Cvoice24.com

একের ভেতর তিন

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
একের ভেতর তিন

চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রিং রোড কাম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ চলছে।

কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়েই চট্টগ্রাম নগরের অবস্থান। শুরুটা ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের কালুরঘাট সেতু থেকে। আর শেষ হয়েছে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ পতেঙ্গায়। এর মধ্যে পূর্ব থেকে পশ্চিমাংশের ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ও ৩৫ নম্বর বকশিরহাট ওয়ার্ডের যোগাযোগকে সহজ করছে সাড়ে আট কিলোমিটারের একটি সড়ক। 

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি সড়কের পাশে কর্ণফুলী নদীর উত্তরপাড়ে তৈরি হবে বাঁধ। নদী রক্ষার পাশপাশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পর্যটনকেও। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েনে ব্যহত হচ্ছে এ প্রকল্পের অগ্রগতি।

চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রিং রোড কাম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই। ২ হাজার ৩১০ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছিল ২০২১ সালের জুনে। কিন্তু সময় গড়ালেও আর্থিক কারণে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি এখনো ৪৩ শতাংশ। 

চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রিং রোড কাম উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাইচট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রেখেছিল। ফলে শুরু থেকেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে একনেক সব প্রকল্পকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসে। কিন্তু এ প্রকল্পের আর্থিক কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপরেও বাস্তবায়ন সময়ের দিকে নজর রেখে ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ আদায় করছে সিডিএ। 

কল্পলোক আবাসিক এলাকার পাশে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চলছে প্রকল্পের মূল কর্মযজ্ঞ। পুরো প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নকশা অনুযায়ী প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ চলছে। এর পাশাপাশি চলছে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজও। ইতোমধ্যে সাতটি স্লুইস গেটের কাজ শেষ হয়েছে। 

আর কল্পলোক আবাসিকের পাশে প্রকল্পের মূল কর্মযজ্ঞে নিয়মিত কাজ করছেন প্রায় সাড়ে চারশ শ্রমিক। এতে ব্যবহার হচ্ছে- ১৮টি এক্সক্যাভেটর, ১৭টি ড্রাম্প ট্রাক, তিনটি ওয়াটার ট্যাংক, ছয়টি বুল্ডুজার, তিনটি ভিরোম্যাক্স রোলার, একটি শিপফুট রোলার, একটি মিনি রোলার, ছয়টি ট্রানজিট মিক্সার, একটি মোটর গ্র্যান্ডার, একটি বড় টেইলর, সাতটি ট্রেডর ট্রলি, একটি কনক্রিট বুম পাম্প, দুটি কনক্রিট ল্যান্ড পাম্প, দুটি কনক্রিট ব্লিচিং প্ল্যান্ট, তিনটি পে-লোডার, একটি পিভিডি মেশিন, একটি হেমার এক্সক্যাভেটর, একটি ডিজেল লরি, একটি ক্রেন।

নদীর পাড়ে বানানো হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার ব্লক। এগুলো বসানো হবে নদীর বাঁধে। ব্লক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত মুস্তাকিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এরকম আরও অনেক ব্লক বানিয়েছি। প্রায় দেড় লাখের বেশি ব্লক নির্মাণ করতে হবে। এগুলোই পরে বাঁধে বসানো হবে।’ 

নদীর পাড়ে বানানো হচ্ছে প্রায় ১২ হাজার ব্লক। এগুলো বসানো হবে নদীর বাঁধেসিডিএর এই প্রকল্পের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প উপ-ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দীন দিদার সিভয়েসকে বলেন, ‘এ প্রকল্পে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ের কালুরঘাট সেতু এলাকা থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত নদীর বাঁধ। বাঁধে রাস্তা ও খালের মুখে বসানো হবে রেগুলেটর। এখানে মোট ১১টি রেগুলেটর বসানো হবে। আমরা প্রকল্প এলাকার সাড়ে আট কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটারের কাজ করছি এখন। বাকি অংশে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা আছে। সিডিএ টাকা না পাওয়ায় সেই কাজ আটকে আছে মূলত। অধিগ্রহণের পর তারা বাকি অংশের জায়গা বুঝিয়ে দিলে, আমরা সে কাজটিও শুরু করবো।’

বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় মাটি ভরাট করে রাস্তার কাজ শেষ করেছি ইতোমধ্যে। তবে এ রাস্তাগুলো হবে বাঁধের উপর। ট্রাপিজিয়াম আকারের এ রাস্তা ৯০ ফুট উঁচু হবে। তবে নিচে ৩০০ ফুটের ভিত্তি নির্মাণ হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত সাতটি স্লুইস গেট বসানো হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আরও দুটি স্লুইস গেটের কাজ শেষ হবে। আর বাকি দুটির কাজ শুরু হবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা শেষ হলে।’

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দ ঠিকভাবে না পাওয়ায় কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। এরপরেও যতটুকু সম্ভব আমরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিচ্ছি। প্রকল্পের বরাদ্দ পেলে তখন ঠিকাদারদের টাকা পরিশোধ করে দিব। এখন পর্যন্ত আমরা ৪৩ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। ভৌত উন্নয়নকে গতিশীল করতে টাকার কোনো বিকল্প নেই।’

রাস্তায় মাটি ভরাটের পাশাপাশি স্লুইস গেট নির্মাণের কাজও চলছেকাজের অগ্রগতিতে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কথা জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এ জটিলতা মোকাবেলা করতে আমাদের অবশ্যই টাকা প্রয়োজন। টাকা না পেলে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ আটকে থাকছে। তবে এ জটিলতাকে বাদ দিয়ে আপাতত যতটুকু সম্ভব, আমরা ততটুকু করার চেষ্টা করছি। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে বরাদ্দ না পেলে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা চলমান কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

নগরীর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোড কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। তবে যথাসময়ে অর্থ ছাড় না হওয়ায় ২০২২ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল বাড়ানো হতে পারে বলে জানান সিডিএ সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর তীরে বসানো হবে ব্লক। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়াও সড়কটি পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিভয়েস/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়