সবুজ পাহাড়ে সোনালী রঙ
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই
ছবি-সা থোয়াই উ মারমা
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠির ঐতিহ্যবাহী চাষ পদ্ধতি ‘জুমচাষ’। যেটা প্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি পাহাড়ের প্রান্তিক জুমিয়ারা ঐতিহ্যগতভাবে করে আসছে। এই চাষের মাধ্যমে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ জীবনধারণ করে আসছে। সাধারণত প্রতিবছরই জীবনের তাগিদে জুমচাষ করে থাকে জুমিয়ারা। এবারও পাহাড়ে ধান, ভুট্টা, কাকন, হলুদ, মারফাসহ বিচিত্র রকমের ফসল চাষ করেছেন তারা। এখন জুম ধান ঘরে তোলার মৌসুম চলে এসেছে। ফলে পাহাড়ে পাহাড়ে এখন পাকা ধানের সমারোহ। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে চারিদিক। অনেক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে এই ধানকাটা উৎসব।
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে হয়ে থাকে জুমচাষ। সম্প্রতি উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন সংলগ্ন সীতাপাহাড় ও রামপাহাড়ের কিছু অংশে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড় ঘিরে হচ্ছে জুমচাষের সমারোহ। যেখানে সবুজ পাহাড়জুড়ে পাকা ধানের সোনালী রঙে ছেঁয়ে গেছে। পাকাধানের মিষ্টি সুবার ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশ।
স্থানীয় জুমচাষী সাইনুচিং মারমা, হ্লালাচিং মারমাসহ একাধিক চাষী জানান, দীর্ঘবছর ধরে তারা পাহাড়ে জুম চাষ করে আসছেন। এই জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল তাদের পরিবার। তারা আরো জানান, সারাবছর কষ্ট করে জুমচাষ করার পর এখন ঘরে ফলন তোলার সময় তাদের। এ জুম ধান ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। তাছাড়া এবার বৃষ্টিপাত ভালো হওয়াতে ফলন গতবছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। তবে আগে মাটির উর্বরতার জন্য সার ব্যবহার করা না হলেও এখন জুমে সার দিতে হয়। দিন দিন পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে জুমচাষ হয়ে থাকে। যেখানে ধানের পাশাপাশি আদা, হলুদ, মারফা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষ করা হয়।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই কৃষি বিভাগ থেকে জুমচাষীদের ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশ্র ফল, ফসল চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হয়ে থাকে। তবে চাষীরা স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করলেও কৃষিবিভাগ থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উচ্চ ফলনশীল ধানের ব্রি-ধান-৮৭ জাতের ধানের চারা রোপণের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও কাপ্তাইয়ের চিৎমরম, ব্যাঙছড়ি, সীতাপাহাড় এলাকার পাহাড়গুলোতে ভালো জুমচাষ হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।