Cvoice24.com

হেলে পড়া ভবনটি ভাঙতে হবে—তবে কবে, কারা ভাঙবে?

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ১১ এপ্রিল ২০২১
হেলে পড়া ভবনটি ভাঙতে হবে—তবে কবে, কারা ভাঙবে?

গোয়ালপাড়ায় হেলে পাড়া পাঁচতলা ভবনটি ভাঙতে হবে।

নগরের কোতোয়ালী থানার এনায়েত বাজারের গোয়ালপাড়ায় হেলে পাড়া পাঁচতলা ভবনটি ভাঙতে হবে একথা সিডিএ, ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন সব সংস্থাই বলছে। তবে সেই দায়িত্ব কে পালন করবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এক সংস্থার কর্মকর্তারা আরেক সংস্থার কর্মকর্তাদের দেখিয়ে দিয়ে যেন দায়িত্ব এড়াতে চাচ্ছেন। ফলে আদৌ এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙা হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। কেননা এর আগেও দীর্ঘ বছর ধরে প্রায় অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করা হলেও তা অপসারণ করা হয়নি। 

শনিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার পর কার্তিক ঘোষের মালিকানাধীন ৫তলা ভবনটি হেলে পড়ে। এরপর ওই ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতভর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল ভবনটির পাশে অবস্থান নেয়। 

পরে রবিবার সকালে পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ‘ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। টেকনিক্যাল পার্সনের মতামতের ভিত্তিতে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটিকে অপসারণ করতে হবে। এ নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কাজ করবে বলে আশি রাখি।’ তবে কারা এ কাজ করবে তা স্পষ্ট না করলেও তিনি মূলত ভবন নির্মাণ ও তদারক সংস্থা সিডিএকে ইঙ্গিত করেছেন।  

স্থানীয়রা জানান, ৩৫ বছরের পুরনো এ ভবনটির সামনে কোনও ধরনের অনুমোদন না নিয়েই দুটি পিলার বসানোর কাজ করছিলেন মালিকপক্ষ। সন্ধ্যার পর পাইলিং করতে গেলে ভবনটি সামনের দিকে হেলে পড়ে। এ খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে ভবনের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দেন। রাত ১১টার মধ্যে পুরো ভবন খালি করে ফেলে। একই সাথে পাশের ৮ তলা ভবনটিও খালি করতে নির্দেশ দেয় ফায়ার সার্ভিস। 

ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের নন্দনকানন স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আলী বৃহস্পতিবার রতে বলেছিলেন, ‘ইতোমধ্যে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাশের ভবনও খালি করতে বলা হয়েছে। সকাল হলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

রবিবার সকালে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আজিজুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছি। এখন তা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙতে হবে।’ 

কে ভাঙার কাজটি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ কাজ ভবন মালিকই করবে।’ 

চট্টগ্রাম নগরে ভবন নির্মাণ ও তদারকির দায়িত্বে আছে সিডিএ। ভবনটি হেলে পড়ার পর সিডিএ’র করণীয় কি জানতে চাইলে সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার ২ মোহাম্মদ হাসান সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে তা অপসারণের জন্য সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিব। তারাই মূলত ভবন ভাঙার কাজটি করে থাকে।’

এক্ষেত্রে সিডিএ’র বিধি লঙঘন করে ভবন সম্প্রসারণ করার জন্য পাইলিং করতে গিয়ে ভবনটি হেলে পড়ায় ভবন মালিক কার্তিক ঘোষদের বিরুদ্ধে কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান বলেন, ‘নাহ, আমরা সেরকম কোনও চিন্তা করছি না। সিটি করপোরেশনকে বলে দিব ভবনটি যাতে ভেঙে ফেলে।’ 

যদিও সিডিএর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখানে সিডিএর আইন না মেনে অবৈধভাবে ভবন সম্প্রসারণ করার চেষ্টায় ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি আদালত বসিয়ে বিচার করা যেতে পারে। এছাড়া পুরো ভবনটি না ভেঙে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে দুই তিন তলা পর্যন্ত রেখে উপরের তলাগুলো ভেঙে ফেললে হয়তো ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে ভবনটি।  

নিয়ম অনুযায়ী সিডিএ কোন ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করে তা সিটি করপোরেশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে ভাঙতে অনুরোধ করলে ভাঙার কাজটি করে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ। এখন গোয়ালপাড়ার এ ভবনটি ভাঙার ক্ষেত্রে মেয়র রেজাউল করিমও মত দিয়েছেন। তাহলে চসিকের রাজস্ব বিভাগ কী ভাবছে? জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজটি করে মূলত আমাদের প্রকৌশল বিভাগ। তারাই দেখবে বিষয়টি।’ 

নিয়ম অনুযায়ী তা রাজস্ব বিভাগেরই দায়িত্ব তা বলা হলে এবার তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা এখনও সিডিএ থেকে কোনও চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে বিষয়টি দেখব।’

এদিকে রবিবার দুপুরে সিডিএ’র প্রতিনিধি দলের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিডিএ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘১৯৯৬ সালের পর নতুন আইনের আওতায় সিআরবি সংলগ্ন এলাকাতে আমরা কোনও স্থাপনা নির্মাণে অনুমোদন দেই না। কিন্তু তারা ভবনটি ৯৬ সালের পর  নির্মাণ করেন। আর যে অনুমোদন পত্রের কথা বলছেন সেই আইনটি অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে।’

তিনি সিভয়েসকে আরও বলেন, ‘প্রথমত এক শতাংশেরও কম ছোট জায়গায় সিডিএ ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় না। দ্বিতীয়ত, একতো অনুমোদনহীন ভবন তার ওপর তারা নিজেদের মত করে নতুন করে পিলার নির্মাণ করতে গেছে। যার ফলে পাইলিং করার সময় পুরো ভবনটিই হেলে পড়ে।’

যদিও ভবনের মালিক দীপ নারায়ণ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিডিএ কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করে গতানুগতিক কথা বলছে। আমাদের কাছে ভবনের নকশা এবং অনুমোদন সংক্রান্ত প্রমাণ রয়েছে। তারা না জেনে এমন মন্তব্য করছে’।

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়