Cvoice24.com

আইবাস সিস্টেম: বাড়ছে ক্ষোভ, নজিরবিহীন অস্থিরতা রেলে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ১৪ জুন ২০২১
আইবাস সিস্টেম: বাড়ছে ক্ষোভ, নজিরবিহীন অস্থিরতা রেলে

অস্থিরতা কমছেই না। আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমের নিত্যনতুন নিয়ম চালুর খবরে বরঞ্চ দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এবার রেলওয়ের রানিং স্টাফরা বলছেন—রেলওয়ের ‘কি পয়েন্টে’ কর্মরতদের উত্তেজিত করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে রেল প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা সরকার বিরোধী একটি চক্র। এতে যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্তিতি সৃষ্টি হলে তার দায় নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। 

এ ব্যাপারে  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম-চট্টগ্রাম) তারেক মোহাম্মদ শামস তুষারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সিভয়েসকে বলেন, আইবাসের সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আলোচনা হচ্ছে। আসলে এটা আর্থিক বিভাগ দেখছে।

এদিকে সোমবার (১৪ জুন) পাহাড়তলীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ জরুরি সমাবেশে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, রেলওয়ে গার্ড কাউন্সিল এবং টি.টি এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা। 

রেলওয়ের রানিং স্টাফরা বলছেন, রেলের সৃষ্টির শুরু থেকেই   রেলওয়ে রানিং স্টাফরা ‘মাইলেজ’ রেলওয়ে কোডে ‘পার্ট অব পে’ হিসাবে রেলওয়ে কোড এবং ম্যানুয়াল বিধান মতে নিয়মিত মাসিক বেতন ও অর্জিত মাইলেজ সংযুক্তভাবে পেয়ে আসছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ রানিং স্টাফদের মাইলেজ বেতন বাজেট থেকে আলাদা করে টি.এ খাতে সংযুক্ত করা হয়।  স্বাভাবিকভাবেই টি.খাতে আর্থিক বরাদ্দ কম থাকার কারণে এতে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা। জটিলতা নিরসনে পরবর্তীতে মাইলেজের জন্য  ‘মাইলেজ ভাতা’ নামের আলাদা কোড খোলা হয়। যেখানে আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে রানিং কর্মচারীদের অর্জিত মাইলেজ সর্বোচ্চ ৩ হাজার  মাইল বা ৩০ দিনের বেশি অর্ন্তভুক্ত করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিক্ষোভ বাড়ছে রানিং স্টাফদের মধ্যে।

রেল পরিচালনার সাথে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন,  মাইলেজ সিস্টেম হচ্ছে মূলত ‘পার্ট অব পে’ অর্থাৎ বেতনের অংশ।  যারা ট্রেনের গার্ড, চালক, ট্রেন কন্ট্রোলারসহ ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কাজ করছেন তারা মাইলেজের সমপরিপাণ টাকা পাবেন। এভাবে যারা ১০০ মাইল রান করেন তাদের কর্মঘন্টা হিসেব করা হয় ৮ ঘন্টা। এই নিয়মে মাস শেষে কারও মাইলেজ নির্ধারণ হয় ২ হাজার। আবার অনেকের মাইলেজ আসে ৬ কিংবা ৭ হাজার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, ‘রানিং স্টাফদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। কেননা মাইলেজ সবার একরকম হয়না। নতুন আইবাস সিস্টেমে এটা বেতনের খাত থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে এটা লিমিট (মাইলেজ নির্ধারণ) করে দেওয়া হয়েছে। মাইলেজ তো নির্ধারণ করা যাবে না। কারণ কারও ২ হাজার মাইলেজ কিংবা কারও ৫, ৬, ৭ হাজার পর্যন্ত মাইলেজ আসে। এতে ইনপুট দিতে গিয়ে  ইরোর লিখা আসায় নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রানিং স্টাফরা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় ট্রেন চালনা করেন। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের সময় মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে রানিং স্টাফরা ট্রেনের চাকা সচল রেখেছে। যেখানে ঝুঁকি ভাতা দেওয়া প্রয়োজন তা না করে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত থাকা মাইলেজ সিস্টেম আবার নতুনভাবে বন্ধের চক্রান্ত হচ্ছে।’

অন্যদিকে বাংলাদেশে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির পাহাড়তলী শাখার সভাপতি ইকবাল আহমেদের সভাপতিত্বে সোমবারের জরুরি সভায় বক্তারা বলেন, ‘জীবন দিয়ে হলেও মাইলেজ বন্ধের এ হীন প্রচেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না। চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) ‘র মাধ্যমে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানাচ্ছি। যুগ যুগ ধরে বহাল থাকা ‘পার্ট অব পে’ মাইলেজ আগের মতো বেতন বাজেটে রেখে কোড ও  ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অর্ন্তভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যদিকে যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্তিতি সৃষ্টি হলে তার দায় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।’

জরুরি সমাবেশে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, খুরশিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম সাহেদ আলী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল বারি, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মীর এবি এম শফিকুল আলম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস, রেল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি শামসুদ্দিন মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইমুমু হোসেন (ভোর), রেলওয়ে গার্ড কাউন্সিলরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রোকন উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল বড়ুয়া প্রমুখ।


এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়