Cvoice24.com

মেগাপ্রজেক্টের বলি চৌমুহনী-বারেক বিল্ডিং সড়ক, ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুক্তভোগীরা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২০ জুন ২০২১
মেগাপ্রজেক্টের বলি চৌমুহনী-বারেক বিল্ডিং সড়ক, ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুক্তভোগীরা

ভোগান্তির শেষ নেই সড়কটিতে চলাচলকারীদের

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অপরিকল্পিত নির্মাণকাজের কারণে ভুগছে নগরবাসী। তবে এই মেগাপ্রজেক্টে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শেখ মুজিব সড়কের আগ্রাবাদ চৌমুহনী থেকে বারেক বিল্ডিং অংশে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা। সড়কটির বিভিন্ন অংশে সৃষ্ট খানাখন্দ নতুন করে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে টানা বর্ষণে। 

পথচারীদের পাশাপাশি রাস্তায় নামামাত্রই বিপদে পড়তে হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনকে। প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট গর্তে যান আটকে যানজটে পড়া কর্মজীবীদের নিত্য দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রায়শ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। সড়কের বেহাল দশায় অনেকটা নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

যদিও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়েই দায় সারছেন। অপরিকল্পিত কাজ নয়, বর্ষার কারণেই মূলত সড়কের বেহাল দশা বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। পুরোপুরিভাবে দুর্ভোগ লাগবে নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আরও মাসতিনেক, বলছে সিডিএ।

সরেজমিনে নগরের শেখ মুজিব সড়কের আগ্রাবাদ চৌমুহনী থেকে বাদামতলী অংশে ঘুরে পথচারী ও যানবাহনের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। নির্মাণকাজের জন্য দেওয়া বেষ্টনীর কারণে সড়ক সংকুচিত হওয়ায় ব্যক্তিগত ও গণপরিবহনের পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে বন্দরগামী ট্রাক-লরিকে।

পাশাপাশি নির্মাণ কাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত। এর মধ্যে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে আবির্ভুত হয়েছে টানা বর্ষণ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি পানি ও কাদায় একাকার। এ প্রতিবেদকের দুই ঘণ্টা অবস্থানকালে বেশকিছু যানবাহনকে এসব গর্তে পড়ে বিকল হতেও দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, ব্যস্ত এই সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা এখন নিত্য ঘটনা।

নগরের আগ্রাবাদের বাদামতলীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী নাসরিন আকতার অফিসে আসেন নিমতলা এলাকা থেকে। কিন্তু বছরখানেক ধরে এ সড়কে আসা-যাওয়া করতে তাকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। সড়কটি নিয়ে অভিব্যক্তি জানতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এই ভুক্তভোগী। সিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নকাজ চললেও তা পরিকল্পিত হওয়া উচিত। অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের ফলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

অনেকটা একই অভিযোগ জানান ব্যবসায়ী খন্দকার শরীফ হোসেন বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই সড়কটি ব্যবহার করছি। কিন্তু গত আট মাস ধরে ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। উন্নয়নকাজ চললে একটু দুর্ভোগ হবে এটাই স্বাভাবিক, আমরা তা মানতেও রাজি। কিন্তু অপরিকল্পিত এ কাজের কারণে আমাদের ভোগান্তি আজ চরম পর্যায়ে।’

ওই স্থানের একাধিক দোকানীর সঙ্গে কথা হলে তারা সিভয়েককে জানান, দায়িত্বশীলদের অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ ও দায়িত্বে অবহেলার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে দিনের পর দিন এই ভোগান্তি। তবে যতদ্রুত সম্ভব এই দুর্ভোগের অবসান চান তারা।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে যে নগরবাসীকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি। এই দুর্ভোগের কারণে আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধান করার।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আমরা যখন সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড় অংশে এই নির্মাণকাজ করছিলাম তখন কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আমরা সড়কটির মেরামতের কাজ শুরু করতে পারছি না। মাসখানেক পর মেরামতের কাজ শুরুর পরিকল্পনা আছে। তবে পুরোপুরিভাবে এই ভোগান্তি থেকে মুক্ত হতে নগরবাসীকে আরও তিন মাসের মতো অপেক্ষা করতে হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম সফরকালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এ প্রকল্প যখন অনুমোদন পায়, তখন তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।

নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চারলেনের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মাঝখানে নকশা নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও সেটার সমাধান হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৪৮ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। 

প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ এর জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এটা আরও বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। এ বিষয়ে জানতে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

-সিভয়েস/জেআইএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়