বিদেশি সিগারেট পাচারের ‘নিরাপদ’ রুট কাপ্তাই
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)

ভারতীয় সীমান্ত থেকে শুল্কবিহীন অবৈধভাবে বিদেশি সিগারেট যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। নৌপথে কোনো ধরনের চেকিং ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিড়ম্বনা না থাকায় গভীর রাতে এসব চালান নির্বিঘ্নে খালাস হয়ে ঢুকে পড়ছে। আর এসব বিদেশি সিগারেট রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা দিয়েই পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগের ব্যবস্থা ‘সহজ’। তাই চক্রটি পাচারের জন্য ‘নিরাপদ’ রুট হিসেবে কাপ্তাইকে বেছে নিয়েছে।
সম্প্রতি কাপ্তাইয়ে পরপর দুদিন বিদেশি সিগারেটের বিশাল চালান উদ্ধারের পরই এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
দুদিনে উদ্ধার ৩০ লাখ টাকার বিদেশি সিগারেট
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙামাটির ঘাগড়া-কাপ্তাই সড়কের বগাপাড়া ব্রিজ এলাকা থেকে ৭ বস্তা বিদেশি সিগারেট উদ্ধার করা হয়েছে। সেনা বাহিনী এবং বিজিবির চালানো যৌথ অভিযানে এসব বিদেশি সিগারেটের মধ্যে ছিল ১৬ কার্টন পেট্রোন ও ৮ কার্টন অরিস। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ লাখ টাকা। তবে ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভাস্থ সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে বিদেশি সিগারেট উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ৯ কার্টন পেট্রোন এবং ৭ কার্টন অরিস সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিকমূল্য সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। এদিন, বিদেশি সিগোরেট জব্দের পাশাপাশি দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
রাঙামাটি বিজিবি সেক্টর সদরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সেনা বাহিনী এবং বিজিবি যৌথ অভিযানে শনিবার ১৫ লাখ টাকার বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়েছে। এতে ১৬ কার্টন পেট্রোন ও ৮ কার্টন অরিস সিগারেট পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ সিগারেটগুলো কাষ্টমসকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।’
শুক্রবারের অভিযানের বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেছিলেন, ‘বিদেশি সিগারেট পাচারের সময় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দুজনের বিরুদ্ধে আমদানি নীতি ভঙ্গ করার অপরাধে মামলা হয়েছে।’
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মধ্যরাতে এবং শেষ রাতের দিকে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদের তীরবর্তী কয়েকটি স্থানে ইঞ্জিন বোটে এসব অবৈধ সিগারেট আনা হচ্ছে। পরে সেগুলো নৌপথে খালাসের পর নিজেদের বাসায় মজুদ করে পাচারচক্র। পরবর্তীতে বিভিন্ন ছদ্মাবরণে অটোরিকশা, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মাছের গাড়ি, মৌসুমী পণ্যের গাড়ি, বিস্কুট এবং গুড়ো দুধের গাড়ি করে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়। আর এসব সিগারেট রাঙামাটির কাপ্তাই সড়ক ব্যবহার করে ‘নিরাপদে’ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে সিন্ডিকেট চক্র।
কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ বলেন, ‘বিদেশি সিগারেট যেন কাপ্তাই পথ দিয়ে পাচার হতে না পারে; সেজন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
পাহাড় সব খবর