সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবের অবৈধ ২২ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
সিভয়েস প্রতিবেদক
সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানের অবৈধভাবে নেয়া ২২ টি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। জালিয়াতির মাধ্যমে আরেকজনের নামে বরাদ্দকৃত ১২টি চুলার গ্যাস সংযোগ ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বন্ধ থাকার পরও আরও ১০টিসহ মোট ২২টি চুলার গ্যাস সংযোগ নেন তিনি।
বিষয়টি দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় মামলার আসামি হন সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান। মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের পর কর্ণফুলী গ্যাসের জিএমসহ তিনজন গ্রেপ্তার করা হয়।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানের অবৈধ নেয়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের কথা নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশ করেননি।
তিনি জানান, শনিবার দুপুরে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকৌশল বিভাগের লোকজন নগরের চান্দগাঁও থানার সানোয়ারা আবাসিক এলাকার মুজিবুর রহমানের নেয়া ২২টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা প্রয়াত এম এ সালামের নামে বরাদ্দকৃত ১৮টি অব্যবহৃত দ্বৈত চুলার মধ্যে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ১২টি দ্বৈত চুলা চান্দগাঁও সানোয়ারা আবাসিক এলাকার মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তর করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কতিপয় কর্মকর্তারা। তাদের এ অনিয়মকে বৈধতা দিয়ে বানানো হয় মূল গ্রাহক মৃত সালামের স্ত্রী নুরজাহানের নামে ভুয়া চুক্তিনামা। ফলে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে সানোয়ারা আবাসিক এলাকার মজিবুর রহমানের নামে ওই ১২ টির সাথে অবৈধভাবে আরও ১০ টিসহ মোট ২২টি গ্যাস সংযোগ দেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।
দুদকের অনুসন্ধানে এমন দুর্নীতির প্রমাণ মেলায় দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপ-সহকারি পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের মামলার জালে আটকা পড়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলম এবং গ্রাহক মো. মুজিবুর রহমান। এদের মধ্যে থেকে প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে দুদক।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি আদেশে আবাসিক খাতে নতুন ও বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। সেই সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আসামিরা একে অপরের যোগসাজসে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে নুরজাহান বেগম নামে হালিশহরের এক আবাসিক গ্রাহকের ১২টি দ্বৈত চুলা ভিন্ন খতিয়ান ও দলিলের মালিকাধীন জায়গায় চান্দগাঁওয়ের আবাসিক ভবনে স্থানান্তর করেন। যদিও খাতে গ্যাস বিপনণ নিয়মাবলী-২০১৪ এর ৯, ৩ এ হস্তান্তর/স্থানান্তর/একত্রীকরণ প্রসঙ্গে বলা আছে, কোন গ্রাহকের জন্য বরাদ্দকৃত শুধুমাত্র গ্যাস লোড অন্য কোন গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর কিংবা বিক্রি করা যাবে না, যৌক্তিক কোনো কারণে গ্যাস সংযোগ স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে মালিকানা অপরিবর্তিত রেখে প্রস্তাবিত স্থানে গ্যাস সংযোগ করা যাবে। আবার কোন গ্রাহক যদি স্থায়ীভাবে সংযোগ বন্ধ করার ঘোষণা দিলে গ্যাস লোড বিতরণ কোম্পানীর কাছে সমর্পিত করতে হবে। অথচ অভিযুক্তরা মূল মালিক না হওয়া স্বত্তেও আলাদা রাইজারের মাধ্যমে খতিয়ান ও দলিলের জায়গার অন্য মালিককে ২২টি গ্যাস সংযোগ প্রদান করে।
এজাহারে ঘটনার সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, মৃত এম এ সালাম নামে একজন গ্রাহক তার বাড়ির আঙিনায় স্থাপিত ১৮টি দ্বৈত চুলার মধ্যে ৬টি দ্বৈত চুলা রেখে ১২টি দ্বৈত চুলা চান্দগাঁওয়ের সানোয়ার আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরের আবেদন করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরের ২৫ তারিখ আবাসিক খাতে স্থানান্তরে নিরুৎসাহিত করুন মর্মে আবেদনটি কেজিডিসিএলের তৎকালীন উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়-দক্ষিণ) প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন আবেদনটি ফিরিয়ে দেন। পরে মৃত এম এ সালাম নামে ওই গ্রাহকের স্ত্রী নুরজাহান সালামের নাম ব্যবহার করে তৎকালীন ডিজিএম মো. সারওয়ার হোসেন ভুয়া আবেদনপত্র ও দলিল সৃজন করে একে অপরের যোগসাজসে জাল দলিল সৃজন করে তথ্য জরিপকারী মো. দিদারুল আলম জরিপ করে স্থানান্তরের সুপারিশ করে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিজিএমের অবৈধ নির্দেশনায় তার নিচের কর্মকর্তাগণ মো. মুজিবুর রহমানের নামে স্থানান্তরের জন্য অনুমোদন করেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়-উত্তর) চাহিদাপত্র প্রদানের অনুমতি দেন।