Cvoice24.com

অর্থ সংকটে ‌‘জলে ডুবছে’ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
অর্থ সংকটে ‌‘জলে ডুবছে’ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প

জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চললেও অনেক খালে এভাবেই আবর্জনার স্তুপ্ত পড়েছে। ছবি : সিভয়েস।

এবারের বর্ষায় জোয়ারের পানি ঢুকতে পারবে না চট্টগ্রাম নগরীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া কলাবাগিচা, মরিয়ম বিবি, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার, মহেশখাল দিয়ে। কর্ণফুলীর নদীর সাথে সংযুক্ত এই ৫টি খালের মুখে চলছে রেগুলেটর (স্লুইচ গেইট) বসানোর কাজ। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এ কর্মযজ্ঞের প্রায় ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের মে মাসে এই পাঁচ স্পটে নেদারল্যান্ডের রেগুলেটরগুলো বসিয়ে দিলে জোয়ারের পানি আটকে দিবে গেইটগুলো। আসন্ন বর্ষায় এভাবেই সুফল মিলবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের– বলছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এমন আশ্বাসের পাশাপাশি এ প্রকল্পে ভর করেছে আর্থিক জরাজীর্ণতা। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বলছে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে এ প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বরাদ্দ অনুযায়ী অর্থ না পাওয়ার ফলে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। আর্থিক সংকটের জেরে খোদ ‘অসহায়ত্ব’ প্রকাশ করেছেন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সিডিএ’র কর্মকর্তারা।

করোনায় এই আর্থিক জটিলতা কাটিয়ে জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে গতি আনতে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি বৈঠকও করেছে সিডিএ। সেখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে প্রকল্পের বরাদ্দ অনুযায়ী অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে।

মূলত চট্টগ্রামে জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করছে সিডিএ। এ প্রকল্পের একটি অংশ বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছে সেনাবাহিনীর সঙ্গে। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এ প্রকল্পটির একটি অংশ বাস্তবায়নের কাজ করছে।

সিডিএ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জুলাইয়ের পরে সিডিএ’র অধীনে থাকা অংশের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা দাবি করেছে সিডিএ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সেনা বাহিনীর পরিচালিত অংশের জন্য সরকারের কাছে পাওনা আছে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা। 

সিডিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের অগ্রগতির সাথে আর্থিক বরাদ্দের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারছে না সিডিএ।

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রকল্পের আর্থিক স্বচ্ছলতা যদি থাকে তাহলে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সাথে মিটিং হয়েছে। সেখানে আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি অন্যান্য প্রকল্পের চেয়েও জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পকে যেন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’

অন্যদিকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনী-৩৪ ইসিবি’র প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল শাহ আলী সিভয়েসকে জানান, চলতি অর্থবছরে আর্থিক চাহিদা ছিল ৭০৯ কোটি টাকা। কিন্তু করোনা পরিস্তিতিতে তা নেমে এসেছে ৫৩২ কোটি টাকায়। কিন্তু ৫৩২ কোটির টাকার মধ্যে হিজড়া খালের দু’পাশে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৩৫২ কোটি টাকা। 

তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিডিএর প্রকল্প আমরা (বাস্তবায়ন) করি। সেহেতু সিডিএকে আমরা প্রস্তাব করেছি ৭০৯ কোটি টাকা আমাদেরকে দিতে। যদিও মন্ত্রণালয় ৫৩২ কোটি টাকা পুনঃবরাদ্দ করেছে।’ 

ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট আর্থিক জটিলতার বিষয়টি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি প্রকল্পের যে ভৌত কাঠামো এবং ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি আছে তার জন্য আলাদা বরাদ্দ দিতে।’

সিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ। নগরের ৫টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এ রেগুলেটরগুলোর স্ট্রাকচার (অবকাঠামোর) কাজ শেষ হয়েছে। মোট কথা প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারলে এ ৫টি খাল দিয়ে আগামী বর্ষায় জোয়ারের পানি ঢুকার সম্ভাবনা নেই।’

প্রসঙ্গত, একনেকে শর্ত সাপেক্ষে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট এ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ‘নানা জটিলতায়’ প্রকল্পটি কিছু দিন থমকে থাকে। এরপর সিডিএর নেওয়া এ মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে একই বছরের ২৮ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের ব্যয়ের মধ্যে ৩৬টি খালের মাটি অপসারণে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ও মাটি খননে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তাছাড়া অধিগ্রহণ করার কথা রয়েছে ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি।

-সিভয়েস/এসবি/এপি/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়