Cvoice24.com

প্রশিক্ষণে গিয়ে হ্যাকিং শিখে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ফয়সাল  

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ৯ মে ২০২১
প্রশিক্ষণে গিয়ে হ্যাকিং শিখে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ফয়সাল  

শনিবার (৮ মে) রাতে ফয়সাল মাহবুবকে আটক করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী

রেলওয়েতে আইভাস সিস্টেম চালু হওয়ার মাত্র ৮ মাসের মাথায় বড় রকমের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে পূর্বাঞ্চলে। কর্মীদের বেতন প্রদানের সুবিধার্থে যে আইভাস সিস্টেম প্রশিক্ষণ সরকারিভাবে তাদের দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশিক্ষণের আড়ালেই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাহাড়তলী অর্থ হিসাব শাখার জুনিয়র কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ (৩৫) হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় কোটি টাকা।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত আইভাস সিস্টেমের প্রশিক্ষণ নিতে তাকে সহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সরকারীভাবে ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়। মূলত সেখানে গিয়েই হ্যাকিংয়ের ধারণা পান ফয়সাল। পরে সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিজের নামে একাধিক একাউন্ট খোলেন তিনি। এরপর সেই অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে কর্মচারীদের বেতন ও উৎসব ভাতা হ্যাক করে নিজের অ্যাকাউন্টে সরাতেন। এভাবে গত সেপ্টেম্বর থেকে টাকা সরাতে শুরু করেন ফয়সাল।

রেল কর্মকর্তারা জানান, আইভাস সিস্টেম হলো রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ডিজিটালে দেওয়ার পদ্ধতি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘আইভাস’ সিস্টেম চালু করা হয়। এ পদ্ধতির বিষয়ে ফয়সালসহ বেশ কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তাদের এ পদ্ধতিতে বেতন দেওয়া হচ্ছিল সেই সেপ্টেম্বর থেকে। পর্যায়ক্রমে কর্মচারীদের যুক্ত করার কথা ছিল এ সিস্টেমের আওতায়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ ও হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সেপ্টেম্বরে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর থেকে কীভাবে হ্যাক করে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে আনা যায় সেটির বিস্তারিত ধারণা পান ফয়সাল। সেই প্রশিক্ষণটি কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতিমাসে হ্যাক করে টাকা সরাতেন। তিনি মূলত নির্ধারিত অ্যাকাউন্টের বদলে নিজের অ্যাকাউন্ট নাম্বার বসান। তারপর একই নামে দুইবার বেতন পোস্টিং দিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করেন। তার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়া আরও  কয়েকজন কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে বলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এর আগে বেশ কয়েকজন কর্মচারীর বেতনের গড়মিলে অভিযোগে তদন্তে নামেন রেলওয়ে পাহাড়তলী হিসাব শাখার ডেপুটি ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার মো. শাহজাহান। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন তিনি। পরে বিষয়টি জানানো হয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাব অধিকর্তা কামরুন্নাহারকে। মূলত আইভাস সিস্টেমের কারণেই জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

কামরুন্নাহার সিভয়েসকে বলেন, ‘২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে টাকা সরাচ্ছিল ফয়সাল। কিন্তু ডিসেম্বের মাসে এসে বড় অঙ্কের টাকা টাকা সরিয়েছেন।’

টাকার পরিমাণ এক কোটি টাকা কি’না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘এখন এ পরিমাণটি বলা যাচ্ছে না। একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকালকে আমরা এটা জানতে পেরেছি। গতকাল পর্যন্ত কি পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছি। ঘটনাটি খুলশী থানা এলাকায় হওয়ার কারণে ওই থানায় মামলা দায়ের করা হবে।’

রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ফয়সালের ব্যাংক একাউন্ট জব্দসহ লুট হওয়া টাকার পরিমাণ ও ওই টাকার অবস্থান দ্রুত জানার চেষ্টা করছে কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া কোটি টাকার গড়মিলের হিসাব মেলানোর চেষ্টা চলছে। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইভাস সিস্টেম চালু হওয়ায় হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন কর্মচারীরা। বেতন পেতে দেরিসহ নানা ভোগান্তির কথা প্রায় সময় অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফয়সাল মাহমুদ ২০১২ সালে জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে পাহাড়তলী অর্থ ও হিসাব শাখায় যোগদান করেন। শনিবার (৮ মে) রাতে ফয়সাল মাহমুদকে আটক করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। বর্তমানে তিনি রেলওয়ে নিরাপত্তা জেনারেলের চৌকিতে ওই বাহিনীর হেফাজতেই রয়েছেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়