থেকে উঠে আসা আবুল হাশেম বক্কর কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং পরবর্তীতে সফলতার সাথে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বক্করের এক অনুসারী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বিলুপ্ত নগর বিএনপির কমিটিকে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে সবাইকে। দলের সুসমেয় এসে মূল্যায়ন না হওয়া তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্য হতাশাজনক।’
এসব প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর কথা বলতে রাজি হননি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সিভয়েস২৪’কে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করছি দলের জন্য। পদের জন্য মুখিয়ে থাকার লোক আমি নই। যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাব। হাইকমান্ড থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী কাজ করবো।’
চট্টগ্রাম-৯ আসনে ‘নজর’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণমানুষের দল। গণমানুষের কাছে থাকতেই পছন্দ করি। আমার ইচ্ছে আছে। দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, তাহলে আমাকে সেখানে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিবেন। তবে সেই সুযোগ না পেলেও দলের জন্য, প্রার্থীর জন্য জানপ্রাণ উজাড় করে কাজ করব।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাপতনে গত ১৭ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত করে সংশোধনী গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন।
অন্যদিকে আবুল হাশেম বক্করকে নগর বিএনপির সদস্য সচিব থেকে ‘সরিয়ে’ সদস্য করা হলেও তিনি চুপসে যাননি। উল্টো দ্বিগুণগতিতে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রাম-৯ আসন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই দলের ব্যানারে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন।