Cvoice24.com

জলাবদ্ধতা ঘোচাতে ৫ খালে বসছে নেদারল্যান্ডের রেগুলেটর

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া ও আসিফ পিনন

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
জলাবদ্ধতা ঘোচাতে ৫ খালে বসছে নেদারল্যান্ডের রেগুলেটর

নগরের ৪০টি খালের মুখে বসানো হচ্ছে টাইডাল রেগুলেটর। ছবি : আজীম অনন।

বঙ্গোপসাগর থেকে কর্ণফুলী নদী হয়ে প্রতি বর্ষায় জোয়ারের পানি ঢুকে নগরে। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, দিন দিন বাড়ছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। নগরে পানি ঢুকলেও তা বের হতে না পারার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় এ পানি আটকে থাকছে নগরের অন্তত ২২টি স্থানে। এরমধ্যে যদি মুষলধারে বৃষ্টি হয়, তাহলে মুহূর্তেই তলিয়ে যায় নগরের নিম্নাঞ্চল। এ সংকট নিরসনে নগরের ৪০টি খালের মুখে বসানো হচ্ছে টাইডাল রেগুলেটর (স্রোত নিয়ন্ত্রক)। এরমধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৫টি খালের প্রবেশ মুখে বসানো হচ্ছে নেদারল্যান্ডের রেগুলেটর, যার সুফল এ বর্ষায় দৃশ্যমান হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে টাইডেল রেগুলেটরগুলো বসাবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরমধ্যে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর। এ প্রকল্পের আওতায় ৫টি টাইডেল রেগুলেটরের অবকাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছর মে মাসে নেদারল্যান্ড থেকে রেগুলেটরগুলো আসবে চট্টগ্রামে। জুন মাসের মধ্যেই ৫টি খালের প্রবেশ মুখে এসব রেগুলেটর বসানোর কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। কলাবাগিচা, মরিয়ম বিবি, টেগপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার, মহেশখালের প্রবেশমুখ প্রথমবারের মত রেগুলেটর বসানো হবে।

ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় খালের মুখে চলছে রেগুলেটরের অবকাঠামো তৈরীর কাজ। ছবি : সিভয়েস। নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘এই ৫টি খাল দিয়ে এই বর্ষায় ইনশাল্লাহ পানি ঢুকবে না। এগুলোতে এরই মধ্যে স্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে। আগামী মে মাসে নেদারল্যান্ড থেকে গেইটগুলো আনা হলে জুনের মধ্যে এগুলো আমরা ফিক্সড করতে পারবো বলে আশা করছি। এই সময়ের মধ্যে বাকি কাজও চলছে।’

সংশ্লিষ্টারা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দেশে প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ড থেকে কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালের এ স্লুইস গেটগুলো বসছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প। এর আগে বাংলাদেশ যে স্লুইচ গেটগুলো বসানো হয়েছে সেগুলো শিটের তৈরি। ফলে সহজেই এগুলোতে মরিচা ধরে যেত। ফলে মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যেই এগুলো সংস্কারের প্রয়োজন হতো। কিন্তু সেনাবহিনীর তত্বাবধায়নে বসানো চট্টগ্রাম নগরের খালের মুখে এ ৫টি স্লুইচ গেট হবে স্থায়ী ও মজবুত। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বসানো হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এরমধ্যে চারটি স্লুইস গেট ছোট। যেগুলোতে দুইটি করে ভেন্ট (পানি যাওয়ার পথ) থাকবে। প্রতিটি ভেন্টের সামনে ও পিছনে মোট দুটি করে গেট থাকবে। স্লুইস গেটগুলো বসানো হবে- কলাবাগিচা, মরিয়মবিবি, টেগপাড়া ও ফিরিঙ্গীবাজার খালে। অপর স্লুইস গেটটি বসানো হবে মহেশখালে। সেখানে ১২টি ভেন্ট ও ২৪টি গেইট থাকবে।

জোয়ারের পানি যখন শহরের দিকে প্রবেশের জন্য চাপ দিবে, স্লুইস গেইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটোমেটিক) বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে ভাটার সময় শহরের বৃষ্টির পানি নদী বা সাগরে বের করে দিতে হলে পিছনের গেইট খুলে দিতে হবে। সেই গেইটির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি নদী বা সাগরে চলে যাবে। তবে জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেইটের মাধ্যমে পানি বের হবে না। সে ক্ষেত্রে পাম্পের মাধ্যমে পানি বের করতে হবে। সেজন্য ফাইভ কিউবিক মিটারের বড় পাম্প থাকবে। এছাড়া, মহেশখালে নেভিগেশন লক (নৌযান চলাচলের পথ) থাকবে। যেগুলো প্রায় ২০ ফিটের প্রশস্ত হবে। নৌকা যাওয়ার সময় গেট খুলে দিবে এবং অন্যান্য সময় গেট বন্ধ থাকবে।

জোয়ারের পানি যখন শহরের দিকে প্রবেশের জন্য চাপ দিবে, স্লুইস গেইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটোমেটিক) বন্ধ হয়ে যাবে। ছবি : সিভয়েস। সরেজমিনে দেখা যায়, ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় খালের মুখে চলছে রেগুলেটরের অবকাঠামো তৈরীর কাজ। কর্মরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেখানে ৩২ দশমিক ৬৫০ মিটার প্রস্থে ও ১২ দশমিক ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যে এ রেগুলেটর বসানো হচ্ছে। যার গভীরতা ১৩ দশমিক ১০০ মিটার। এর পাশে একটি নেভিগেশন রাখা হয়েছে যা দিয়ে নৌযান চলাচল করবে। রেগুলেটরটির ভিত্তিপ্রস্থের কাজ প্রায় শেষ। এখন ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। 

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী সিভয়েসকে বলেন ‘এই রেগুলেটরগুলো আমাদের বর্ষার আগেই এক্টিভেট (সচল) হবে। এতে সুফল পাওয়া যাবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সমুয় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সিডিএ।  

-সিভয়েস/এসবি/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়