Cvoice24.com

পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটহীন উচ্ছেদ অভিযান, অবরুদ্ধ চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে পুলিশের উদ্ধার  

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৯ অক্টোবর ২০২১
পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটহীন উচ্ছেদ অভিযান, অবরুদ্ধ চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে পুলিশের উদ্ধার  

ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ছাড়াই একাই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েছিলেন উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে চসিকের একদল পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তবে ফুটপাত উচ্ছেদের বদলে মূল সড়ক থেকে অন্তত ১০ ফুট ভেতরে চকবাজারের ওরিয়েন্ট হোটেলের সাইনবোর্ডসহ মার্কেটের সামনের স্থাপনায় আকস্মিকভাবে চালানো হয় বুলডোজার। বিনা নোটিশে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশবিহীন এ অভিযানকে চ্যালেঞ্জ করেন ব্যবসায়ীরা। তখন মোরশেদুল আলম নিজকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন বলে অভিযোগ সেখানকার ব্যবসায়ীদের। পরে তারা যখন নিশ্চিত হন তিনি ম্যাজিস্ট্রেট নন; তখনই চসিক কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। 

খবর পেয়ে চকবাজার থানা পুলিশ এসে অবরুদ্ধ মোরশেদুল আলম চৌধুরীসহ চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের সহযোগিতায় বুলডোজারসহ উচ্ছেদের সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়।

শনিবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ৩টার দিকে গুলজার মোড়ে অবস্থিত ক্যাফে ওরিয়ন রেস্টুরেন্টের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। পরে চকবাজার থানায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্তের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হন উপ-পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদসহ চসিকের লোকজন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দীনও। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙার সময় বিদ্যুতের একটি তার ছিঁড়ে আগুন ধরে যায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । অন্যদিকে উচ্ছেদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ক্ষতিগ্রস্তরা। তাদের সঙ্গে চসিকের কর্মীদের প্রথমে কথা কাটাকাটি, এরপর শুরু হয় হাতাহাতি। এসময় উত্তেজিত ব্যবসায়ীরা গুলজার মোড় সড়ক অবরোধ করে রাখে প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মোরশেদকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নেভায়।

ক্যাফে ওরিয়ন রেস্টুরেন্টের মালিক আল মাহমুদ যুবরাজ সিভয়েসকে বলেন, দুপুর ৩টার দিকে আকস্মিকভাবে বিনা নোটিশে চসিকের ম্যাজিস্ট্র্যাট পরিচয়ে মোরশেদ নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে আমার দোকানের সামনের সাইনবোর্ডটি ভেঙ্গে তিন টুকরো করে ফেলে। পাশের আরও একটি দোকানেও বুলডোজার দিয়ে সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমি বারবার আকুতি মিনতি করে মোরশেদ সাহেবকে বলেছি আমাকে দশ মিনিট সময় দিন। কিন্তু তিনি  সেই সব আকুতি মিনতিকে অগ্রাহ্য করে গুঁড়িয়ে দেন সবকিছু। এতে আমার রেস্টুরেন্টের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করে আসছি নিয়মিত। প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি নবায়ন করা আছে। চসিকের একজন নিয়মিত কর পরিশোধকারী এবং ট্রেড লাইসেন্সভুক্ত ব্যবসায়ী হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠানের কি কোনো সময় পাওয়ার সুযোগ ছিলো না...? করোনার কারেণে বছরজুড়ে ব্যবসায় সর্বস্ব হারানোর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাকালে এই ধ্বংসাত্মক ঘটনায় আমি যে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হলাম তা কিভাবে কাটিয়ে উঠবো। আমরা ব্যবসায়ীরা আমাদের  ক্ষতিপূরণ দাবি করে চকবাজার থানায় অভিযোগ করেছি। দেখা যাক তারা কি ব্যবস্থা নেয় এই বিষয়ে।’

জানা যায়, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চকবাজার থানায় ব্যবসায়ীদের সাথে সমঝোতা বৈঠক করেন। এসময় সামনে নোটিশ ছাড়া এ ধরনের কোনও স্থাপনা উচ্ছেদ হবে না জানিয়ে উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‘চসিকের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের ধারাবাহিকতায় দুপুরে অভিযান পরিচালনার সময়ে একটি দোকানের সাইনবোর্ডে আঘাত লাগলে সেটি ভেঙ্গে পরে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে চসিক কর্মকর্তাদের বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা ঘটে। আমরা থানায় গিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করে আসি।’

ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অভিযান পরিচালনা করা যায় কিনা জানতে চাইলে কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘নিয়মিত অভিযানের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা নোটিশের প্রয়োজন হয় না। অফিসিয়ালি যাদের দায়িত্ব দেয়া হয় তারাই নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন।’

এদিকে মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে বারবার ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

অন্যদিকে চকবাজার থানার ওসি ফেরদৌস জাহান সিভয়েসকে বলেন, ‘দুপুরের পর চসিকের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের সাথে চসিকের লোকজনের সমস্যা হয়। গুলজার মোড়ে লোকজন বিক্ষোভ করা শুরু করে। আমরা খবর পেয়ে চসিকের উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাসহ চসিকের লোকজনকে থানায় নিয়ে আসি। পরে আমাদের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সাথে চসিকের একটি সমঝোতা বৈঠক হয়েছে।’ 

বৈঠকে উচ্ছেদের সময় পুলিশকে সাথে রাখা, ফুটপাত দখলদারদের উচ্ছেদে নোটিশ না দিলেও বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আগে নোটিশ প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এসব নিয়ে কোন পক্ষই কোন অভিযোগ দেয়নি বলে জানান ওসি ফেরদৌস জাহান।

-সিভয়েস/আইএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়