Cvoice24.com

এখন কিউলেক্স, মার্চে বিপদ বাড়াবে এডিস

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৪১, ৩ মার্চ ২০২১
এখন কিউলেক্স, মার্চে বিপদ বাড়াবে এডিস

মশা নিধনে কতটুকু প্রস্তুত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

রাত নেই দিন নেই। ঘরে কিংবা বাইরে। যেখানেই হোক মশার উৎপাতে থাকা দায়। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। কীটতত্ববিদরা বলছেন, এখন যে মশার উৎপাত তা হলো কিউলেক্স মশা। কিউলেক্সের কামড়েই নাজেহাল নগরের বাসিন্দারা। এ নাজুক পরিস্তিতির মধ্যেই এসে পড়ছে বৃষ্টি-বাদলের মৌসুম। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মার্চের প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে  দু’দিন হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে কীটতত্ববিদরা জানিয়েছেন, এক পশলা বৃষ্টি পড়ার পর ঘরে-বাইরের খোলা কন্টেইনারের (টব, বোতল, পানির ড্রাম, ডাবে খোসা) স্বচ্ছ পানিতে বিস্তার ছড়াবে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা। যদিও টিম করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মশা মারার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। 

এদিকে গত বছরের ৪ অক্টোবর থেকে ৫ দিন ব্যাপী চট্টগ্রামে মশার ঘনত্ব নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছিল। ওই জরিপের ‘স্যাম্পল’নেওয়া হয়েছিল, নগরের ৪১ ওয়ার্ডের ২০০টি বাড়ি থেকে। এতে মশার ঘনত্ব দেখা গিয়েছিল প্রায় সব’কটি ওয়ার্ডেই। এনায়েত বাজার এলাকায় মশার ঘনত্ব ছিলো সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া জালালাবাদ, চান্দগাঁও আবাসিক, সিডিএ আবাসিক, চকবাজার, বাকলিয়া, পতেঙ্গাসহ অন্তত ৩০টি ওয়ার্ডে মশা বিস্তারের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। 

সেই জরিপে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল এক হাজার ৪’শ ৫১টি কন্টেইনারের (টব, বোতল, পানির ড্রাম, ডাবে খোসা) উপর। যেখানে ‘পজিটিভ’অর্থ্যাৎ মশার উপস্থিতি মিলেছে ১২৭ টি কন্টেইনারে। কীটতত্ববীদরা বলছেন, ‘মশা বিস্তারের বড় উৎস বদ্ধ ড্রেন ও নালা। কাজেই মশার বিস্তার ঠেকাতে ড্রেন ও নালাগুলোতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে চারপাশ। মশক নিধনে সাধারণ মানুষকে সংযুক্ত করার দায়িত্ব নিতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ (চসিক) সংশ্লিষ্টদের।’

চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কীটতত্ববিদ মুহিদুল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘বর্তমানে যে মশার উপদ্রব বেশি তা কিউলেক্স মশা। শীত যাচ্ছে, গরম আসছে। আর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেশি থাকে।’কিন্তু মার্চের শেষে বৃষ্টি হলে এডিস মশার বিস্তার বেড়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ড. শহীদুল ইসলাম সিভয়েসকে জানান, মার্চের প্রথম পক্ষে অথ্যাৎ প্রথম ১৫ দিনে দু’দিন হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে চট্টগ্রামে।

কিন্তু কীটতত্ববিদরা বলছেন, মুষলধারে বৃষ্টি হলে ধুয়েমুছে যাবে মশার প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র গুলো। তাই  কিছুটা কমতে পারে মশার বিস্তার। কিন্তু তা সাময়িক সময়ের জন্য। পক্ষান্তরে বৃষ্টির পানি টব, কন্টেইনারসহ বিভিন্ন পাত্রে জমা হয়ে থাকলে বৃষ্টির পর মুহুর্তেই বেড়ে যাবে এডিস মশার উৎপাত। এডিস প্রজননের এ ক্ষেত্রকে ‘মেন মেইড’(মানবসৃষ্ট প্রজনন ক্ষেত্র) বলা হচ্ছে কীটতত্ববিদদের ভাষায়। তাই তারা বলছেন, এডিস মশা দমনে সচেতনতাই মূখ্য বিষয়।

বাংলাদেশ বন ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষক (কীটতত্ত্ব বিভাগ) মোহাম্মদ জুনায়েদ  জানান, স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগত কারণেই ডিম ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে মা মশার। এছাড়াও বিভিন্ন ডোবা, নালা, খাল-বিলে পাড়া ডিম প্রতিকূল পরিবেশে ১ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এছাড়া জীবন চক্রের ২য় ধাপে মশার লার্ভা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে ৭ থেকে ১৫ দিন। ফলে উপযুক্ত আবহাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাতের ফলে জমে থাকা ডিম ও লার্ভা হঠাৎ রূপ নেয় পিউফা এবং পূর্ণাঙ্গ মশায়। আরও বেড়ে যেতে পারে মশার বিস্তার।

সবমিলিয়ে কীটতত্ববিদরা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের বদ্ধ ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণেই ভয়ঙ্কর বিস্তার ছড়াচ্ছে মশা। কেননা নগরের চাক্তাই খালসহ অন্যান্য খাল এবং ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন বদ্ধ অবস্থায় আছে। ফলে সেখানে জমে আছে দীর্ঘদিনের মশার ডিম ও লার্ভা। কিন্ত নগরের এসব ড্রেন এবং খালগুলো প্রবাহমান থাকলে মশার ডিম ও লার্ভাগুলো ধ্বংস হয়ে যেত।

কী প্রস্তুতি আছে চসিকের? 

বছরের শুরুর বৃষ্টি সাধারণত মার্চেই হয়ে থাকে। আবহাওয়াবিদরা জানান, মার্চেই একপশলা বৃষ্টি হলে এপ্রিলে তার পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। পরে জুন-জুলাই থেকে ভারী বৃষ্টি দেখা যেতে পারে। তারা বলছেন, এমনটাই হয়ে থাকে প্রতিবছর। প্রতিবছর আবহাওয়া-বৃষ্টি শুরুটা প্রায় একই সময়ে হওয়ার কারণে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও। 

সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বৃষ্টি হতে পারে এটা আমরা আগেই আঁচ করেছি। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে মশক দমনে ক্রাশ প্রোগ্রাম বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে বলে দাবি করেছে চসিকের দায়িত্বশীলরা। সিটি কর্পোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘বৃষ্টির হতে পারে এই বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। মঙ্গলবার দিন আমরা মশার ওষুধের চাহিদা পত্র পাঠিয়েছি।’

আগের ৩ পদের ওষুধ (এডাল্ট্রিসাইড, লার্ভিসাইড ও কালো তেল) কেনা হচ্ছে মশার বিস্তার ঠেকাতে। ঢাকার রিপোর্ট পেয়ে এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে সিটি কর্পোরেশনে।–এ কথা জানান তিনি।

ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার কামড়ে বেড়ে যেতে পারে ডেঙ্গুজ্বর। তার জন্যও প্রস্তুতি প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এখনও দেখা যায়নি। যে কোন সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেলে তার জন্য আমাদের প্রস্ততি সব সময় রয়েছে।’

-সিভেয়স/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়