Cvoice24.com

ঢাকা চট্টগ্রামে মশার ওষুধ একই, ‘গোঁজামিল’ চসিকে 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ঢাকা চট্টগ্রামে মশার ওষুধ একই, ‘গোঁজামিল’ চসিকে 

মশা মারার কৌশল শিখতে ঢাকায় গেল চসিকের টিম।

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ পুরো দেশ জুড়ে ভয়াবহ বিস্তার ছড়িয়েছে মশা। বলা চলে, টানা কয়েক বছরজুড়েই মশার রাজত্ব। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মশক নিধনে পুরোদস্তুর প্রস্ততি নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। যদিও সেখানে মশার উৎপাত ‘রয়ে গেছে’—বলা হচ্ছে এ কথা। অন্যদিকে মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে বহু পরিকল্পনার কথা  বলা হলেও মশক নিধনে গতি ফেরাতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। শেষমেষ মশার মারার কায়দা শিখতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যেতে হয়েছে চসিকের একটি টিমকে।  

গেল বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চসিকের দুই সদস্যর একটি বিশেষ দল ঢাকার উত্তর সিটি ঘুরে সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন তথ্য। ঢাকা ঘুরে এসে রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কার্যদিবসে মোট সাত পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দলটি। ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনের কৌশল। তাদের সেই প্রতিবেদনে, মশক নিধনে দুই সিটি একই ওষুধ ব্যবহার করলেও রয়েছে কৌশলগত পার্থক্য।

তবে চসিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশা মারতে প্রায় একই ধরণের ওষুধ ব্যবহার করছে ডিএনসিসি। চসিকের ৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডিএনসিসিতে মশক নিধনে ব্যবহার হচ্ছে ‘লার্ভিসাইড’। মশার লার্ভা ধ্বংসে যা ব্যবহার হচ্ছে দু’টি উপায়ে। প্রথমত ‘টেমচোপস্’১০ লিটার পানিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ১৫ মিলিলিটার। এবং দ্বিতীয়ত ‘নোভাল্যুরন’ নামের এক গ্রাম ট্যাবলেট ১ পানির সাথে মিশ্রিত করে ব্যবহার করছে ডিএনসিসি। এদিকে চসিকে মশার লার্ভা ধ্বংসে চসিক ব্যাবহার করছে কেবল মাত্র ‘টেমচোপস’। ‘নোভাল্যুরন’ নামের ট্যাবলেটটি ব্যবহার করছে না চসিক।

‘এল্ড্রাটিসাইড’হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ‘ম্যাল্যাশন’। অর্থ্যাৎ পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে ফগার মেশিনের মাধ্যমে এ ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে বিকাল বেলায়। যা একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করছে চসিক। অন্যদিকে লাইট ডিজেল ওয়েল (কালোতেল) ব্যবহার হচ্ছে চসিক ও ডিএনসিসি দু’টি সংস্থায়। বলা চলে, লার্ভা ধ্বংসকারী ট্যাবলেট ‘নোভাল্যুরন’ছাড়া বাকি ৩টি উপাদান মিল আছে সংস্থা দু’টির মধ্যে। তাছাড়া চসিকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লার্ভা ধ্বংসে টেমচোপস্ ওষুধটি বেশি কার্যকর। যা ব্যবহার করছে চসিক ও ডিএনসিসি।’ 

যে ‘গোঁজামিল’ চসিকে 

মশার বিস্তার এতোটাই প্রকট, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো নগর ভবনজুড়ে। কোটি টাকার ওষুধ ছিটিয়েও কেন মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নগরবাসীর মনে। মশক নিধনের বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আছেন চসিকের দায়িত্বশীলরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চসিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ‘চট্টগ্রামে চলছে জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ। যার ফলে বেশ কিছু খাল বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। মূল খাল বদ্ধ থাকায় ছোট ড্রেনেগুলোতেও পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে খাল ও ছোট ড্রেন দুটো জায়গাতেই সমানভাবে মশার বিস্তারের সুযোগ হচ্ছে মশার।’ চসিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—‘মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর আগে ড্রেনগুলোর মধ্যে পানির জলাবদ্ধতা থাকলে তা চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে ‘ কিন্তু চট্টগ্রামে যে গুলো রয়েছে বদ্ধ অবস্থায়।

অন্যদিকে মশক নিধনে ওয়ার্ড, এলাকাভিত্তিক সমন্বয় করেছে ডিএনসিসি। কিন্তু করোনাকালীন নির্বাচন স্থগিত থাকায় দীর্ঘদিন সমন্বয়হীনতা ছিল চসিকের মশক নিধনে। তাছাড়া ডিএনসিসিতে অঞ্চল ভিত্তিক মশক নিধন কার্যক্রম সরাসরি মনিটরিং করছে একজন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। অন্যদিকে চসিক পুরোপুরি নির্ভর পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ২০০ স্প্রে-ম্যানের উপর। তা-ও চসিকের স্প্রে-ম্যানরা প্রশিক্ষিত না হওয়ার কারণে স্প্রে-মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এমন আলোচনাও আছে। চসিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘হ্যান্ড স্প্রে-মেশিন এবং পগার মেশিন চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে মশা নিধনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে এবং মেশিন নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।’

অন্যদিকে মশার আচরণগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় ওষুধ ছিটাচ্ছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা জানান, উত্তর ঢাকার ৫৪টি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড ছিটানো হয় সকাল ৮টা থেকে সকাল ১১ টার মধ্যে। এবং এডাল্ট্রিসাইড ছিটানো হয় সূর্যস্তের ১ ঘন্টা আগে থেকে ১ ঘন্টা পর। 

ডিএনসিসি মশক সুপার ভাইজার মো. শাহাদাত হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘সকাল বেলা লার্ভিসাইড ছিটানো হলে মশার লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। কেননা দিনের বেলায় লার্ভা থেকে মশার উৎপত্তি হয়।’এডাল্ট্রিসাইড ছিটানো ব্যাপারে তিনি বলেন,‘বিকেলের দিকে এডাল্ট্রিসাইড ছিটানোর নির্দেশনা আছে। কারণ বিকেলে পূর্ণাঙ্গ মশার বিস্তার বেশি হয়।’

চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উপ-প্রধান কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘বিভিন্ন চলমান প্রকল্প চলছে চট্টগ্রামজুড়ে। নালা-খাল বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। যার জন্য ওষুধে কাজ হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।’

বিভিন্ন কার্যকারিতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নগরে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে সেগুলো কার্যকর।—এটা পরীক্ষিত সত্য। ঢাকাতেও একই ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে।’

মশার ওষুধ ছিটানোর নিয়ম, ওয়ার্ড ভিত্তিক সমন্বয়সহ প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আজ মেয়র মহোদয়কে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সবাই বসে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। সেভাবে ওষুধ ছিটানো হবে।’
    
সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়