Cvoice24.com

প্রস্তাবিত স্থানেই হবে হাসপাতাল, বাধা দিলে ব্যবস্থা— সিভেয়সকে রেলের ডিজি 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৭ জুলাই ২০২১
প্রস্তাবিত স্থানেই হবে হাসপাতাল, বাধা দিলে ব্যবস্থা— সিভেয়সকে রেলের ডিজি 

চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ অনেকেই সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সেই বিরোধীদের তালিকায় আছেন সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতারাও। কিন্তু এই বিরোধীতাকালীন সময়েই হাসপাতালটির মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে। হাসপাতাল এলাকার পানির স্তর পরিমাপের জন্য ইতোমধ্যে নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করা হয়েছে। আর সেটা দেখে আন্দোলনকারীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ক্ষোভও জানাচ্ছেন। স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের আপত্তির কথা জানানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। 

এই যখন চট্টগ্রামের অবস্থা ঢাকা থেকে রেলওয়ের মহা পরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রস্তাবিত স্থানেই হাসপাতাল হবে। হবে মানে হবে। এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এবং যথাসময়ে কাজ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে পিএম কার্যালয়ের। এরআগে রেলওয়ের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও হাসপাতাল নির্মাণ ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন হাসপাতাল নির্মাণ হবেই হবে। 

জানা যায়,পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায়  (পিপিপি) এ হাসপাতালে থাকবে ৫০০ শয্যা ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ। তবে প্রকল্পের শুরু প্রথম ৩ বছরে চালু হবে ২৫০ শয্যা। বাকি ২৫০ শয্যা চালু হবে আরও ২ বছর পরে। অর্থাৎ মোট ৫ বছরে চালু হবে বিশেষায়িত  ৫০০ শয্যা। এরপর মেডিকেল কলেজ, মসজিদ, হোস্টেল, স্টাফ কোয়াটারসহ বিভিন্ন সুবিধা চালু করতে সময় লেগে যাবে আরও পরবর্তী ৬ বছর। সবমিলিয়ে আধুনিক হাসপাতালের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ১১ বছর। হাসপাতালটির ডিজাইনে রয়েছে— প্রায় ২ দশমিক ৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ৫০০ শয্যা, ইউনটিলিটি বিল্ডিং ও হাসপাতাল বিল্ডিং। পরের ফেজে ৩ দশমিক ৫৮ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে মসজিদ, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক, নার্সদের জন্য পৃথক হোস্টেল। এর বাইরে আরও থাকছে স্টাফ কোয়াটার ও পুরুষ হোস্টেল।

সাত রাস্তার মোড় হয়ে সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং এই রাস্তাটির দুপাশে থাকা প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে মোট ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সাথে সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি)। কার্যনির্বাহী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের। এরপরই রেলওয়ের ওই স্থানে বৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় রেলওয়ে। 

আন্দোলন যাই হোক। ঠিকই হাসপাতাল নির্মাণের ডিজাইন প্রণয়নের পাশাপাশি গ্রাউন্ড ওয়ার্কও শুরু করেছে রেলওয়ে। সোমবার ও মঙ্গলবার প্রস্তাবিত হাসপাতাল এলাকায় ৭০ ফুট গভীরের একটি নলকূপ বসিয়ে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। সেই পানি বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। একই সাথে শব্দ ও বাতাসও পরিমাপের জন্য তা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মূলত হাসপাতাল এলাকায় শব্দের পরিমাপ, বাতাসের দূষণ ও পানির স্তর কোন পর্যায়ে আছে তার কাজ চলছে। 

এই নলকূপ স্থাপন দেখে সেখানে ছুটে যান আন্দোলনকারীদের অনেকে। তাদের মধ্যে বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব সাংবাদিক মহসীন কাজী বলেন, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে রেলওয়ে হাসপাতাল নির্মাণ করছে। নলকূপ বসানোর মাধ্যমে তা পরিস্কার হলো। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেব।’ 

এছাড়া আন্দোলনকারীদের অনেকেই কোন অবস্থাতেই তা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না বলে নানা মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে আসছেন। 

বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলওয়ের মহা পরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিভয়েসেকে বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় যেহেতু চুক্তি করেছে। তাই প্রস্তাবিত স্থানেই হাসপাতাল হবে। হবে মানে হবে। এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এবং যথাসময়ে কাজ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে পিএম কার্যালয়ের।’

চট্টগ্রামের মানুষের আন্দোলনের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ যারা কিছু জানে না বা না বুঝে না তারাই বাধা দিচ্ছে। তাদের আগে জানা দরকার সরকার কি চায়। এটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনিটর করা হচ্ছে। উনাদেরই নির্দেশনা হচ্ছে হাসপাতালের কাজ এগিয়ে নেওয়া।’

বিরোধীতাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কিছু পাবলিকের কাজই হলো সরকার যা করবে তার বিরোধিতা করা। যা বুঝবে না তারও বিরোধিতা করা। দেশে যখন কভিড আসছিল তখনও কিছু লোক এর বিরোধিতা করেছিল। পরে যখন টিকা আসছে সেই সময়েও কথা বলেছিল। দেশে এখন একেকজন একেক বিশেষজ্ঞ!’

হাসপাতাল নির্মাণ কাজে কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেলওয়ের জিএম ডিএন মজুমদার বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব। যদি কেউ নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, বাধা দিতে আসে। তখন সরকারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এরআগে গত ১৩ জুলাই রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি সিভয়েসকে রেলপথ মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বিরোধিতাকারীরা বিরোধিতা করবেই। আমরা প্রস্তাবিত জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করব। সেখানে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। আমরা সব কিছু মেনটেইন করে আমাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’

গত ১৭ জুলাই সিভয়েসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বরাতে বলেছিলেন, , ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটির অনুমোদন দিয়েছেন। যেহেতু চট্টগ্রামবাসীর মানসম্মত চিকিৎসা সেবার স্বল্পতা রয়েছে, সেটা বিবেচনা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালটির অনুমোদন দিয়েছেন এবং উনি (প্রধানমন্ত্রী) হসপিটাল করার পক্ষে। হাসপাতাল নির্মাণে পরিবেশের কোনও ক্ষতি করা হবে না। এটি নির্মাণে যতটুকু গাছ কাটা হবে প্রয়োজনে তার থেকেও দ্বিগুণ গাছ রোপণ করা হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়