Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজারের ট্রেন চালানো যাবে কিনা জানাতে ১৩ কোটি টাকা চায় বুয়েট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২১ ডিসেম্বর ২০২১
কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজারের ট্রেন চালানো যাবে কিনা জানাতে ১৩ কোটি টাকা চায় বুয়েট

ফাইল ছবি

কালুরঘাট নতুন সেতু আগামী ৫ বছরেও হচ্ছে না সেটা পুরনো খবর। তবে আগামী বছর সেই সেতু দিয়েই কক্সবাজারে ট্রেন নেওয়ার পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। লক্কর ঝক্কর পুরনো সেতু দিয়ে বর্তমানে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো গেলেও ৭৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার কথা ভাবছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অন্তত নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগামী ৭ বছরের জন্য পুরনো সেতুটি উচ্চ গতির ট্রেন চলাচলের উপযোগী করতে গত অক্টোবরে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের দ্বারস্থ হয় রেলওয়ে। পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়ে পুরনো কালুরঘাট সেতুকে ট্রেন কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল উপযোগী করে তোলার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চায় বুয়েট। সেজন্য রেলওয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। 

যদিও বুয়েটের প্রস্তাবটি এখনো রেলওয়ের বিবেচনাধীন। রেল মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে পরার্মশক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পাবে বুয়েট। তখন তারা কালুরঘাট সেতুকে কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল উপযোগী করতে কি কি প্রয়োজন তার সম্ভাব্যতা  যাচাইয়ে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবির। 

রেলওয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে গত ৯ অক্টোবর বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন, অধ্যাপক ড. খান মাহমুদ আমানত ও ড. আব্দুল জব্বার খান কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেন। গত ৪ ডিসেম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবিরের কাছে পরিদর্শনের প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল বলেছেন, আগামী ৭ বছরের মধ্যে যেহেতু নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব নয় তাই পুরনো এই সেতু দিয়ে কক্সবাজারের ট্রেন নিতে হলে সেতুটিকে সেই উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কারের জন্য ১৯টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।  

মূলত এই সেতুর ওপর দিয়ে আদতে নতুন ট্রেন চালানো যাবে কিনা, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কী কী করতে হবে—তা তুলে ধরা হয় এসব প্রস্তাবনায়। সেখানে উচ্চতর এক্সেল লোড (৭৫ কি.মি) মিটারগেজ ট্রেন চালিয়ে পরীক্ষা করা, পথচারী এবং সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা আলাদা পথ দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করা, সেতুর বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করার জন্য একটি ডিজিটাল টপোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা করা, ফাউন্ডেশন ঠিক আছে কিনা, তার জন্য নদীর তলদেশ পরীক্ষা করা, সেতুর অবকাঠামোগত ভিত্তির অবস্থা এবং স্কোয়ারিং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য উপমৃত্তিকা ডেটা বিশ্লেষণ করা, সড়কে পথচারী, পরিবহন এবং রেল পরিচালনার লক্ষে প্রস্থ বাড়ানোর বিষয়টিও খতিয়ে দেখা, সেতুর অবকাঠামো শক্তিশালীকরনের বিষয়টি পরীক্ষা করাসহ ১৯টি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। 

এছাড়া বুয়েট প্রতিনিধি দল পরিদর্শনের সময় জানালিহাট অংশে অ্যাপ্রোচ রোডের সুরক্ষা দেয়ালে ফাটল খুঁজে পেয়েছে। তাছাড়া আরও বড় ধরণের ৬টি ত্রুটি পেয়েছে দলটি। পর্যবেক্ষক দলের চিহ্নিত করা বড় ধরণের ত্রুটিগুলো হলো—সেতুর ১ ও ১৫ নম্বর পিয়ার (এক ধরণের কাঠামো যা মাটির নিচে বা জলের মধ্যে প্রসারিত থাকে) ইটের গাঁথুনিতে তৈরি, তাই জাহাজ চলাচলের সময় সংঘর্ষ হলে পিয়ারগুলো ভেঙে যেতে পারে। এছাড়া সেতুর গার্ডার, ডেক, অ্যাঙ্গেল, গ্যাসেট প্লেট, রিভেট এবং অন্যান্য অংশে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। তাই সেতুটিতে ভারবহন ক্ষমতা দিন দিন হৃাস পাচ্ছে। সেতুর ওপরের অংশের অ্যাপ্রোচ (সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়কটি) লাইনচ্যুত হওয়ার লক্ষণ দেখতে পেয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। এছাড়া সেতুতে গার্ডারের ভারবহনকারী ইস্পাতগুলো অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেতুর দুই পাশের কাঠের পাটাতন ও লোহার বেষ্টনীর ঠিকঠাকমতো আছে কিনা, তা পরীক্ষা দরকার। কারণ এসব যন্ত্রাংশের কাঠামো বেহাল অবস্থায় দেখেছেন বলে জানান পর্যবেক্ষকরা। তবে সেতুর ফাউন্ডেশনে কোনো ত্রুটি পায়নি বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষক দলটি। 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবির সিভয়েসকে বলেন, ‘পরিদর্শনের পর বুয়েটের প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। তাদের প্রস্তাবনাগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। আগামী বছরই কক্সবাজারগামী ট্রেন কালুরঘাট সেতু দিয়ে নেওয়ার জন্য সেতুটিকে উপযোগী করতে হলে কি কি করতে হবে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এটি করার জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। বিষয়টি এখন বিবেচনাধীন রয়েছে।’  

১৯৩১ সালে কালুরঘাট সেতুটি নির্মিত হয়। উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী অংশে প্রায় শতাধিক শিল্প কারখানার ভারী যানবাহন এই সেতুর উপর দিয়ে পণ্য পরিবহন করে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর রেলওয়ে সেতুটিকে ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একদল গবেষক এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর ভারী যান এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কোন নির্দেশনা না মেনে চলছে এসব ভারী যান। 

এত চাপ আর সইতে না পারে যেন বার বার মুচড়ে পড়ছে সেতু! প্রায় প্রতি বছরই কোন না কোন সংস্কার কাজ করতে হচ্ছে এই সেতুর উপর দিয়ে। যা সেতুর উপর নির্ভশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য ডেকে আনছে মারাত্মক ভোগান্তি। সেই সাথে রেলওয়ের ব্যয় হচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। এ সেতু বড় ধরনের সংস্কার কাজ হয় ২০০৪ সালে। সেইবার ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ সময় ১১ মাস সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর ২০১২ সালেও আরও একবার সংস্কার কাজ হয়। পরে জাহাজের ধাক্কায় একটি স্প্যান সরে যায়। ওই সময় দুদিন বন্ধ রেখে তা ৫০ লাখ টাকায় মেরামত করা হয়। এর আগে একাধিক দফায় সেতুর সংস্কার করা হয়। ২০২০ সালে এই সেতুর উপর দিয়ে রেল লাইনের সংস্কার কাজ করা হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

এ সেতু ব্যবহার করেই ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের ভারী ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সেতুটি মেরামত করে এ ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। বর্তমানে এ সেতু দিয়ে ১১ দশমিক ৯৬ টন এক্সেল লোড বিশিষ্ট ছোট লোকোমোটিভ বা হালকা ওজনের কোচ চলাচল করে। যেহেতু এ পথে নতুন রেলপথ এখনো নির্মাণ হয়নি, তাই সেতুটির গার্ডার ও অন্যান্য অবকাঠামো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে প্রতিটি এক্সেল লোডে ১৫ টন ওজনের ইঞ্জিন ব্যবহার করতে চায় রেলওয়ে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়