Cvoice24.com

আপত্তিকে পায়ে ঠেলে টাইগারপাসে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবেই সিডিএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ১৯ জুলাই ২০২১
আপত্তিকে পায়ে ঠেলে টাইগারপাসে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করবেই সিডিএ

সিআরবিতে সবুজ রক্ষার কথা বলে রেলওয়েকে হাসপাতাল করতে না দেওয়ার কথা বারবার প্রচার করলেও টাইগারপাসে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ঠিকই জন দাবি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আপত্তিকে আমলেই নিচ্ছে না সিডিএ। বরং যারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিরোধীতা করছে তাদের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে যথা সময়েই টাইগারপাসের পাহাড় ঢেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সিডিএ। চসিকের আপত্তি জানিয়ে দেওয়া চিঠির জবাবেও এর ‘যৌক্তিক কারণ’ উল্লেখ করা হবে বলে জানিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলছেন, যথা সময়ে আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী কাজ শুরু করা হবে।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। যা পাহাড় না কেটেই লালখান বাজার এলাকায় শুরু হওয়া আখতারুজামান ফ্লাইওভারকে যুক্ত করবে এয়ারপোর্ট সড়কে। তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লালখান বাজার অংশে ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জানানো আপত্তি আমলেই নিচ্ছে না সিডিএ। 

গত ২১ জুন আপত্তি জানিয়ে সিডিএ চেয়্যারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল চসিক। তবে চিঠি পাঠানোর প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও চসিকের আপত্তির জবাবে কোন উত্তর দেয়নি সিডিএ। চসিকের কথা কোনও ভাবেই পাহাড়ের সৌন্দর্যকে ক্ষুন্ন করে ফ্লাইওভার করতে দেওয়া যায় না। তাদের কথা রাস্তার মালিক চসিক। তাই তাদের কথা আমলে নিতেই হবে।

অন্যদিকে সিডিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চসিকের আপত্তির বিষয়টি অযৌক্তিক। তাছাড়া ওই অংশে ফ্লাইএভারের সংযোগ স্থাপন গ্রাউন্ড লেভেলে করার যে প্রস্তাব চসিক দিয়েছে তা পুরোপুরি অপরিকল্পিত। বরঞ্চ ওই এলাকায় পাহাড় বিনষ্টের ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে বলে মত সিডিএ কর্মকর্তাদের। এ বিভ্রান্তি  কাটাতে একটি এনিমেশন তৈরির কথা ভাবছে সিডিএ। সেখানে দেখানো হবে সড়কের মাঝ অংশের প্রায় ৩০ ফুট উপরে ফ্লাইওভার করা হলে দু'পাশের পাহাড়ের সৌন্দর্য উপর এবং নীচ থেকে অবলোকন করা সম্ভব হবে।

এদিকে গত ২১ জুন চসিকের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল—  ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে প্রকল্পের অধীনে লালখান বাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে লালখান বাজারের সড়কের দৃষ্টিনন্দন পাহাড় দু’টির সৌন্দর্য মলিন হবে।’ তাছাড়া আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল সমতলে সংযুক্ত করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে চসিকের ওই চিঠিতে।

সিডিএ'র এক কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, 'আমরা ওদের আপত্তি গ্রহণই করিনি। আমরা আমাদের কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণে আছি। এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইনটি এমনভাবে করা হয়েছে যেন সব এলাকার মানুষ মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটকে টার্গেট করে এয়ারপোর্ট যেতে পারে। মূলত অন্যস্থানে চারলেন হলেও এখানে দুই লেনের হবে।' 

সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিভয়েসকে বলেন, 'ফ্লাইওভার ওই অংশে নামানোর যে প্রস্তাবনা দিয়েছে তা আমরা দেখেছি। কিন্তু এরকম হলে এলিভেটেড এক্সপেসওয়েতে বিভিন্ন জায়গার গাড়ি ওই প্রান্তে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে। তখন টাইগারপাস অংশে সবগাড়ি এক সাথে এসে যানজট সৃষ্টি করবে। সেই সাথে বর্তমানে লালখান বাজার, দেওয়ান হাট, টাইগারপাস থেকে বিভিন্ন গাড়ির স্বাভাবিক চাপ থাকবে। আর সমতলে ফ্লাইওভারের সংযোগ করতে হলে পাহাড়ও কাটতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা আগামী ৫০ বছরের চিন্তা ভাবনা মাথায় রেখে এগুচ্ছি।' 

সিডিএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু' পাশ থেকে আসা ফ্লাইওভার যদি টাইগার পাসে নামানো হয় তাহলে এক্সপ্রেসওয়ের গাড়িগুলোকে লালখান বাজার থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তা ব্যবহার করতে হবে, যা নতুন সংকট তৈরি করবে। সড়কের এই অংশ ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হবে। ফলে এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পাওয়া যাবে না।

সিডিএ প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই লেইন করে টাইগারপাস দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করব। চসিকের চিঠির জবাব দিয়ে দিব ঈদের ছুটির পর। মূলত ওই জবাব একটা অফিসিয়াল ফরমালিটি। আমরা ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করব। সেখান থেকে সরে আসার কোনও সুযোগ নেই। চসিকের কথা শুনলে প্রকল্পের সুফল জলে যাবে।’

এসময় তিনি বিরোধীতাকারীদের এরকম বৃহৎ কোনও প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন কিনা সেটাও জানতে চান। 

একই কথা বলেছেন ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তাও। যদি টাইগারপাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসেওয়ে নির্মাণ করা না হয় তাহলে পুরো প্রকল্পের সুবিধাই জলে যাবে। কেননা সব গাড়ি ওই জায়গায় এসে জমবে। তাতে করে ভয়াবহ যানজটে পড়বে পুরো ফ্লাইওভার। 

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, 'এখানে আপত্তি আমরা দিয়েছি। ফোরাম ফর প্ল্যান চিটাগং-ও একই আপত্তির কথা জানিয়েছে। কিন্তু সিডিএ'র পক্ষ থেকে জবাব পাওয়া যায়নি।' 

যদিও সম্প্রতি সিভয়েসে প্রকাশিত এক ভিডিও নিউজে সিডিএর এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বক্তব্য দিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী ও সিডিএ বোর্ড মেম্বার স্থপতি আশিক ইমরান। এমনকি এনিয়ে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরাও বিরোধিতা করে চসিকের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটিকে চার ভাগে ভাগ করে কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতে কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় অংশে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, তৃতীয় অংশে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় এবং চতুর্থ অংশে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে শুরু থেকেই একেকবার একেক সংস্থার আপত্তির মুখে পড়ে প্রকল্পটি। সবশেষ লালখান বাজার অংশে আপত্তি তোলে চসিক।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়