Cvoice24.com

পার্সেল ট্রেনে পণ্যের সঙ্গে উঠছে যাত্রীও

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২ মে ২০২১
পার্সেল ট্রেনে পণ্যের সঙ্গে উঠছে যাত্রীও

লকডাউনে পণ্যবাহী ট্রেনে বাড়ছে যাত্রী পরিবহন

কথা ছিল চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন জামালপুরে ছুটে যাবে ‘পার্সেল ওয়ান’ ট্রেন। এতে ‘সস্তায়’ ট্রেনটির কাঁধে চড়বে প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত পণ্য, সবজি, মাছ, ফলমূল ও অন্যান্য জরুরি পার্সেল পণ্য। তবে রেলের আশায় গুড়েবালি! চালু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও আশানুরূপ পণ্য পাচ্ছে না ট্রেনটি। বরঞ্চ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ‘পার্সেল ওয়ানে’ ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ছে যাত্রী পরিবহন। এই চট্টগ্রাম-জামালপুর রুটের প্রায় সব ক’টি স্টেশন থেকেই যাত্রী তুলছে স্টেশনভিত্তিক সিন্ডিকেটগুলো।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্টেশনে দুই দফা ঘুরে এ তথ্যর সত্যতাও পাওয়া গেছে। নির্ভরশীল সূত্রগুলো বলছে, ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-জামালপুর রুটের স্টেশনগুলোতে পণ্যবাহী ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের জন্য জাল বিছিয়েছে স্টেশনভিত্তিক বিভিন্ন সিন্ডিকেট। তারা চড়া মূল্যে যাত্রী সংগ্রহ করে তুলে দেন ট্রেনটিতে। এই সিন্ডিকেটের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছেন ট্রেনটি পরিচালনায় নিযুক্ত বেশ কয়েকজন পরিচালকও, যাদের যোগসাজেশ রয়েছে বিভিন্ন স্টেশনের মাস্টারসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে।

ট্রেনটির নিরাপত্তা জনিত বিষয় দেখভাল করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। প্রথমদিকে রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) কয়েকজন সদস্য সেখানে নিয়োজিত থাকলেও তা পরবর্তী সময়ে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

ওই ট্রেন এবং রেলস্টেশনগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন আরএনবি সদস্য সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা ট্রেনে উঠতে বাঁধা দিলে দেখা যায়, উর্ধ্বতন কোন অফিসারকে ফোনে ধরিয়ে দিয়েছে। আবার যারা চড়ছেন তাদের অনেকেই রেলের স্টাফ বা স্টাফদের আত্মীয় স্বজন। এখন কাকে কি বলা যায়?’

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধুমাত্র রেলের কর্মকর্তারা কিংবা তাদের স্বজনরা নয়, ট্রেনটিতে দায়িত্ব প্রাপ্তদের ম্যানেজ করে বিভিন্ন গন্তব্যের সাধারণ যাত্রীও চড়ছেন। লকডাউনের জেরে বেশ চড়া মূল্যে এই পার্সেল ট্রেনে চড়ছেন যাত্রীরা।

ট্রেনটির বিভিন্ন পদে একাধিক সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধু মাত্র চট্টগ্রাম-জামালপুর রুটের যাত্রী নয়, ট্রেনটিতে চড়ছে সিলেট ও ঢাকাগামী যাত্রীরাও। তারা নেমে যাচ্ছেন  ট্রানজিট পয়েন্ট আখাউড়াতে। সেখানে পণ্য নিয়ে আসা অন্য ট্রেনে উঠে ঢাকা-সিলেটের মতো দূর পাল্লার গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বুধবার (১৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় প্রথম ট্রেন জামালপুরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়। এরপর প্রতিদিনই একই সময়ে ছেড়েছে ট্রেনটি। তবে প্রথম দিনে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ কম থাকলেও তা ধীরে ধীরে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। এদিকে বিরতি নিচ্ছে অন্তত ২২টি স্টেশনে। এর মধ্যে রয়েছে সীতাকুণ্ড, চিনকি আস্তানা, ফেনী, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব বাজার কালিয়ারচর, বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী, গচিহাটা, কিশোরগঞ্জ, নান্দাইল, আঠারবাড়, সোহগী, ইশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর ময়মনসিংহ জংশন, ময়মনসিংহ নুরুন্দি, নন্দিনা ও জামালপুর স্টেশন। সব ক’টি স্টেশন থেকেই যাত্রী তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় অর্থ্যাৎ দুপুর ৩টায় যথেষ্ট কড়াকড়ি থাকে ট্রেনে যাত্রী না চড়াতে। তবে পাহাড়তলী থেকে শুরু করে পরবর্তী স্টেশনগুলোতে কড়াকড়ি নেই বললেই চলে। এছাড়া দূরবর্তী এসব স্টেশনে রেল কর্তৃপক্ষে মনিটরিং খুব জোরালো নয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্টেশনভিত্তিক সিন্ডিকেটগুলো।

পণ্যবাহী ট্রেনে যাত্রী পরিবহণের বিষয়টি জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘পার্সেল ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কয়েকদিন আগে একটি স্টেশন থেকে কিছু যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রেনে আরএনবির সদস্যরা আছেন। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন কাউকে ট্রেনে উঠতে না দেয়।’

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি আজও খোঁজ নিয়েছিলাম পার্সেল ট্রেনে যাত্রী উঠানো হচ্ছে কি’না। কিন্তু আমাকে জানানো হয়েছে সবকিছু ঠিক আছে। যাত্রী আসছে তবে যাত্রী ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। আপনার কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জানলাম। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। রেলের কোন স্টাফ যদি এটার সাথে জড়িত থাকে তবে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসতে হবে।’

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের জেরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চালু করা পার্সেল এই ট্রেন। যা চট্টগ্রাম-জামালপুর রুটে চলছে ইঞ্জিনসহ মোট ৬টি গাড়ি (বগি) নিয়ে। এদের মধ্যে ৫টি (বগি/ লাগেজ ভ্যান) মালগাড়ি হিসেবে ব্যবহার হবে পণ্য পরিবহনের কাজে। তবে পণ্য সংকটে ট্রেনটির দু’টি বা তিনটি বগি পূর্ণ হচ্ছে। ফিরতি পথের ‘পার্সেল ২’ ট্রেনের অবস্থা আরও নাজুক। এরই মধ্যে ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রেনে যাত্রী চড়াতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্টেশনভিত্তিক সিন্ডিকেটগুলো। 

-সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়