Cvoice24.com

কাঁটাতারের বেড়ায় লালদিয়া চর দখল নিলো বন্দর, উচ্ছেদ ২৩’শ পরিবার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ১ মার্চ ২০২১
কাঁটাতারের বেড়ায় লালদিয়া চর দখল নিলো বন্দর, উচ্ছেদ ২৩’শ পরিবার

লালদিয়া চরের মূল সড়কের পাশে বাঁশ পুঁতে বেড়া তৈরির কাজ করছে বন্দরের শ্রমিকরা। ছবি : সিভয়েস

পতেঙ্গার ১৩ নম্বর খালের উত্তর ও ১৪ নম্বর খালের দক্ষিণ পাশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ দু’খালের মাঝখানের ইনকনট্রেড ডিপো ছাড়া লালদিয়া চরের ৫২ একর জায়গা উচ্ছেদ করে দেয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। এতে কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠলেও বেশিরভাগ মানুষ এখনো গৃহহীন।

সোমবার (১ মার্চ) সকাল থেকে মূল সড়কের পাশের এলাকায় বাঁশ পুঁতে বেড়া তৈরির কাজ শুরু করেন বন্দরের কয়েক’শ শ্রমিক।

সরেজমিনে পরির্শন করে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরি এলাকাটি উচ্ছেদ করার ঘোষণা দেয়ার পরপরই লালদিয়া চর এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে উচ্ছেদ না করার অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে উচ্ছেদ নিশ্চিত জেনে তারা পুনর্বাসনের দাবি করে। কিন্তু উচ্ছেদের কয়েকদিন আগে থেকে লালদিয়াবাসী তাদের বাড়ি-ভিটা ছাড়তে শুরু করেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যারা টিকে থাকতে চেয়েছিলো, তারা আজ (সোমবার) সকাল থেকে নিজ উদ্যোগে বাসিন্দারা বসতঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন।

দেখা গেছে, অনেকে ভাঙাবাড়ি, আসবাব বিক্রি করে দেন নামমাত্র মূল্যে। কেউ কেউ এখনো বাসস্থান নিশ্চিত করতে না পেরে ভ্যানে ও নৌকায় মালামাল তুলে রাখছেন। বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লালদিয়ার চর এলাকা সকাল থেকে পরিদর্শন করেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য।

বসতবাড়ি উচ্ছেদ হলেও লালদিয়ায় থাকছে একটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা, যা ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার নির্মাণ করে। মানুষ না থাকলে মসজিদে কে আসবে- উল্লেখ করে লালদিয়াচর মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। যারা কিছুটা সলভেন্ট (সচ্ছল) তারা বিভিন্ন জায়গায় বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনো গৃহহীন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের ঘরে উঠছে। আত্মীয়-স্বজন মেহমানদের কতদিন রাখবে!’

লালদিয়াচর পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হাসান বলেন, ‘২৩’শ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হক তৈরির সময় সরকার আমাদের নিষ্কণ্টক জমি নিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু সরকার আমাদের ১৯৭২ সালে এ জায়গা দিয়েছে। ডিসি অফিসে আমরা ২ বছর খাজনা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের দুঃখ হলো- আমাদের এখন উচ্ছেদ করার পাশাপাশি দখলদার বলা হচ্ছে। অথচ ২০০৫ সালে ইনকনট্রেড ডিপো তৈরির জন্য আমি পরিবারসহ উচ্ছেদ হয়েছি। আমাদের পারিবারিক কবর এখন ইনকনট্রেড ডিপোর টয়লেট। এরপরেও যে মন্ত্রীর বাড়ি দিনাজপুর, উনি আমাদের দখলদার বলছেন।’

লালদিয়া চর এলাকাবাসীর শান্তিপূর্ণ প্রস্থানের কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রয়োজনে লেবার ও ইক্যুইপমেন্ট সহায়তা দেব। শান্তিপূর্ণ প্রস্থানের ব্যবস্থা করছি। এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমাদের লক্ষ্য অর্জন হয়ে গেছে। বুলডোজার বা স্ক্যাভেটর দিয়ে ভাঙার অভিপ্রায় নেই। তারা গরিব হলেও আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা ঢিল পর্যন্ত ছুঁড়েনি। এখন আমাদের কয়েক’শ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। তারা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে লালদিয়া চর এলাকা ঘেরা দিচ্ছে।’

-সিভয়েস/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়