Cvoice24.com

গণপরিবহনে ‘যত আসন ততো যাত্রী’র নির্দেশনা কাগজে-কলমেই

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২২
গণপরিবহনে ‘যত আসন ততো যাত্রী’র নির্দেশনা কাগজে-কলমেই

মুখে নাই মাস্ক, যাত্রীতে ঠাসা।

করোনার বিস্তার রোধে প্রথম দিকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। পরবর্তীতে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন সংখ্যক যাত্রী বহন করার সিদ্ধান্ত থাকলেও চট্টগ্রামের সড়কে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। দেখে বোঝার ‘জো  নেই’ গণপরিবহনে যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা জারি হয়েছে। পুরোনো স্বভাবে, আপন মনে নির্ধারিত আসনের বাইরেও যাত্রী নিচ্ছে গণপরিবহনগুলো। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে যাত্রীরাও ছিলেন যথেষ্ট উদাসীন।

আজ শনিবার নগরের আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, জিইসি, দুই নম্বর গেট ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, করোনার সংক্রমণ বাড়লেও গণপরিবহন চালক-হেল্পার ও যাত্রীদের মধ্যে কোন সচেতনতা দেখা যায়নি। চালক-হেল্পার ও অধিকাংশ যাত্রীর মুখে ছিল না মাস্ক। কেউ কেউ আবার মাস্ক রেখেছেন থুতনিতে। সরকারের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে যাত্রীরা ঠাসাঠাসি করে গাড়িতে ওঠছেন। অন্যদিকে গাড়িতে আসন না থাকলেও ডেকে ডেকে যাত্রী নিচ্ছেন হেল্পাররা। অতিরিক্ত যাত্রী নিলেও গাড়িতে বসে থাকা যাত্রীদের কাছে দেখা যায়নি কোন প্রতিবাদের সুর। তাছাড়া নির্দেশনায় গণপরিবহনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি।

চার নম্বর রুটের মিনিবাসে করে নগরের দেওয়ানহাট থেকে দুই নম্বর গেট এলাকায় যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘বাসটি টাইগারপাস এলাকায় এলে হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা গাড়িতে উঠতে শুরু করে। নিয়মনীতি কেউই মানছেন না। আর আমরা প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। কে শোনে কার কথা।’

ওই বাসের হেল্পার আমিনুল ইসলামের কাছে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অতিরিক্ত যাত্রী নিতে চাই না। স্টপিজে গাড়িতে থাকা যাত্রী নামাতে গেলেই ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রীরা গাড়িতে উঠে যান।’

মুখে মাস্ক ও গাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই কেন এমন প্রশ্ন শুনেই হাসতে হাসতে মুখে মাস্ক পড়েন আমিনুল। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মালিক এখনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে দেন নাই। কিনে দিলে আমরা তা যাত্রীদের অবশ্যই দিবো।’

গণপরিবহনে নিয়মনীতির প্রতি উদাসীনতা শুধু চার নম্বর রুটে চলা মিনিবাসেই নয়; দশ নম্বর, আট নম্বর, দুই নম্বর ও চার নম্বরসহ অধিকাংশ রুটে চলা গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী, সামাজিক দূরত্বে অবহেলা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার চিত্র দেখা যায়নি।

চট্টগ্রাম মহানগর বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘বিআরটিএর নির্দেশনা মেনে আমরা যত আসন ততো যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালাতে বলেছি। কোনভাবেই গাড়িতে বাড়তি যাত্রী নেয়া যাবে না— এমন নির্দেশনা আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সব চালক-হেল্পারদের দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছি।’

নির্দেশনা না মেনে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা জোর দিয়েই বলেছি গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী না নিতে। যেহেতু আপনি বলেছেন এমন অনিয়ম হচ্ছে, আমরা আবারো এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দিবো।’

সরকারি নির্দেশনা না মেনে গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার বিষয়ে জানতে বিআরটিএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি করোনা মহামারি প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে। তবে পরে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গত শনিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে গণপরিবহনের ‘যত আসন, তত যাত্রী’ নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেয়।

-সিভয়েস/টিএম/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়