Cvoice24.com

বিশ্বমানের ট্যুরিস্ট জোন হবে পতেঙ্গা সৈকত 

আসিফ পিনন

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সারাদিন ঘুরে ফিরে যেদিন কোন কাজ নেই। সেদিন ঘুরতে যাওয়ার কথা মাথায় আসলে চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দাদের কাছে পছন্দের তালিকায় থাকে পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকত। বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্তের দৃশ্য সবার মন টানে এ সৈকত। তবে পর্যটকদের প্রত্যাশার তুলনায় স্বল্প সুযোগ সুবিধা, আধুনিকতার বদলে পশ্চাৎপদ পরিবেশসহ নানা সমস্যার কারণে দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে এ দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পটটি। এবার এমন প্রেক্ষাপট বদলে দেওয়া কথা শোনাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

সিডিএ বলছে, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এবং তার আশপাশের প্রায় ৬ কিলোমিটারজুড়ে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সিডিএ। যাকে বলা হচ্ছে ‘রিক্রিয়েশন জোন’। এই রিক্রিয়েশন জোনের দুই প্রান্তে থাকবে বিশেষায়িত আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ সুবিধা। তাতে থাকবে দৃষ্টিনন্দন কনভেনশন হল, শপিং মল ও পাঁচ তারকা হোটেল। তবে এ জোনটিকে ‘রেসট্রিকটেড’(অনাকাঙ্খিত প্রভাবমুক্ত) রাখতে প্রবেশের জন্য দিতে হবে নির্দিষ্ট ফি। রিক্রিয়েশন জোনের দুই প্রাপ্তে সংযোগ স্থাপনের জন্য থাকবে‘টয়’ট্রেন। দেশী বিদেশী পর্যটকরা এখানে চড়তে পারবে ক্যাবল কার, অন্যান্য সাধারণ রাইডসহ ওয়াটার রাইডে।

সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, আঞ্চলিক পর্যটকসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক কাছে টানতেই বিশ্বমানের চট্টগ্রামের পতেঙ্গাকে ঘিরে এ পর্যটন জোন গড়ে তোলার কথা ভাবছে সিডিএ। পাশাপাশি এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নির্মাণ করা হবে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। যেখানে থাকবে কনফারেন্স রুম, সিনেপ্লেক্সসহ পর্যটনবান্ধব নানা সুযোগ সুবিধা। যদিও সিডিএর এসব পরিকল্পনা এখনো সমীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ। 

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘টিকিট সিস্টেম দিয়ে এখানে মানুষ ঢুকবে। নোমিন্যাল একটা টিকেটিং সিস্টেম হবে। বিভিন্ন রাইড থাকবে এখানে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই ট্যুরিস্ট বাস্তবায়ন করবে সিডিএ।’

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, ‘প্রকল্পটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের নিজস্ব সমীক্ষা চলছে। বলা চলে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সমীক্ষা শেষ প্রকল্প ব্যয়, অর্থায়ন ও নির্মাণের বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।’  

নগর পরিকল্পনাবিদ ও সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘এই এলাকায় যারা আগে দোকানমালিক ছিল, তাদেরকে পুর্নবাসন করার জন্য একটা জাইকার একটি শর্ত আছে। সেই শর্ত অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভবনটি নির্মাণ করতে হবে। যেখানে দোকানদাররা পুর্নবাসিত হবে। পাশাপাশি সিনেপ্লেক্সসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সংবলিত এন্টারটেইনমেন সেন্টার (বিনোদন কেন্দ্র) গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে।’

এদিকে চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট থেকে এ সমুদ্র সৈকতের দুরুত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার। এবং বন্দরে খুব কাছেই অবস্থিত  হওয়ার কারণে এ পরিকল্পনায় টুরিস্ট এরিয়ার পাশাপাশি  সিইপিজেড কানেকটিং রোড গড়ে তোলার কথা ভাবছে সিডিএ। 

অন্যদিকে সাগর, নদী এবং পাহাড় বেষ্টিত অপার সৌন্দর্য বন্দর নগরী চট্টগ্রামের। কিন্তু নগরবাসীর আক্ষেপ, নানা অব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন বাস্তবতায় চট্টগ্রামে বিশ্বমানের এ টুরিস্ট জোনে প্রবেশ ফি’র নির্ধারণ করা হলে উচিত হবে না বলে বলছেন সাধারণ পর্যটকরা। তারা বলছেন, ‘নানা অব্যবস্থাপনার কারণে দর্শনীয় স্থানের বড়ই অভাব এ নগরীতে। তার উপর দিন দিন বাড়ছে নগরীর জনসংখ্যা। সেই তুলনায় চট্টগ্রামের অপার সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে না। তাই  সম্ভাব্য বিশ্বমানের টুরিস্ট জোনটিতে প্রবেশ মূল্য রাখা উচিত নয়।’

নগরবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘সিডিএ আধুনিকায়নের কাজটি করুক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবারিত রাখতে হবে। এবং প্রকৃতির সজ্জা উপভোগ করতে গিয়ে কেউ যদি বাড়তি সুযোগ-সুবিধা নেয়। তাহলে একজন পর্যটককে সেটা পয়সার বিনিময়ে গ্রহণ করুক। কিন্তু প্রবেশধিকার সংরক্ষণ করাটা একদমই উচিত হবে না বলে আমি মনে করি।’

-সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়