Cvoice24.com

শান্তি চুক্তির ২৫ বছর: পাহাড়ের অর্থনীতিতে আশার আলো

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২ ডিসেম্বর ২০২২
শান্তি চুক্তির ২৫ বছর: পাহাড়ের অর্থনীতিতে আশার আলো

শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। ফাইল ছবি

আজ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি। দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে ১৯৯৭ সালের এদিনে সরকারের কাছে সন্তু লারমা’র নেতৃত্বে অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তি বাহিনী। শুরু হয় পাহাড়ে ব্যাপক আকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। রাঙামাটিতে স্থবিরতা কাটিয়ে ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য, সচল হয় অর্থনৈতিক চাকা।

১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে হানাহানিতে অর্থনীতিতে তেমন একটা উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল না প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর রাঙামাটিতে। সুবিশাল হ্রদকে কাজে লাগিয়ে মৎস্য উৎপাদন, পর্যটন ও বনজ সম্পদ আহরণের যে পরিকল্পনা সে পরিকল্পনা কাজে আসেনি পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিবেশের জন্য। কিন্তু এক চুক্তিতেই আমুল পরিবর্তন আসে রাঙামাটির অর্থনীতিতে।

চুক্তি পরবর্তী সময়ে শান্তি বাহিনীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর পাহাড়ের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানান উদ্যোগের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় কর্মসংস্থান। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ ও নিরাপত্তা শঙ্কা দূর হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি আসে।

চুক্তির পর পাহাড়ে কোণায় কোণায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে নামে সরকার ও সাধারণ মানুষ। হ্রদে মাছের উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েকগুণ, পাশাপাশি পাহাড় ও হ্রদের সৌন্দর্য কাজে লাগিয়ে পর্যটন সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিরাপত্তার শঙ্কা না থাকায় দেশ-বিদেশের পর্যটকরা রাঙামাটি ভ্রমণ করতে পারছেন। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা সাজেক পর্যটকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। স্বস্তি ফিরে আসায় পাহাড়ে বৃদ্ধি পায় বাগান সৃজন, পশু পালন, মৎস্য শিকারের মাধ্যমে মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। চুক্তির ফলে রাঙামাটির অর্থনৈতির চাকা গতিশীল হওয়ায় সন্তুষ্ট ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া জানান, শান্তি চুক্তির আগে আমরা মৎস্য আহরণে উপজেলাগুলোতে যেতে পারতাম না। আর তো মৎস্য আহরণে প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু শান্তি চুক্তির পর আমরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মৎস্য আহরণ করতে পারছি। এতে স্থানীয় জেলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের জীবন জীবিকার মান উন্নত হয়েছে।

হোটেল স্কয়ার পার্কের সত্ত্বাধিকারী নিয়াজ আহম্মেদ জানান, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের দোয়ার খুলেছে রাঙামাটিতে। এখানে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসে ভ্রমণে। যার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে।

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স প্রেসিডেন্ট আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শান্তি চুক্তির আগে রাঙামাটিতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলতো খুবই কম। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর থেকে সে ব্যবসায়িক কার্যক্রম দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। মানুষের আত্মসামাজিক মান বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক তপন কুমার দে জানান, চুক্তির কারণে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। এই চুক্তির আগে এখানকার মানুষ উন্নত ও পরিকল্পিত কৃষি সম্পর্কে জানতো না। কিন্তু চুক্তির পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দুর্গম পাহাড়ে কৃষির সম্ভাবনা পৌঁছে দিতে পেরেছে। আবার এখানকার সাধারণ মানুষও সে সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে ফলজ ও কৃষিজ ফসল উদপাদন করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে জাতীয় উৎপাদনে ভূর্মিকা রাখছে।

সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার জানান, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তার মাধ্যমে রাঙামাটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকার শান্তি চুক্তি করেছিল এবং শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও মানুষের জীবন মান উন্নত করার জন্য কাজ করছে। শান্তি চুক্তির ফলে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য রাস্তাঘাট, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য সমতল এলাকার মানুষের মত পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের সকল অধিবাসীদের পক্ষে চুক্তি সম্পাদনকারী জনসংহতি সমিতি বার বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার জানান, চুক্তির পর এখানে যে একেবারেই উন্নয়ন হয়নি তা বলা যাবে না। উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু তা যান্ত্রিক। চুক্তিতে বলা রয়েছে আঞ্চলিক পরিষদের কাছে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো ন্যাস্ত থাকবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো কখন কি কাজ করছে তা আঞ্চলিক পরিষদকে জানানো হচ্ছে না। যার কারণে সূষম উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যতটুকু উন্নয়ন মানুষ ভোগ করার কথা তা ভোগ করতে পারছে না। চুক্তি সকল ধারা বাস্তবায়িত হলে মানুষ সূষম উন্নয়নের ফল মানুষ ভোগ করতে পারবে বলে তিনি জানান।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়