Cvoice24.com

‘আমরা কি রোহিঙ্গাদের চেয়েও অধম’—মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের প্রশ্ন

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১ মার্চ ২০২১

 

মোহাম্মদ আব্দুল মোবিন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর সৈনিক। যুদ্ধ করেছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের ১৩৭ নম্বর গ্রুপে। গ্রুপটির ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবদান রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে তাঁকে হারাতে হয় জহুরুল হক বিমান ঘাঁটি এলাকার নিষ্কণ্টক জমি। তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের কথায় লালদিয়া চরে বাসস্থান গড়লেও ৪৯ বছর পর বন্দরের অভিযানে আবারো হারালেন বসত ভিটা। 

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল সম্প্রসারণ কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর দখলে নিয়েছে লালদিয়া চর। এ দখল-উচ্ছেদ ঘটনায় তাঁর পরিবারসহ ভিটে হারিয়েছে লালদিয়া চরের প্রায় ২৩’শ পরিবার। ভিটে-মাটি হারিয়ে নিজেদের ‘রোহিঙ্গাদের চেয়েও অধম’বলে মনে করছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। 

জমি দাতারাই আজ লালদিয়াতে বাস্তুহারা

মোহাম্মদ আব্দুল মোবিন সিভয়েসকে বলেন, ‘সরকার রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসন করছে। আমরা কি দোষ করেছিলাম! ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যখন পাক হানাদার বাহিনী জহুরুল হক ঘাঁটি এলাকায় আগুন লাগিয়ে দেয়, আমরা নিরাপত্তার জন্য অন্য একটা জায়গায় চলে যাই। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে আমরা আবার আমাদের স্থানে ফিরে আসি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আমরা জহুরুল হক ঘাঁটি ছেড়ে দিয়ে লালদিয়ার চর এলাকায় চলে আসি। ঘরবাড়ি করে ৫০ বছর এ স্থানে বসবাস করছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বলতে লজ্জা হয়।’

দেশের নাগরিকদের পুনর্বাসন ছাড়া রাস্তায় ছেড়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জন্মস্থান ছেড়ে দিয়ে দেশের উন্নয়ন করেছি। বিনিময়ে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। মুজিব শতবার্ষিকী উপলক্ষে লালদিয়ার চর এলাকাবাসীকে একি প্রতিদান দিল? কি কারণে আসলে দেশটা স্বাধীন করেছি, জানিনা। যে দেশে ভিনদেশি রোহিঙ্গা পুনর্বাসিত হয় সে দেশের নাগরিকদের পুনর্বাসন ছাড়া রাস্তায় ছেড়ে দেয়াকে কি বলা যায়? তার মানে তো আমরা রোহিঙ্গার চেয়েও খারাপ।’

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লালদিয়ার চর এলাকার মানুষ কি দোষটা করেছিল? সবার চোখের জল যে মাটিতে পড়ছে সে মাটি কি একদিন সাক্ষ্য দিবে না? অবশ্যই দিবে। আমার এতগুলো সম্পর্ক নষ্ট করেছে, সরকার আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমিতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের কাছে একটা পুনর্বাসন পাই। আমিতো তা থেকেই বঞ্চিত।’

লালদিয়া চরের টিকে থাকা স্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কুল আছে। যদি আমরাই না থাকি, স্কুলে পড়বে কে? মসজিদ আছে, নামাজ পড়বে কে? কেন্দ্র আছে, ভোট দিবে কে? আমি যেহেতু জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়েছি, আমি এদেশের নাগরিক। কিন্তু সত্যিকারভাবে কি আমাদের নাগরিকত্ব আছে?’

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোবিন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উম্পি নগরে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ করেছেন। 

কাঁটাতারের বেড়ায় লালদিয়া চর দখল নিলো বন্দর, উচ্ছেদ ২৩’শ পরিবার

প্রসঙ্গত, পতেঙ্গার ১৩ নম্বর খালের উত্তর ও ১৪ নম্বর খালের দক্ষিণ পাশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এ দু’খালের মাঝখানের ইনকনট্রেড ডিপো ছাড়া লালদিয়া চরের ৫২ একর জায়গা উচ্ছেদ করে আজ (সোমবার) সকাল থেকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। লালদিয়ার বাসিন্দারা কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ও ভাড়া বাসায় উঠলেও বেশিরভাগ মানুষ এখনো গৃহহীন।

-সিভয়েস/এসবি/আরএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়