Cvoice24.com

করোনার থাবা রেলে, উপসর্গে কাবু বেশি

আসিফ পিনন

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১২ এপ্রিল ২০২১
করোনার থাবা রেলে, উপসর্গে কাবু বেশি

ছবি: সংগৃহীত।

করোনার ভয়াবহ থাবায় কাবু হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের রেল পাড়া।  দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর পুরো পরিবারসহ করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে অন্তত ৫ জনের। এদের মধ্যে কেউ কেউ হারিয়েছে পরিবারের সদস্যকে। শনাক্তের বাইরেও জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথার মত করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই আছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। আবার অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য গোপন করছেন বলেও জানা গেছে।

অন্যদিকে লকডাউনেও থেমে নেই পণ্যবাহী ট্রেনের চলাচল। চট্টগ্রাম থেকে তেল, কন্টেইনার, কাঁচা সবজিসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ট্রেন ছুঁটছে ঢাকা, সিলেট, রংপুর, দোহাজারীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে। সেখানে দায়িত্ব পালন করছে ট্রেনের গার্ড (পরিচালক), রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি)সহ পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ ও রেলওয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

রেলওয়ে সূত্র জানা গেছে, শুক্রবার (১০ এপ্রিল) করোনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী। সঙ্গে তার স্ত্রী, ভাইপো এবং ভাইপো-স্ত্রীরও করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাছাড়া লকডাউন শুরুর আগে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আতিক নামের একজন গার্ড (ট্রেন পরিচালক)।  সেই সাথে তার পরিবারের সদস্যরাও।  প্রায় একই সময়ে টিকিট কালেক্টরদের (টিসি) মধ্যে পজিটিভ হয়েছেন সাফায়েত  ও অনুপম নামের আরও দু’জন। তাদের মধ্যে সাফায়েত পুরো পরিবারসহ করোনা আক্রান্ত। দ্বিতীয় টেস্টে সাফায়েত করোনা মুক্ত হলেও তার পুরো পরিবার এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে রেলওয়ের দায়িত্বশীল  সূত্রে।

তাছাড়া গত ৪ এপ্রিল করোনার নমুনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ। পরিবারের দুই সদস্যসহ আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। একইভাবে রেলওয়ের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় বিশ্বাস জ্বর, ডায়রিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে করোনার টেস্ট করিয়েছেন রোববার (১১ এপ্রিল)।  এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ডা. চিন্ময়ের নমুনা টেস্টের ফলাফল জানা যায়নি। 

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর সিভয়েসকে বলেন,  ‘রেলস্টেশনে যারা কাজ করছে আরও অনেকেই করোনার সন্দেহে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। অনেকে পরীক্ষা করেছেন আবার অনেকে বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন। নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না কত জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’ 

বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীলরা বলছেন, কর্মরতদের মধ্যে কারও করোনা পজিটিভ হলে কিংবা উপসর্গ দেখা দিলে তাদের সঙ্গনিরোধ থাকতে বলা হচ্ছে।  

এদিকে করোনা ‘সাসপেক্টটেড ‘ হওয়ার কারণে গত ৬ এপ্রিল থেকে কাজে যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে  আব্দুর রহিম নামের এক আরএনবি সিপাহীকে।  লকডাউনের আগ থেকে তিনি রেলস্টেশনে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা গেছে আরএনবি সূত্রে। সিপাহী আব্দুর রহিম বর্তমানে আরএনবি ব্যারাকে 'কোয়ারেন্টিনে' আছেন। 

 তাছাড়া স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার করোনা পজিটিভ হওয়ার পর থেকে একইভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম। জ্বর, সর্দি, কাশির মত মারাত্মক করোনার উপসর্গ রয়েছে তারও।

সবমিলিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চাপ সামাল দিতে গিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন রেলওয়ে। তবে পণ্যবাহী ট্রেন গুলো চলাচলে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

কিন্তু সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে  রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,‘আরএনবি যে ব্যারাকে থাকে সেখানে কোয়ারেন্টিনের (সঙ্গনিরোধ) থাকার সুযোগ নেই। কারও জ্বর হলে তাকে কর্মকর্তারা বলছেন যেন কোয়ারেন্টিনে থাকে।  কিন্তু এভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকা সম্ভব না।'

একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেলওয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলছেন, ‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া রেলস্টেশনে রাখা ট্রেনের রেকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পাহারায় দায়িত্ব পালন করছে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু রেলওয়ে স্টাফদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তিনি কোথায় যাবেন,  কি করবেন-  তা ঠিক করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে পরিবারসহ ঝুঁকির মুখে পড়ছে রেলের স্টাফরা। ' 

রেলওয়ে সূত্র জানায়- রেলস্টেশন এবং ট্রেন পরিচালনায় (পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগে)  বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করে প্রায় ২০৮ জন। তাছাড়া অন্যান্য ও জিআরপি পুলিশ মিলিয়ে আছেন প্রায় ১২৫ জন।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের যে হাসপাতালটি (সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতাল) আছে সেটাতো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। তাই চাইলেই সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা। এখন কি করবো বলেন? কিন্তু যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের খবর আমরা পাচ্ছি। তাদের সঠিক চিকিৎসা করতে বলা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি।’

এদিকে রেলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চাপে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেড়েছে পণ্যবাহী ট্রেনের চলাচল। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেখানে ৪ থেকে ৫টি পণ্যবাহী ট্রেন ছুটে যেতো সেখানে লকডাউনের সময়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাচ্ছে ৬ থেকে ৭টি পণ্যবাহী ট্রেন। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়