Cvoice24.com

অযত্ন অবহেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
অযত্ন অবহেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য 

সংস্কারের অভাবে বিবর্ণ দশা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি স্মরণে নির্মিত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যের

নগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরমুখী পোর্ট কানেক্টিং রোডের বড়পোল মোড়ে ৭ মার্চের মর্মবাণী যুগান্তকাল প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেয়ার লক্ষেই নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। যার নামকরণ করা হয় 'বজ্রকণ্ঠ'। উদ্বোধনকালে ভাস্কর্যটি ঝকঝকে দেখা গেলেও ছয় মাস যেতে না যেতেই ফ্যাকাসে হয়ে গেছে এ ভাস্কর্য ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। বড্ড অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে জাতির পিতার স্মৃতি স্মরণে নির্মিত চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি। 

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নগরের বড়পোল মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাস্কযের সারা গায়ে জমে আছে ধুলো-বালি। আশেপাশে গাছের চারাগুলো জরাজীর্ণ ও মৃতপ্রায়। নেই পানি দেয়ার কোন ব্যবস্থা। ভাস্কযটি উদ্বোধনকালে চারপাশে বাঁশের ঘেরা দেয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে স্থায়ী সীমাপ্রাচীর হওয়ার কথা ছিল। অথচ তা এখনো হয়নি। বরং খুলে গেছে বাঁশের ঘেরার বাঁধ। ভাস্কযের আশেপাশে গড়ে উঠেছে টংসহ বিভিন্ন ফল ও ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান। গড়ে উঠেছে যত্রতত্র অননুমোদিত পার্কিং। খাবারের দোকানের ময়লাপানি, পানের পিক ফেলা হচ্ছে ম্যুরালের আশেপাশে, যা নষ্ট করছে পরিবেশ। 

ম্যুরালের উত্তর পাশে ঝুলে আছে দক্ষিণমুখী ময়লাচ্ছন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যুরাল উদ্বোধনী ব্যানার। ম্যুরালের পেছনে বৈদ্যুতিক তার ও ভবনের বেলকনিতে কাপড় ঝুলে থাকা কাপড় ম্লান করে দিয়েছে ভাস্কর্যের গাম্ভীর্যতা।

এ প্রসঙ্গে ম্যুরালের সামনে কথা হয় বেশ কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানভীর আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘ভারতে গান্ধীর ভাস্কর্য চর্চা এক অন্য জায়গায় পৌঁছেছে। অথচ আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য চর্চা একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। শুধু ভাস্কর্য তৈরি করলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুর সম্মানার্থে তাঁর ভাস্কযের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণও প্রয়োজন।’ 

একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা শাহেদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এ জায়গা দিয়ে আসা-যাওয়া করি। ভাস্কর্যটি যখন তৈরি করা হয়েছিল, তখন অনেকটা গোছানো ছিল। সাদা রংটি তখন অনেক দূর থেকে সবার নজর কাড়তো। অথচ দিন যত যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যর গায়ে ধুলা-বালি জমতে জমতে বাদামী হয়ে যাচ্ছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নামটি আমাদের আবেগ। আমাদের আদর্শের জায়গায় আছেন তিনি। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাঁকে ভালোবেসে ম্যুরাল তৈরি করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাঁর প্রতি সম্মান রেখে ম্যুরালের চারপাশের পরিবেশ সুন্দর করতে হবে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের পরিচালক ও ভাস্কর অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘নগরের বড়পোলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটা তৈরি করা হয়েছে। এটার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার, পরিবেশ-পরিস্থিতি সবকিছু দেখার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ এটা কোন সাধারণ ভাস্কর্য নয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর প্রোগ্রামটা এখনো চলমান আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে এ বছরের ১৬ই ডিসেম্বর। সবকিছু মিলিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আরো যত্নবান হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’  

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘ম্যুরালটা যে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে তা আমরা জানতাম না। আমরা যেহেতু জেনেছি বিষয়টি অবশ্যই দেখবো। ম্যুরালটির দেখভাল করার জন্য আমাদের কর্মী নিয়োজিত আছে। তারা যদি দায়িত্বে অবহেলা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, ‘বজ্রকণ্ঠ’ভাস্কর্যটি নির্মাণ ও স্থাপন কাজে চসিকের ব্যয় হয়েছে ৮৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর উচ্চতা সাড়ে ২২ ফুট, ভিত্তিসহ পুরো ভাস্কর্যের উচ্চতা ২৬ ফুট। সাদা সিমেন্টের (আর.সি.সি) ঢালাই এর মাধ্যমে ভাস্কর্যটি স্থায়ী রূপপ্রাপ্ত হয়, যার ওজন প্রায় ৩০ টন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক শিল্পী শায়লা শারমিন এবং নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দারের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে এই ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছে। 

এই ভাস্কর্যের ভাস্কর হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ভাষ্কর মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম ভাস্কর্যের নকশা (মডেল) প্রণয়ন থেকে শুরু করে মূল ভাস্কর্য নির্মাণের সার্বিক কর্মকান্ড সম্পাদনা করেন। এই ভাস্কর্য তৈরিতে  সহযোগী শিল্পী হিসেবে ছিলেন জয়াশীষ আচার্য্য, তপন ঘোষ ও মোহাম্মদ পারভেজ আলম, শিক্ষার্থী বিলাস মন্ডল, নুর-এ-আলা সিদ্দিক, গোপাল কৃষ্ণ রুদ্র, মোস্তাফিজুর রহমান তোহা, জয়দীপ দেওয়ানজী। 

এই ভাস্কর্যের অন্যতম একজন সহ-শিল্পী তরুণ ভাস্কর্য তপন ঘোষ এই নামটি নাম ‘বজ্রকণ্ঠ’প্রস্তাব করেছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. তৈয়ব,সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহান এই ভাস্কর্য নির্মাণের ক্ষেত্রে নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তারা এই ভাস্কর্যের বেইজমেন্টের ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং প্রণয়নসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ভাস্কর্য বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন। গত বছরের ২৯ জুলাই চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বঙ্গবন্ধুর এ ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়