Cvoice24.com

চসিকের ১৯ স্থায়ী কমিটি গঠন, নতুনদের আধিক্য

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ২৫ এপ্রিল ২০২১
চসিকের ১৯ স্থায়ী কমিটি গঠন, নতুনদের আধিক্য

করোনার কারণে জুম মিটিংয়েই সম্পন্ন হলো ৬ষ্ঠ পরিষদের ৩য় সভা। এদিন চসিকের কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুবিধার্থে গঠন করা হয় ১৯টি স্থায়ী কমিটি। এতে আধিক্য ছিল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের। তবে তুলনামূলকভাবে সংখ্যায় কম হলেও বাদ যায়নি আ জ ম নাছিরের অনুসারীরাও। এবার অন্তত ১০ জন নতুন কাউন্সিলর স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন বিদ্রোহী দুই কাউন্সিলরও। 

রবিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া চসিকের এ সভা শেষ হয়ে দুপুর ৩টার দিকে। প্রতি মাসে একবার করে সব সাধারণ ও সংরক্ষতি কাউন্সিলরদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভা। ওই সভা থেকেই নিজ নিজ ওয়ার্ডের কমকাণ্ড, চাহিদা, সীমাবদ্ধতাসহ নানা কথা আলোচনা সুযোগ পান তারা। তবে করোনার কারণে এবার তৃতীয় সাধারণ সভা হয়েছে ভিডিও কলে। এতে চসিকের ১৯টি স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করা হলেও কথা বলার সুযোগ পাননি অনেক কাউন্সিলরই। 

এ সভায় কথা বলার সুযোগ সীমিত হলেও ঘোষণা করা হয়েছে চসিকের ১৯টি স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলরদের নাম। এতে সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে প্রতিটি বিভাগীয় প্রধানদের। 

১৯ স্থায়ী কমিটির সভাপতিরা হলেন— অর্থ ও সংস্থাপন কমিটিতে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইসমাইল, শিক্ষা কমিটিতে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটিতে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের জহর লাল হাজারী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মোবারক আলী, নগর পরিকল্পনা বিষয়ক কমিটিতে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী, নগর অবকাঠামো নির্মাণ বিষয়ক কমিটিতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী মো. শফিউল আজিম, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক কমিটিতে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হাসনাত মো. বেলাল, ক্রীড়া বিষয়ক কমিটিতে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আতাউল্লাহ চৌধুরী, পরিবেশ বিষয়ক কমিটিতে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শৈবাল দাশ সুমন, আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটিতে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমুল হক ডিউক, যোগাযোগ বিষয়ক কমিটিতে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল বারেক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধণ বিষয়ক কমিটিতে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইলিয়াস, হিসাব ও নিরীক্ষা বিষয়ক কমিটিতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী নুরুল আমিন, সমাজ কল্যাণ ও কমিউনিটি সেন্টার বিষয়ক কমিটিতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুস সালাম মাসুম, বাজারমূল্য মনিটরিং কমিটিতে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আব্দুল মান্নান, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটিতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসিম, দরিদ্র হ্রাসকরণ বিষয়ক কমিটিতে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সলিমউল্লাহ, পানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক কমিটিতে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মোর্শেদ আলম, নারী ও শিশু বিষয়ক কমিটিতে ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জেসমিন পারভীন জেসি। 

এদের মধ্যে মো. ইসমাইল, মো. ওয়াসিম উদ্দীন চৌধুরী, গাজী মো. শফিউল আজিম, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আতাউল্লাহ চৌধুরী, মো. ইলিয়াস, কাজী নুরুল আমিন, আবদুস সালাম মাসুম, মো. আব্দুল মান্নান, মো. মোর্শেদ আলম। এছাড়া মোর্শেদ আলম ও জহুরুল আলম জসিম দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বিদ্রোহী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন।    

১৯ টি স্থায়ী কমিটি গঠিত হওয়ার বিষয়টি সিভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজ্জামেল হক। তিনি বলেন, ‘১৯টি  স্থায়ী কমিটি ঘোষণা হয়েছে আজকের সভায়। এগুলোর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।’ 

সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘বন্দরভিত্তিক চট্টগ্রাম সমৃদ্ধ না হলে বাংলাদেশ এগুবেনা। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামকে একটি আর্ন্তজাতিক মানে নগরীতে রূপান্তর করতে চাই। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে সম্পদ আছে তা ব্যবহার এবং খালি জায়গাগুলোকে আয়বর্দ্ধক প্রকল্প গ্রহণ করে কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে একটি সাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ১৯টি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়াই সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। সুতরাং দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে একটি পরিবার হিসেবে পরিষদের মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে আধুনিক নগর সাজাতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘নগরীর ভাল-মন্দ সব কাজের দায়িত্ব বর্তায় জনপ্রতিনিধিদের উপর। সেক্ষেত্রে নগরীতে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যে কাজই করুক না কেন তা অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অবগত করতে হবে। এ অবগত করা মানে হচ্ছে পারস্পরিক সমন্বয়সাধন। চসিকের ভূ-সম্পত্তিগুলোতে যারা অবৈধভাবে দখল করে আছেন তাদেরকে তিল পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে যিনি যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন এখানে আপোষের কোন প্রশ্নই আসে না। উচ্ছেদকৃত জায়গাসমূহ যাতে পূনঃ দখল না হয় সে জন্য একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।’

মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর জলবদ্ধতা নিরসণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চউক। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খালসমূহের কোন কোন অংশে বাধ দেয়া হয়েছে। এ বাধের কারণে পানি চলাচল বিঘ্নিত হবে এবং জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে চউকের চেয়ারম্যানের সাথে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে, তিনি মে মাসের মধ্যেই খালের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া দুই প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল বিভাগ সরজমিনে স্পটগুলো চিহ্নিত করেছে। আশা করা যায় তাদের প্রতিশ্রুতি মত পানি চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’

তিনি পবিত্র রমজান মাসে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে নগরবাসীর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান। 

মেয়র নগরবাসীকে আশ্বস্থ করে বলেন, ‘করোনাকালের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য নিরপত্তা সুরক্ষায় সিটি কর্পোরেশন জরুরি সেবা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক চলমান রাখবে। বর্ষার আগেই নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলন ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং মশক প্রজনন বিস্তার রোধে ওষুধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে চসিকের সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়োজিত রাখা আছে এবং তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে।’ 

সাধারণ সভা পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক (যুগ্ম সচিব)। বক্তব্য রাখেন, ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোশেদুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়