Cvoice24.com

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী, কবুল করলেন মেয়রও

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৩ মার্চ ২০২২
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী, কবুল করলেন মেয়রও

কি দিন, কি রাত! ঘর কিংবা বাইরে ;মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘরের ভেতরও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ এক পাঠক সিভয়েসের কাছে ছবিটি পাঠিয়েছেন।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বছরজুড়ে দফায় দফায় বৈঠক, ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে মশা মারার কৌশল শিখে আসা, চবির গবেষকদের পরামর্শ নেওয়া এবং কোটি কোটি টাকার ওষুধ কিনেও মশার বিস্তার থামাতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বরং মশার উৎপাতে দিনে-রাতে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

পুরো ৭৫ লাখ নগরবাসীর মনে হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে এখন একটাই দাবি— চসিক থেকে আপাতত কোন সেবা লাগবে না; শুধু মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই চায়! মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী রীতিমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চসিক তথা মেয়রের সমালোচনা যখন সরগরম; ঠিক সেই সময়ে এসে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর উপলক্ষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেয়র নিজেই মশার কামড়ের অতিষ্ঠের কথা কবুল করে নিলেন। অকপটে বলেছেন, ‘দিনেও মশা, রাতেও মশা, অস্বীকার করছি না। মশা নিয়ে বিড়ম্বনায় আছি।’

তবে পরক্ষণে চতুরতার সঙ্গে এই দায় চাপিয়ে দিলেন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে নিয়োজিত সিডিএ’র ওপর। বললেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পানি যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে পরিদর্শনে গিয়ে খালে একটি ঢিল ছুঁড়ে মারলাম, কয়েক হাজার মশা বেরিয়ে এলো। তিনদিন আগে স্প্রে করেছিল। জলাবদ্ধতা প্রকল্প শেষ না হলে মশা নির্মূল সম্ভব হবে না।’ যদিও মশা নিধনের পুরো দায়িত্বটাই চসিকের ওপর ন্যস্ত। বলা চলে চসিকের প্রধান তিনিটি কাজের একটিই এই মশা নিধন তথা মশামুক্ত নগর উপহার দেওয়া।

যদিও মেয়র বহদ্দারহাটে তার নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার সময় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে কয়েল জ্বালিয়েছিলেন। যা নিয়ে তখন ফেসবুকে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন মেয়রসহ চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ।

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর পূর্তিতে বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে আন্দরকিল্লার কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে  আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, গিয়াস উদ্দিন আফরোজা কালামসহ চসিকের সচিবসহ বিভাগীয় প্রধানরা। 

দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর পূর্তিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

মেয়র তার লিখিত বক্তব্যে জানান, মশা নিধনের মূল কাজটি পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বে থাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ৪১টি ওয়ার্ডকে ৬টি জোনে বিভক্তীকরণ; প্রত্যেক জোনে কর্মদক্ষতা বিবেচনায় কর্মকর্তা পদায়ন ও জোন পুর্নবিভাজন করা হয়েছে বলেও জানান। 

মেয়র আরও বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার দেনা ও নানাবিধি সমস্যা মাথায় নিয়ে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলাম। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে চসিক এ বিদ্যমান বহুমাত্রিক সমস্যা সমাধান করে আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৪তম কর্ণধার হিসেবে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করি।’

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে যে সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মেয়র।

যদিও চসিকের কোটি কোটি টাকার ওষুধ দিনে-রাতে সমানে ছিটালেও যখন কোন মশাই মরেনি; তখন চবির গবেষক দলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মেয়র রেজাউল করিম। চসিকের ব্যবহৃত মশার ওষুধসহ দীর্ঘ গবেষণার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষক দল গত বছরের ৩ আগস্ট সুপারিশ করেছিলেন, মশা থেকে রক্ষা পেতে শুধু রাসায়নিকের উপর নির্ভর নয়, সঙ্গে জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে। তারা বলেছিলেন, ‘রাসায়নিক পদ্ধতিতে মশা দমন দ্রুত কার্যকর মনে হলেও এর প্রভাব স্বল্প মেয়াদের। শুধুমাত্র রাসায়নিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ভুল। মশা নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলো জৈবিক ও রাসায়নিক দমন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমেই সফলতা পেয়েছে। তাই মশা থেকে রক্ষা পেতে শুধু রাসায়নিকের উপর নির্ভর না করে জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে।’

তখন গবেষকরা বলেছিলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমাদেরকে পাঁচ ধরনের মশা নিধক ওষুধ দেওয়া হয়েছিলো। আমরা তা পরীক্ষা করে একটি কেমিক্যালে শতভাগ সফলতা পেয়েছি। হারবাল প্রোডাক্ট জাতীয় ওই কেমিক্যালের সঙ্গে কেরোসিন ব্যবহার করলে শতভাগ লার্ভা ধ্বংস হচ্ছে। বাকি চার ধরনের কেমিক্যালে লার্ভা ধ্বংস হলেও মশার মৃত্যুহার কম। শহরের একটি জলাশয়ে অনেক ময়লা আবর্জনা ও দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলেও তাতে কোনো লার্ভার অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি আমরা। পরে পরীক্ষা করে জানতে পারলাম ওই জলাশয়ে এমন কিছু মাছ আছে যা লার্ভা ধ্বংস করতে সক্ষম। সিটি করপোরেশনগুলো এসব মাছ শহরের বদ্ধ জলাগুলোতে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ছেড়ে দিতে পারে। এতে করে এসব জলায় মশা ডিম ছাড়লে উৎপন্ন লার্ভা খেয়ে দেশি মাছগুলো মশা দমনে অনেক অবদান রাখবে।’

যদিও চসিকের ৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মশা নিধন বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ডিএনসিসিতে মশক নিধনে ব্যবহার হচ্ছে ‘লার্ভিসাইড’। মশার লার্ভা ধ্বংসে যা ব্যবহার হচ্ছে দু’টি উপায়ে। প্রথমত ‘টেমচোপস’ ১০ লিটার পানিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ১৫ মিলিলিটার। এবং দ্বিতীয়ত ‘নোভাল্যুরন’ নামের এক গ্রাম ট্যাবলেট ১ পানির সঙ্গে মিশ্রিত করে ব্যবহার করছে ডিএনসিসি। এদিকে চসিকে মশার লার্ভা ধ্বংসে চসিক ব্যবহার করছে কেবল মাত্র ‘টেমচোপস’। ‘নোভাল্যুরন’ নামের ট্যাবলেটটি ব্যবহার করছে না চসিক। ‘এল্ড্রাটিসাইড’ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ‘ম্যাল্যাশন’। অর্থ্যাৎ পূর্ণাঙ্গ মশা মারতে ফগার মেশিনের মাধ্যমে এ ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে বিকেল বেলায়। যা একই পদ্ধতিতে ব্যবহার করছে চসিক। অন্যদিকে লাইট ডিজেল ওয়েল (কালোতেল) ব্যবহার হচ্ছে চসিক ও ডিএনসিসি দু’টি সংস্থায়। বলা চলে, লার্ভা ধ্বংসকারী ট্যাবলেট ‘নোভাল্যুরন’ ছাড়া বাকি ৩টি উপাদান মিল আছে সংস্থা দু’টির মধ্যে। তাছাড়া চসিকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লার্ভা ধ্বংসে টেমচোপস্ ওষুধটি বেশি কার্যকর। যা ব্যবহার করছে চসিক ও ডিএনসিসি।’ 

তবে মশার বিস্তার এতোটাই প্রকট, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো নগর ভবনজুড়ে। কোটি টাকার ওষুধ ছিটিয়েও কেন মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নগরবাসীর মনে। মশক নিধনের বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আছেন চসিকের দায়িত্বশীলরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চসিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ‘চট্টগ্রামে চলছে জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ। যার ফলে বেশ কিছু খাল বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। মূল খাল বদ্ধ থাকায় ছোট ড্রেনগুলোতেও পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে খাল ও ছোট ড্রেন দুটো জায়গাতেই সমানভাবে মশার বিস্তারের সুযোগ হচ্ছে।’ চসিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ‘মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর আগে ড্রেনগুলোর মধ্যে পানির জলাবদ্ধতা থাকলে তা চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রামে যেগুলো রয়েছে বদ্ধ অবস্থায়।’

-সিভয়েস/এডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়