পার্বত্য চুক্তির ২৭ বছর
পাহাড়ে শান্তি ফিরেনি, হতাশা কাটেনি
মিশু দে, রাঙামাটি
'পার্বত্য শান্তিচুক্তির বয়স আমার বয়সের চেয়ে অনেক বেশি। এখনো চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কথা বলতে হচ্ছে, আন্দোলন করতে হচ্ছে!'
এভাবেই পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করে তীব্র হতাশা নিয়ে এসব বলছিলেন রাঙামাটি সরকারি কলেজের ছাত্রী প্রিয়ন্তী চাকমা।
চুক্তির ২৭ বছরেও মূলধারাগুলো অবাস্তবায়িত থাকায় হতাশা প্রকাশ করছেন প্রিয়ন্তির মতো অনেকে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর। অন্যদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠির নেতারা বলছেন, অনেক সময় পার হলেও আশায় আছেন চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের।
দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তপাত বন্ধ করে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। যা শান্তিচুক্তি নামেই বেশি পরিচিত। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৭ বছরেও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা বেড়েছে স্থানীয়দের মাঝে। শান্তির জন্য চুক্তি করা হলেও এখনো নিয়মিত শোনা যায় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত আর হত্যাকাণ্ডের খবর।
বিগত সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করা হলেও স্থানীয়রা মনে করছেন চুক্তির মৌলিক অধিকার বা ধারাগুলো এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, উদ্বাস্তু ও প্রত্ত্যাগত শরণার্থীদের যথাযথ পুনর্বাসন করা হয়নি এখনো। এতে ক্ষোভের পাশাপাশি নানা ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে পাহাড়ে। ভূমিবিরোধ নিস্পত্তি কমিশন গঠন করা হলেও তা কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন হলেও পার্বত্যবাসী এর থেকে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া সরকার দলীয় মনোনীত ব্যাক্তিদের দিয়েই জেলা পরিষদ গঠন করা হয়।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে চুক্তি নিয়ে কথা বলতে রাজি নন আওয়ামী লীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) নেতারা।
ভূমির অধিকার ও নিরাপত্তাসহ স্থায়ী শান্তির জন্য দ্রুততম সময়ে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সদস্য ও নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, 'চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও কোনো ইতিবাচক বক্তব্য শুনছি না। এটা হতাশাজনক।'
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, রাঙামাটি অঞ্চল সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, 'চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসময় পার হলেও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে এটা আমি আশাবাদী। পাশাপাশি আমি আরো প্রত্যাশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে।'
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়।