বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে ফাটল নেই, যান চলাচলও উন্মুক্ত হবে— পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ দল
সিভয়েস প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের ফাটলের আতঙ্কে যান চলাচল বন্ধের দুদিন পর বিশেষজ্ঞ দল বলছে— এটি ফাটল নয়। তবে বাইরে থেকে দেখতে ফাটলের মতো লাগছে। মূলত এটি আন ফিনিশিং জয়েন। বরং এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে।
বুধবার সকালে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড কনসাইনমেন্টের (ডিপিএম) ডিরেক্টর মো. শাহজাহান।
সিডিএর সম্মলেন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘বাইরের থেকে দেখতে ফ্লাইওভারের র্যাম্পের পিলারে ফাটলের মতো যেটি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সেটি ফাটল নয়। এটি মূলত ‘আন ফিনিশিং জয়েন্ট’। পিলার নির্মাণের সময় ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়। একটি ধাপের কাজ শেষ করে অপর একটি ধাপের সংযোগ স্থলে কিছুটা কংক্রিট ও প্লাস্টার বের হয়ে আছে। যা দেখতে ফাটলের মতো দেখাচ্ছে।’
ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনালের প্রজেক্ট ম্যানেজার মুনির হোসাইন বলেন, ফ্লাইওভারের এ অংশটি মূল নকশায় ছিল না। ফ্লাইওভার নির্মাণের চার বছর পর তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের অনুরোধে আমরা আরাকান সড়কমুখী এই র্যাম্পটি তৈরি করেছিলাম। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই র্যাম্পটি তৈরি করা হয়। হালকা যান চলাচলের জন্য র্যাম্পটি তৈরি করা হলেও ভারী যান চলাচলের কারণে এটি ঝুঁকিতে আছে আমাদের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ফ্লাইওভারে কোনো ফাটল নেই। হালকা যান চলাচলের জন্য ফ্লাইওভার এখনই খুলে দেওয়া যেতে পারে। তবে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে কিছু কারিগরি পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে ক্রেক হওয়া স্থানটি কেটে পিলারে ভেতরে কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা তাও দেখা হবে।
যদিও গতকাল পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ফাটলের কারণ হিসেবে নির্মাণত্রুটির কথা জানিয়েছিলেন।
তবে ওই দিন বিকেল পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমানও বলেছিলেন, ভারী যানবাহন চলা অথবা নির্মাণকাজে ভুল থাকার কারণে পিলারে ফাটল হতে পারে। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি আবার দাবি করেন, যেটিকে ফাটল বলে আলোচনা করা হচ্ছে বাস্তবে সেটা ফাটল নয়, এটি ফলস কাস্টিং।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমিতো প্রকৌশলী না। ফাটলের কারণ আমি বলতে পারব না। সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই, নিশ্চয় নির্মাণে ত্রুটি আছে। যার ফলে এ ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণে ত্রুটি থাকার দরুন এ ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে কি হয়েছে না হয়েছে এটা আমার থেকে আমাদের প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন। তারা কারিগরি বিষয় ভালো বলতে পারবেন।’
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, দুটি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাগত ত্রুটি, অন্যটি নির্মাণ ত্রুটি। কি কারণে হয়েছে সেটা দেখে এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে এটা ওভারলোডের গাড়ি চলাচলের কারণে এটা হয়েছে। নির্মাণে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সঙ্গে কথা বলেছি। এই র্যাম্পটা মূল নকশায় ছিল না। পরবর্তীতে এটা বর্ধিত করা হয়েছে। এ জন্য ডিজাইনের ত্রুটি থাকতে পারে।
এরআগে ২৬ অক্টোবর বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের দুটি পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় রাত সাড়ে দশটার দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যারিকেডের পাশাপাশি সেখানে দু'জন ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর আগেও দূর্ঘটনা ঘটেছিল ফ্লাইওভারটিতে। ২০১২ সালের ২৯ জুন একটি গার্ডার হঠাৎ ধসে পড়ে। এতে একজন রিকশাচালক সামান্য আহত হন। এরপর একই বছরের ২৪ নভেম্বর ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন নিহত হন।
যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনায় ১৪ জন নিহত হলে এর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
প্রথমে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯১ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে ১০৬ কোটি টাকা করা হয়। ফের সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ১২০ কোটি টাকা করা হয়। ১৩৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ফ্লাইওভারটির প্রস্থ ১৪ মিটার। চার লেনের বহদ্দারহাট এ ফ্লাইওভারের দুই পিলারের দূরত্ব ১৩০ ফুট।