রাঙামাটি জেলা পরিষদ
সচিবের ‘মন গলাতে’ গাড়ি চড়তে মানা!
মিশু দে, রাঙামাটি
# আর্থিক ক্ষমতা নেই, চারমাসের জ্বালানি বিল বকেয়া # সচিব এলেন প্রকল্প পরিদর্শনে
সরকার পতনের পর থেকে আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় ১২ লাখ টাকার বেশি জ্বালানি খরচ বকেয়া রয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদের। ‘বাকি’ টাকা না দেয়ায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানই। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভবনের নিচ তলায় সব যানবাহন স্তূপ করে গাড়ি ব্যবহার না করতে অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে একইদিনে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে এসেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকী।
কেউ কেউ বলছেন, মূলত তাঁর নজরে এনে ‘মন গলিয়ে’ সমস্যা সমাধানে এমন অভিনব ‘কৌশল’ সংশ্লিষ্টদের।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন আসে। ওদিন থেকেই পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের বেশিরভাগ চেয়ারম্যান-সদস্যরা এখনো আত্মগোপনে। ৬১ জেলায় জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হলেও পাহাড়ের তিন পরিষদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরপর আর্থিক কার্যসম্পাদনের ক্ষমতা হারায় তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ। পরবর্তীতে চলতি (অক্টোবর) মাসে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেয়া হলেও আর্থিক ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া জমেছে। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটি জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় ১ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে পরিষদের যানবাহন ব্যবহার না করতে ৩১ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) এ অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জেলা পরিষদের নিচতলায় ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে সব যানবাহন। সেখানে টাঙিয়ে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ‘জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সকলকে পরিষদের যানবাহন ব্যবহার হতে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হলো।’
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে আরো জানা গেছে, পরিষদের চেয়ারম্যান, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ি, ছোট-বড় পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্সসহ মিলে মোট ১১টি গাড়ি রয়েছে।। এছাড়া রয়েছে স্পিডবোটও। সবমিলিয়ে অন্যান্য সময়ে মাসিক প্রায় ৫ লাখ টাকা করে জ্বালানি বাবদ খরচ হলেও গত চার মাসে পরিষদের কার্যক্রম সীমিত থাকায় খরচ কিছুটা কম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলা পরিষদের জ্বালানি তেল সরবরাহ বাবদ ১২ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ না করায় জ্বালানি সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তাই ১ নভেম্বর থেকে পরিষদের যানবাহন ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিষদের নিজস্ব ১১টি যানবাহন রয়েছে।