Cvoice24.com

সেই পিসি রোডে নাছির-সুজনের পরে এবার রেজাউল

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১ মার্চ ২০২১
সেই পিসি রোডে নাছির-সুজনের পরে এবার রেজাউল

সোমবার (১ মার্চ) পিসি রোড পরিদর্শনে গিয়ে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

এপ্রিল! মানে সামনের মাসের এপ্রিল। অর্থ্যাৎ ২০২১ সালের এপ্রিল। আর বাকি প্রায় ৬০ দিন। এ সময়টুকুর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা পোর্ট কান্টেকটিং (পিসি) রোডের কাজ শেষ চান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। তেমনটা নির্দেশও দিয়েছেন। তা না হলে কালো তালিকাভুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছেন কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারদের। 

সোমবার (১ মার্চ) পিসি রোড পরিদর্শনে গিয়ে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় ঠিকাদারদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অতীতে কি করেছেন তা ভুলে যান। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করার ফলে ভোগান্তি সৃষ্টি হলে আমি কাউকে ছাড় দিব না।’এসময় তিনি পিসি রোডের রোডের কলকা সিএনজি থেকে নয়াবাজার পর্যন্ত অংশে পিচ ঢালাইয়ের কাজ পরিদর্শন করেন। 

অবশ্য চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও অসংখ্যবার এই পরিদর্শন করে ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা নানা হুঙ্কার হুশিয়ারি দয়েও সফল হননি। বরঞ্চ দিন দিন ভোগান্তি বাড়ায় আক্ষেপ নিয়ে দায়িত্ব ছেড়েন দুজনই। সেই পিসি রোডের ভোগান্তি কমানোর দায়িত্ব এসে পড়েছে এবার মেয়র রেজাউলের ঘাড়ে। 

চসিক সূত্র জানায়, পিসি রোডে সংস্কার কাজ করছে তাহের ব্রাদ্রার্স, ম্যাক কর্পোরেশন ও রানা বিল্ডার্স। এদের মধ্যে তাহের ব্রাদ্রার্সের যে অংশের কাজ নিয়েছে তা প্রায় শেষ পর্যায়ে । বাকী রয়ে গেছে রানা বিল্ডার্স ও ম্যাক’র অংশের কাজ। বর্ষার আগে পিসি রোডের পূর্ব পাশের এক হাজার মিটার সড়কে পিচ ঢালাই সম্পন্ন হলে জনভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছে সিটি কর্পোরেশন। তবে তা শেষ না হলে ভোগান্তি মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

পিসি রোডের ‘সাময়িক অসুবিধা’ শেষ হয়নি তিন বছরেও

কয়েক কিলোমিটারজুড়ে এ সড়কের চারপাশের বাসিন্দারা ৩ বছর লড়ছেন ধূলার সাথে। ধূলায় দাপটে কেউ হারিয়েছেন মূল সড়কের পাশে গড়ে তোলা দোকান। কেউ ছেড়েছেন ঘরবাড়ি। এভাবে জীবিকার চাকা নষ্ট হয়েছে অনেকের। বাসিন্দারা বলছেন, ‘বেশ কয়েকমাস ধরে এ সড়কে কোন কাজ করতে দেখেনি কেউ। শুধু সপ্তাহে দু’একবার সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এসে পানি ছিটিয়ে দিয়ে যায় ধূলোমাখা সড়কটিতে।’

সম্প্রতি বেশ কয়েক দফা সরেজমিনে দেখা যায়, হালিশহর বিদ্যুৎ অফিস (ওয়াপ দা গেইট) থেকে শুরু করে নতুন বাজার এলাকা পর্যন্ত একপাশের সড়কে বন্ধের নোটিশ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। অন্য পাশে ঝাঁকুনি দিয়ে চলাচল করছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক বড় গাড়িগুলো। এমনিতেই এক পাশের সড়ক বন্ধ। তার ওপর সড়কের আইল্যান্ডজুড়ে জমিয়ে দীর্ঘদিন হয়েছিল রাখা কাজের মাটি। স্থানীয়রা বলেন, ‘গত ৯ কিংবা ১০ ফেব্রুয়ারিতে সংস্কারের অধীনে থাকা এ সড়ক থেকে বালি কুড়িয়ে রাখা হয়েছে আইল্যান্ডের ওপর। যা গত সপ্তাহে পরিস্কার করেছে চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। দিনে তিন বার পানি ছিটানোর কথা থাকলেও সপ্তাহে  দু’একবার ধূলা ঠেকাতে পানি ছিটিয়ে যায় সিটি কর্পোরেশন।’

অথচ চসিকের সদ্য সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্বে থাকাকালীন তাগদা দিয়েছিলেন- যেন দিনে ৩ বার পানি ছিটানো হয় এ সড়কে।  

অন্যদিকে ঠিকাদারদের সাথে পাল্লা বন্ধ সড়কটিতে ইট, বালি এবং সিমেন্টের মিশ্রণ রেখে দিয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াপদা অফিস থেকে তাসপিয়া এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৩টি স্পটে নির্মানাধীন ভবনে বালি রাখছে সড়কের ওপর। এতে করে গাড়ি চলাচলের সাথে সাথে সেখানে বাড়ছে ধূলার ঘনত্ব। তাসপিয়া এলাকার স্থানীয়র বাসিন্দা ইউসুফ সিভয়েসকে বলেন, ‘এগুলো বলে লাভ কি হবে? কাজ শুরু হয়ছে আজকে কত দিন? কয়েকটা বর্ষা কাটিয়েছি বাজে ভাবে। শীতের সময়ে ধূলাবালি। আশপাশের বাসিন্দাদের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে ২৪ ঘন্টা। অনেকে ঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গেছে।’

চসিক সূত্র বলছে, সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের উন্নয়ন কাজ পায় ৩ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রানা বিল্ডার্স-সালেহ আহমদ (জেভি)। কিন্তু দেড় বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। 

এ অবস্থায় আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠছে চসিকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সবশেষ চসিক গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির কার্যাদেশ বাতিল করেছে। সড়কটির এলাকাজুড়ে  ধূলাবালির বিস্তার ঠেকাতে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে চসিক! এমন উত্তর টা জানা সম্ভব হয়নি প্রধান নির্বাহী কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সড়কে খোলামেলা বালি-সিমেন্টের মিশ্রণ ফেলে রাখার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলছেন,‘বারবার তাগাদা দিয়েও কাজা আদায় করা যায়নি তাদের কাছ থেকে। কয়েক দফা পিছিয়ে ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় নি।’কখন শেষ হবে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

-সিভেয়স/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়