Cvoice24.com

লকডাউনে গতি বাড়ায় বন্দরের পণ্য পরিবহনে বেড়েছে রেলের আয়

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৭ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনে গতি বাড়ায় বন্দরের পণ্য পরিবহনে বেড়েছে রেলের আয়

লকডাউনের সকাল ঘড়ির কাটা তখন ৯টা। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে বন্দরের কন্টেইনার নিয়ে ঢাকায় ছুটে যাচ্ছে একটি ট্রেন। এভাবে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) পণ্য পৌঁছে দিয়ে চলমান লকডাউনে নতুন নজির স্থাপন করলেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চলমান লকডাউনের জেরে রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে  বন্দর রুটে কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি রেলওয়ের আয় বেড়েছে বহুগুণে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছর এপ্রিলের প্রথম দশ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ ১৮ হাজার ১৪২ টন। যার বিপরীতে আয় হয় প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। তাছাড়া সিজিপিওয়াই থেকে অন্যান্য মালামাল (তেল, গম, চাল ও অন্যান্য পণ্য) নিয়ে সিলেট, শ্রীমঙ্গল, তেজগাঁও, ঢাকা ক্যান্টেনমেন্ট, বগুড়া, রংপুর অভিমুখে ছুটছে ট্রেন। চলতি বছরের এপ্রিলের প্রথম ১০ দিনে এ খাতে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৮১৫ টন। যার বিপরীতে প্রায় ৩ কোটি ২২ লাখ ৩ হাজার টাকা আয় করে রেল কর্তৃপক্ষ।

এর আগের ধাপে অর্থাৎ চলতি বছরের মার্চের শেষ দশ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৬১০ টন। এর বিপরীতে রেলের আয় হয় প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। তাছাড়া মার্চের শেষ দশ দিনে সিজিপিওয়াই থেকে  অন্যান্য মালামাল (তেল, গম, চাল ও অন্যান্য পণ্য) পরিবহন হয় প্রায় ২৩ হাজার ৮৫৯ টন। এর বিপরীতে প্রায় ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আয় করে রেল কর্তৃপক্ষ। 

গত বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের এপ্রিলের প্রথম দশ দিনে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ১৬০ টন। যার বিপরীতে রেলের আয় হয়েছিল প্রায় ১১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদ ও রমজানকে কেন্দ্র করে মার্চের শেষ দিক থেকে ট্রেনে বাড়তে শুরু করে কন্টেইনার পরিবহন। এরপর এপ্রিলের প্রথম দশ দিনে রেকর্ড সংখ্যক আয় করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। যা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ ১৫ এপ্রিলের পর থেকে কমতে শুরু করে ট্রেনে কন্টেইনার পরিবহনের পরিমাণ। যা গত এক সপ্তাহে অনেকটাই কমে গেছে। 

যা বলছেন কর্মকর্তারা

রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘কিছু কন্টেইনার জমা হয়েছিল। এই লকডাউনে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ। তাই গুডস (পণ্যবাহী) ট্রেন পরিচালনার জন্য আমরা যথেষ্ট ইঞ্জিন পাচ্ছি। আমাদের ম্যান পাওয়ার আছে। নির্বিঘ্নে বন্দরের কন্টেইনার ও অন্যান্য মালামাল পরিবহন করতে পারছি।’ 

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউনের জেরে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যায়  যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। এর দশদিন পর অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় রমজান। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে প্রায় সবকিছুর বাড়তি চাহিদা থাকে। তাই এ সময়ে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে ট্রেনে পণ্য পরিবহন নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বলে মনে করেছেন ব্যবসায়ীরা।

যদিও আরও একটি কারণ চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত সময়ানুবর্তিতার কারণে স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে ট্রেনে পণ্য পরিবহনে আগ্রহী হন না ব্যবসায়ীরা। সিজিপিওয়াই থেকে যেখানে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগতো ১৮ থেকে ২২ ঘন্টা  সেখানে চলমান লকডাউনে একই দূরত্বে সময় লাগছে ১০ থেকে সাড়ে ১০ ঘন্টা। 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘লকডাউনে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকায় সবকিছুর সহজলভ্যতা পাচ্ছি, মানে ট্রেনে পণ্য পরিবহনের জন্য যেটা যেভাবে প্রয়োজন আমরা পাচ্ছি। এখন ইঞ্জিনের কোন সংকট নেই। তাই আয় বেশ ভালো হয়েছে। এটা বিদ্যমান আয় থেকেও অধিক আয়।’ 

রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা স্নেহাশীষ গুপ্ত সিভয়েসকে বলেন, ‘ইঞ্জিনের কোন সংকট নেই। যা ইঞ্জিন আছে তা ভালো চলছে। ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পাচ্ছি আমরা। ঢাকায় যেতে আগে যেখানে ১৮ থেকে ২২ ঘন্টা সময় লাগতো সেখানে এখন ১০ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে।’

-সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়