Cvoice24.com

পাহাড়ে জুমচাষ: কম বৃষ্টিপাতে রাঙামাটিতে এবার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয়

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
পাহাড়ে জুমচাষ: কম বৃষ্টিপাতে রাঙামাটিতে এবার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয়

বাতাসে পাহাড়ের ঢালে ঢালে দোল খাচ্ছে জুমের সবুজ কচি চারা

পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ। এটি একসাথে একাধিক ফসল চাষপদ্ধতি। যা পাহাড়ের ঢালে ঢালে জমি তৈরি করে চাষ করা হয়। এবারও রাঙামাটিতে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে হয়েছে জুম চাষ। কিন্তু বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের।  

এপ্রিল-মে মাসে পাহাড়ি ঢালু জমির জঙ্গল পরিষ্কারের পর আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হয় জুম চাষের জমি। জমি তৈরির পর একসাথে একই গর্তে রোপণ করা হয় ধানসহ নানা জাতের ফসলের বীজ।

জুম হলো একধরণের মিশ্র চাষপদ্ধতি। যেখানে একসাথে চাষ করা হয় ধান, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, চিন্নাল (বাঙ্গির মত এটা একজাতীয় ফল, তবে ছোট ও গোল), পাহাড়ি শিম, হলুদসহ প্রায় পনেরটির বেশি জাতের ফসলের বীজ। বীজ থেকে উৎপাদিত এসব ফসল পর্যায় ক্রমে উত্তোলন করা হয়। পাহাড়ের ঢালে চাষ হয় বিধায় এখানে সেচের নেই কোন সুযোগ। বৃষ্টিই উপরই নির্ভর করতে হয় জুম চাষীদের।

বর্তমানে পাহাড়ের ঢালে ঢালে দোল খাচ্ছে জুমের সবুজ কচি চারা। যেখানে রয়েছে পেঁপে, চিন্নাল, পাহাড়ি শিম, হলুদ, ধানসহ বাহারি রকমের ফসল। অক্টোবরের মাঝামাঝি হতে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কাটা হবে এসব  ফসল। তবে পূর্বের তুলনায় এখন জুম ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় হতাশার সুর এসব জুমচাষীদের কণ্ঠে।

জুমচাষী কল্পরত্ন চাকমা জানান, বৈশাখ মাসে আমরা জুম পুড়ে জমি তৈরি করে একসাথে একই গর্তে আদা, হলুদ, ধান, বেগুন, মিষ্টিকুমরা সহ নানা জাতের বীজ রোপন করি। যা আস্তে আস্তে বড় হয়। পরে পর্যায়ক্রমে ফসল উত্তোলন করি। ধান উত্তোলন করি অক্টোবর নভেম্বর মাসে।

নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অবশিষ্ট শাকসবজি বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছেন জুমচাষীরা

তার সহধর্মিণী রুপালি চাকমা জানান, পাহাড়ের ঢালু জমিতে আমরা জুম চাষ করি। জঙ্গল পরিষ্কার করে তা পুড়িয়ে জমি তৈরি করতে হয়। যা অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। ঐতিহ্যকাল ধরে চলে আসছে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ। যার কারণে আমরা করে থাকি। তবে কষ্টের তুলনায় তেমন লাভ হয় না।

এবছর যথাসময়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে সংশয়ের কথা জানালেন রাঙামাটি কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল।

তিনি বলেন, জুমকে আমরা ফুড ব্যাংক বলে থাকি। সেখানে দশ থেকে পনের জাতের ফসলের বীজ একসাথে চাষ করা হয়। যা থেকে পর্যায় ক্রমে ফসল উত্তোলন করা হয়। আগে কৃষকরা জুমে সার ব্যবহার করতো না। এখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে তারা সারের ব্যবহার শুরু করেছে। যার কারণে ফসল উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। জুমে বাহারি জাতের ধানের চাষ হয়।

এবছর জেলায় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে জুমচাষ করা হয়েছে। নয় হাজার পাঁচশত মে. টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি আমরা। কিন্তু জুমচাষটা বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় এবছর কম বৃষ্টিপাতে ফলন কিছুটা কম হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়