Cvoice24.com

মুরাদপুর ফ্লাইওভারে রাতে অন্ধকার, বহদ্দারহাটে বাতি জ্বলে দিনে (ভিডিও)

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১১, ১০ জুন ২০২১

 

নাগরিক সেবা দানকারী সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) খামখেয়ালিপনা ও নজরদারির অভাবে বেহাল দশায় রয়েছে নগরের ফ্লাইওভারগুলো। প্রায় প্রতিদিন নগরজুড়ে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দিলেও নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে দিনের বেলাও জ্বলে সড়কবাতি। এতে করে অপচয় হচ্ছে বিশাল ইউনিটের বিদ্যুৎ। আর এমন ঘটনা ঘটছে প্রায় দিনই।

এদিকে, দিনের বেলায় ফ্লাইওভারটিতে দিব্যি সড়কবাতি জ্বললেও রাতের অন্ধকারে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে থাকে নগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভার। বহুদিন ধরে ফ্লাইওভারটির দীর্ঘ অংশে সড়কবাতি জ্বলে না। ফ্লাইওভারে আলো না থাকায় একদিকে যেমন ভূতুড়ে পরিবেশে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রম।

চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাছে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, কদমতলী ও দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হস্তান্তর করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতি মাসে এসব ফ্লাইওভারের রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে সিডিএর খরচ হতো অন্তত ৪০ লাখ টাকা। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় সেসময় ফ্লাইওভারগুলো চসিকের কাছে হস্তান্তর করেছিল সিডিএ। 

সরেজমিনে এই দুই ফ্লাইওভারে পরিদর্শনে চসিকের গাফিলতির চিত্র চোখে পড়ে প্রতিবেদকের। বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে চলতি মাসের ৪, ৫,৬ ও ৮ তারিখ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কবাতিগুলো জ্বলতে দেখা গেছে। 

ফ্লাইওভারটির দুই পাড়ের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর ফ্লাইওভারের বাতিগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হলেও সেগুলো নেভানো হয় না। যার ফলে প্রায় সময়ই দিনের বেলা জ্বলতে থাকে বাতিগুলো। বিগত ১৫ দিন ধরে এভাবে বাতি জ্বলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখেননি বলেও জানান তারা।

অন্যদিকে, একই তারিখে রাতের বেলায় আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ২ নম্বর গেট থেকে জিইসি অংশ ও ২ নম্বর গেট থেকে কর্ণফুলী মার্কেট অংশে বাতি না জ্বলায় ফ্লাইওভারটি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় দোকানীরা জানান, বাতিগুলো অনেক দিন জ্বলছে না। এগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে নাকি অন্য কোন কারণে জ্বলছে না তা নিয়েও চসিকের কোনো নজরদারি চোখে পড়েনি তাদের।

ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী এক মোটরসাইকেল চালক সিভয়েসকে বলেন, ‘রাতের অন্ধকার দূর করতে ফ্লাইওভারে বাতিগুলো স্থাপন করা হলেও বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন অংশে বাতিগুলো জ্বলছে না। অকেজো এসব বাতি সচল রাখতে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না। এতে ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের প্রবণতা বাড়ার পাশাপাশি ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।’

সিএনজি চালক করিম মোল্লা সিভয়েসকে বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকা ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে এবং সুতা বেধে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা প্রায়শই ঘটে এই ফ্লাইওভারে। রাতের বেলা বাতি না জ্বলায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাফেলা করে না। গত পরশু অন্ধকারে রাস্তা বুঝতে না পেরে এক মোটরসাইকেল চালক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ফ্লাইওভারটির এই বেহাল দশা।’

সিডিএর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে এসব ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হলেও চসিক দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যবহারকারীদের সেই ভোগান্তি আর বিড়ম্বনা বেড়েছে বহুগুণ। ফ্লাইওভারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে চসিক যে শুধু হিমশিম খাচ্ছে তা নয় দায়িত্বে অবহেলার কারণে ব্যর্থ হতে হয়েছে সংস্থাটিকে এমনটাই মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। 

খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নগর পরিকল্পনা শাখা এমন কর্মকাণ্ডকে গাফিলতি উল্লেখ করে দুষছেন বিদ্যুৎ বিভাগকে। চসিকের সহকারী স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ আবদুল্লাহ আল ওমর সিভয়েসকে বলেন, ‘চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগকে এসব বাতি জ্বালানো-নেভানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। এই বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করা উচিত।’ এসব বিষয়ে সমাধানে গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক সিভয়েসকে বলেন, ‘নগরের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বেশ কিছু সড়ক বাতির তার চুরি হয়েছে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে বাতি না জ্বলাতে সেরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমাদের দেখতে হবে। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টা সমাধান করবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চসিকের বাতি জ্বালানো-নেভানোর জন্য আলাদা লোক রয়েছে। এরপরও বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে বাতি জ্বলাটা অবশ্যই গাফিলতি। শুধু গাফিলতি নয়, চরম গাফিলতি। বিষয়টি আমি আমলে নিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না, যেহেতু জানতে পেরেছি আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে।’

তবে চসিকের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বিদ্যুৎ শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কান্তি দাশ এসব বিষয়ে সাফাই গেয়েছেন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে দিনের বেলায় অনেক ক্ষেত্রে মেনটেইন্যান্সের জন্য বাতিগুলো জ্বালানো হয়। সে কারণে হয়তো দিনের বেলায় বাতিগুলো জ্বলে। অন্যথায় দিনে ফ্লাইওভারের বাতি জ্বলার কথা না। তারপরও আপনি যেহেতু বলেছেন আমি বিষয়টা দেখব।’

আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে বাতি না জ্বলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সময়ই ফ্লাইওভারের সুইচ বক্সের ক্যাবল কেটে সেগুলো চুরি করা হয়। এ ব্যাপারে আমরা থানায় মামলাও করেছি। চোরেরা ক্যাবল চুরি করে নিয়ে যায় আমরা তা আবার লাগাই। এভাবেই সমস্যার সম্মুখীন আমাদের হতে হচ্ছে। তবে অন্য কোন কারণে বাতিগুলো জ্বলছে না কিনা তা আমরা পরীক্ষা করে দেখে ঠিক করে দিবো।’

-সিভয়েস/জেআইএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়