Cvoice24.com

ফ্লাইওভারে ফাটল: নির্মাণ ত্রুটি নাকি ওভারলোড?

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ২৬ অক্টোবর ২০২১
ফ্লাইওভারে ফাটল: নির্মাণ ত্রুটি নাকি ওভারলোড?

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ ঘটনার দায় চাপিয়েছেন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ওপরে। তিনি বলেছেন, নির্মাণ ত্রুটির কারণেই ফাটল দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান এই ফাটলের জন্য ওভারলোডকেই দুষছেন। যদিও চসিকের প্রধান প্রকৌশলী আরও দুটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করেছেন।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমিতো প্রকৌশলী না। ফাটলের কারণ আমি বলতে পারব না। সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই, নিশ্চয় নির্মাণে ত্রুটি আছে। যার ফলে এ ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণে ত্রুটি থাকার দরুন এ ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে কি হয়েছে না হয়েছে এটা আমার থেকে আমাদের প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন। তারা কারিগরি বিষয় ভালো বলতে পারবেন।’

ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা র‌্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এটি আমরা নির্মাণ করিনি, এটা নির্মাণ করেছে সিডিএর অধীনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। ব্যবস্থা নিবে সিডিএ। তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে আজকে আমরা সিডিএকে চিঠি দিবো। যে সমস্ত ঠিকাদার কাজ করেছে তাদের নির্মাণে কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা তদন্ত করে বের করে ব্যবস্থা নিবে। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, দুটি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাগত ত্রুটি, অন্যটি নির্মাণ ত্রুটি। কি কারণে হয়েছে সেটা দেখে এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে এটা ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণে এটা হয়েছে। নির্মাণে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সঙ্গে কথা বলেছি। এই র‍্যাম্পটা মূল নকশায় ছিল না। পরবর্তীতে এটা বর্ধিত করা হয়েছে। এ জন্য ডিজাইনের ত্রুটি থাকতে পারে। 

অন্যদিকে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের নকশার কোনো ত্রুটি নেই। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। শুরুতে প্রবেশমুখে ভারী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিচের সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সে প্রতিবন্ধকতা কে বা কারা খুলে দিয়েছিল। ফলে প্রতিনিয়ত ভারী গাড়ি চলাচল করছে। এই কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি দাবি করেছেন, ফাটল দেখা দিলেও তা সংস্কার বা মেরামত করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কিছুদিন র‌্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তা সংস্কার করা হবে। 
 
এরআগে গতকাল (২৬ অক্টোবর) বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের দুটি পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় রাত সাড়ে দশটার দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যারিকেডের পাশাপাশি সেখানে দু'জন ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এর আগেও দূর্ঘটনা ঘটেছিল ফ্লাইওভারটিতে। ২০১২ সালের ২৯ জুন একটি গার্ডার হঠাৎ ধসে পড়ে। এতে একজন রিকশাচালক সামান্য আহত হন। এরপর একই বছরের ২৪ নভেম্বর ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন নিহত হন। 

যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনায় ১৪ জন নিহত হলে এর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

প্রথমে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯১ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে ১০৬ কোটি টাকা করা হয়। ফের সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ১২০ কোটি টাকা করা হয়। ১৩৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ফ্লাইওভারটির প্রস্থ ১৪ মিটার। চার লেনের বহদ্দারহাট এ ফ্লাইওভারের দুই পিলারের দূরত্ব ১৩০ ফুট।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়