Cvoice24.com

রাঙামাটিতে তরমুজের আগাম ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ১১ মার্চ ২০২৩
রাঙামাটিতে তরমুজের আগাম ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

দুর্গম এলাকা থেকে নৌকাযোগে বিক্রির জন্য রাঙামাটি সদরে আসছে তরমুজ

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই হ্রদের তীরে চাষ হওয়া তরমুজের আগাম বাম্পার ফলন হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছে চাষিরা এবং আগাম ফলনে কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে খুশি তারা। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার তরমুজের উৎপাদন ভালো হয়েছে।

জেলার কাপ্তাই হ্রদের তীরে জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বিলাইছড়ি, নানিয়াচর, বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, সদর উপজেলায় ও কাউখালি উপজেলার কিছু কিছু স্থানে তরমুজের চাষ হয়ে থাকে। তবে জেলার সবচেয়ে বেশি তরমুজের চাষ হয় জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু উপজেলায়। অক্টোবর মাস থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে থাকে। আর তখন থেকেই হ্রদের তীরে জলে ভাসা জমিতে চাষ শুরু হয় তরমুজের। আর মৌসুমের ফল বাজারে আসতে শুরু করে এপ্রিল মাস থেকে। রসালো মিষ্টি স্বাদের এই ফল উন্নত জাতের কারণে আগাম ফলন শুরু হয়েছে পার্বত্য জেলাটিতে। যার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত চাহিদার চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিনই নৌ পথে শহরের ট্রাক স্টেশন, সমতাঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে আসে তরমুজ। সেখান থেকেই ট্রাকে করে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাইকারি ব্যবসায়ীর হাত ধরে চলে যায় এই রসালো ফলটি। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের প্রতিটি তরমুজ চাষিরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে দেড়শত থেকে দুইশত টাকায়। আর জেলা শহরের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে আড়াইশত থেকে তিনশত টাকায়।

লংগদু উপজেলার কাট্টলিবিলের মিনাবাজার ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তরমুজের আগাম ফলন বিক্রি শুরু করেছে। আর পাইকাররা সেখান থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে তা বোট যোগে জেলা শহরে এনে তা ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করে চট্টগ্রাম পাইকারি আড়তে নিয়ে যাচ্ছে। তরমুজের আগাম ফলনে দাম ভালো পেয়ে খুশি চাষিরা। তবে কিছু চাষির বীজ ভালো না পড়ায় হতাশাও রয়েছে তাদের মধ্যে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী জলে ভাসা জমিতে বেশির ভাগ তরমুজের চাষ হয়েছে। এ বছর জেলায় ২শত হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭হাজার ২শত মেট্রিকটন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছয়ত্রিশ মেট্রিকটন। মিঠাপানির কারণে কাপ্তাই হ্রদের তীরে তরমুজের উৎপাদন ভালো হয়। চাষীরা এখন তরমুজের আগাম ফলন তুলতে শুরু করেছে।

লংগদু উপজেলার কাট্টলীবিলে জলে ভাসা জমিতে তরমুজ চাষ করা রহিম উদ্দিন জানান, এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আর তরমুজের আগাম ফলন হওয়ায় দামও বেশ ভালো পাচ্ছি। তবে কিছু কিছু তরমুজের বীজ ভালো না পড়ায় আমাদের অনেক জমিতে ভালো ফলন হয়নি। যদি শতভাগ বীজ ভালো পড়তো তাহলে তরমুজের ফলন আরো বাড়তো।

জুরাছড়ি উপজেলার কৃষক রতন চাকমা জানান, আমাদের এখানের তরমুজ সুস্বাদু হয়। এই বছর আগাম এবং ভালো ফলনের কারণে তরমুজের দাম ভালো পাচ্ছি। আবহওয়া অনুকুলে থাকায় তরমুজ খুব দ্রুত বড় হয়েছে। দুই থেকে আড়াইকেজি ওজনের প্রতিটি তরমুজ দেড়শত থেকে দুইশত টাকায় বিক্রয় করছি।

পাইকারি ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, আমি চট্টগ্রাম পাইকারি আড়তে নিয়ে যাব তরমুজগুলো। মৌসুমের আগাম ফলন হওয়ায় এখন বেশ ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে সেখানে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপ্রু মারমা জানান, এ বছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। এখন আমরা যেটা বাজারে পাচ্ছি সেটা তরমুজের আগাম ফলন। মূল মৌসুমের ফলনটা বাজারে আসবে এপ্রিল মাস থেকে। এ কারণে আগাম ফলনে চাষীরা ভালো দাম পাচ্ছে। এই বছর জেলায় দুইশত হেক্টর জমিতে তরমুজের ফলন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭হাজার ২শত মেট্রিকটন। আশাকরি এই বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্জিত হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়