Cvoice24.com

করোনার ধাক্কা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে

আসিফ পিনন

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১৯ মে ২০২১
করোনার ধাক্কা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে

এখানেই বসার কথা ছিল নেদারল্যান্ড থেকে আসা রেগুলেটরগুলো।

চলছে জৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ। এরপর আষাঢ়-শ্রাবণ। এই দুই মাস চট্টগ্রামে ডেকে আনে ভরাডুবির বর্ষা। অল্প বৃষ্টিতেই পাল্টে যায় চিরচেনা শহরের চেহারা। বৃষ্টি-জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা নগর দেখলেই মনে হয় যেন খরস্রোতা নদী। প্রতিবছর এমনই থাকে বর্ষার চিত্র। আশ্বাস ছিল—এবারের বর্ষার আগেই নগরের ৫ খালের মুখে বসবে নেদারল্যান্ডের টাইডাল রেগুলেটর। সেগুলো আটকে দেবে জোয়ারের পানি। এভাবেই নগরের জলাবদ্ধতা ঘোচানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আসেনি সেই রেগুলেটগুলো। সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা—এবারের বর্ষায়  আকাশ ভেঙ্গে পড়বে চট্টগ্রামের বুকে। বর্ষায় বাড়বে ভোগান্তি।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় নগরের কলাবাগিচা, মরিয়ম বিবি, টেগপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার, মহেশখালের প্রবেশমুখ প্রথমবারের মত রেগুলেটরগুলো বসানো হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

নেদারল্যান্ড থেকে গেটগুলো আসার কথা ছিল এবছরের মে’র দিকে। এরপর জুনে ৫টি গেট নগরের ৫ খালের মুখে বসানোর পরিকল্পনা ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু করোনার কারণে চীন থেকে রেগুলেটর তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারেনি নেদারল্যান্ড। তাই রেগুলেটর তৈরির কাজও শেষ করতে পারেনি নেদারল্যান্ড। সবমিলিয়ে করোনার কারণে গেটগুলো তৈরি সম্ভব হয়নি।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, নেদারল্যান্ড থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে চট্টগ্রামে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এ গেটগুলো। তবে এরই মধ্যে অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা নেদারল্যান্ড থেকে গেট আসার।

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘নেদারল্যান্ডের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা ম্যানুফ্যাকচারিং করছে। করোনার কারণে তারা চীন থেকে ম্যাটিরিয়ালস গুলো আনতে পারেনি। সবমিলিয়ে করোনার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এ গেট পাচ্ছিনা।’ 

করোনা প্রকোপে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগে নেদারল্যান্ড থেকে জিনিস আসতে লাগতো একমাস। এখন এটা লাগছে দুই মাস। নেদারল্যান্ড কাঁচামাল সংগ্রহ করছে চায়না থেকে। এটাতে তাদের (নেদারল্যান্ড) সময় লাগার কথা ছিল ৪ সপ্তাহ। করোনা পরিস্তিরি কারণে এটা লাগছে প্রায় ৩ মাস।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দেশে প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ড থেকে কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালের এ স্লুইস গেটগুলো বসছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প। এর আগে বাংলাদেশে যে স্লুইচ গেটগুলো বসানো হয়েছে সেগুলো শিটের তৈরি। ফলে সহজেই এগুলোতে মরিচা ধরে যেত। মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যেই এগুলো সংস্কারের প্রয়োজন হতো। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে বসানো চট্টগ্রাম নগরের খালের মুখে এ ৫টি স্লুইচ গেট হবে স্থায়ী ও মজবুত। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বসানো হবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এরমধ্যে চারটি স্লুইস গেট ছোট। যেগুলোতে দুইটি করে ভেন্ট (পানি যাওয়ার পথ) থাকবে। প্রতিটি ভেন্টের সামনে ও পিছনে মোট দুটি করে গেট থাকবে। স্লুইস গেটগুলো বসানো হবে- কলাবাগিচা, মরিয়মবিবি, টেগপাড়া ও ফিরিঙ্গীবাজার খালে। অপর স্লুইস গেটটি বসানো হবে মহেশখালে। সেখানে ১২টি ভেন্ট ও ২৪টি গেইট থাকবে।

জোয়ারের পানি যখন শহরের দিকে প্রবেশের জন্য চাপ দিবে, স্লুইস গেইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটোমেটিক) বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে ভাটার সময় শহরের বৃষ্টির পানি নদী বা সাগরে বের করে দিতে হলে পিছনের গেইট খুলে দিতে হবে। সেই গেইটির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি নদী বা সাগরে চলে যাবে। তবে জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেইটের মাধ্যমে পানি বের হবে না। সে ক্ষেত্রে পাম্পের মাধ্যমে পানি বের করতে হবে। সেজন্য ফাইভ কিউবিক মিটারের বড় পাম্প থাকবে। এছাড়া, মহেশখালে নেভিগেশন লক (নৌযান চলাচলের পথ) থাকবে। যেগুলো প্রায় ২০ ফিটের প্রশস্ত হবে। নৌকা যাওয়ার সময় গেট খুলে দিবে এবং অন্যান্য সময় গেট বন্ধ থাকবে।

জলাবদ্ধতা ঠেকাতে কি ভাবছে চসিক-সিডিএ

চলতি মাসের ১৪ মে অর্থাৎ ঈদের দিনে বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল নগরের বাকলিয়া, চকবাজার, আগ্রাবাদ, বাদমতলী, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁওসহ বেশকিছু এলাকা। এই এক দিনের বৃষ্টি দেখে শঙ্কা বেড়েছে নগরবাসীর মনে। তবে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী জানান, নেদারল্যান্ডের গেটগুলো না আসা পর্যন্ত ৫ খালের মুখে স্লুইচ গেট খোলা হবে না। বর্তমানে এই স্লুইস গেট দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারে না, তবে পাইপের মাধ্যমে নগরীর বৃষ্টির পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই পানি খালে যাওয়ার জন্য যে ড্রেনের প্রয়োজন তা করা হয়েছে। এখন নগরের ড্রেনগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া ভারী বৃষ্টিতে নগরের কোথাও জলজট সৃষ্টি হলে মাঠে নামবে সেনাবাহিনীর কুইক রেসপন্স টিম। 

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দাবি করছে বর্ষার আগে নগরজুড়ে জোর গতিতে চলছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরীর বিশেষ তদারকিতে নগরের ছোট ড্রেনগুলো পরিস্কারের কাজ চলছে। তবে যে সব ড্রেন (বড় নালার) ৩ ফুটের বেশি সেগুলো পরিস্কারের কথা রয়েছে সিডিএ’র।

চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘নগরের যেসব নালা তিন ফুটের কম সেগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছি আমরা। তিন ফুটের বেশি যেগুলো (বড় নালা ও খাল) সেগুলো সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে। বর্ষার আগেই নগরের অনেক স্পটে পরিস্কারের কাজ হয়েছে। যা এখনও চলছে।’

সিভয়েস/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়