Cvoice24.com

বৃষ্টিপাতে বাড়বে এডিস মশার উপদ্রব!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৪ মে ২০২২
বৃষ্টিপাতে বাড়বে এডিস মশার উপদ্রব!

বৈশাখের মেঘলা দিনে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর জমে থাকা পানি জানান দিচ্ছে মশার বংশ বিস্তারের ইঙ্গিত। এরমধ্যেই কালবৈশাখীর দাপট দেখতে শুরু করেছে নগরবাসী। কয়েক দফা বৃষ্টিতে মশার উৎপাত যেন বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। যদিও চট্টগ্রামে কিউলেক্স মশার দাপটই বেশি। তবে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বাড়তে পারে এডিসের উপদ্রব। বৃষ্টি না হলে পঁচা পানিতে বাড়ে কিউলেক্স মশার উপদ্রব আর বৃষ্টি হলে এডিস মশা। কারণ এডিসের ডিম ছয়মাস পর্যন্ত শুকনো স্থানে বেঁচে থাকে পারে। তাই আবহাওয়া যেমনই থাকুক মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই নেই নগরবাসীর। 

যদিও এই মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকার কথা নয়। সাধারণত বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ। কিন্তু অনিয়মিত বৃষ্টি হঠাৎই বাড়িয়ে তুলছে ডেঙ্গুর আশঙ্কা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর ওষুধের অভাব, যথাসময়ে ওষুধের প্রয়োগ না করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই অসময়েই জেকে বসতে শুরু করবে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু।

এদিকে, নগরের কোন এলাকায় বছরের কোন সময়ে মশার ঘনত্ব বেশি থাকে তা জানার জন্য গবেষণার কথা থাকলেও নিয়মিতভাবে চট্টগ্রামে সে গবেষণা পরিচালিত হয় না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে যতই পদক্ষেপ নেওয়া হয় না কেন তার পুরোটাই রীতিমতো জলে চলে যায়।

যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাছে মশা মারতে ১ হাজার ৬শ’ লিটার অ্যাডাল্টিসাইড (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ), ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘লাইট ডিজেল অয়েল’ (এলডিও) বা কালো তেল রয়েছে। সেইসঙ্গে পুরো এক বছরের জন্য আরও ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে চসিক। এদিকে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর দাবি করলেও কিন্তু মশার উৎপাত আর কমে না। প্রতি ওয়ার্ডে চারজন করে স্প্রে ম্যান মশা মারতে স্প্রে ও ফগিং মেশিন নিয়ে কাজ করলেও তা এলাকা অনুযায়ী পর্যাপ্ত না বলেও মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আদ্রতা— এই তিনটি বিষয় এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। সেইসঙ্গে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকায় ওষুধ ছিটিয়েও এর সঠিক কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না। নগরবাসীর মন্তব্য— মশা মারতে চসিক যতই কামান দাগাক না কেন শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের মশা আর মরে না, এমনকি কমেও না।

তবে গেল বছরের ৩ আগষ্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় চসিকের ব্যবহৃত কীটনাশকের কার্যকারিতা নেই বলে প্রমাণ পায় গবেষকরা। এরপরই রাসায়নিক কীটনাশক বাদ দিয়ে ভেষজ ওষুধ মসকুবার দিয়ে মশা মারতে মাঠে নেমেছিল চসিক। মশা মারতে গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে চবির ভেষজ ওষুধ মসকুবার ও লাইট ডিজেল অয়েল (এলডিও) মিশ্রণ করে ব্যবহার করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও কমেনি মশার উৎপাত।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আর এতোদিন এডিস খুব একটা ছিল না। কিন্তু এখন থেমে থেমে যে বৃষ্টিটা হচ্ছে এতে এডিস মশার উপদ্রব বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। সাধারণত ড্রাই সিজনে ডেঙ্গু কমে যায়। কিন্তু এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করে বৃষ্টি হচ্ছে। সবকিছু বলা যায় অসময়ে হচ্ছে। এখন ডেঙ্গু বাড়ার কারণ হতে পারে গত দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টি হইছিল, সে পানিতে মশা যদি ডিম পারে তবে ডিম থেকে লার্ভা তারপর এডাল্ট হতে সময় লাগে। যে কারণে এই সময়টাতে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সাধারণত বর্ষার আগে এবং পরে এটা (ডেঙ্গু) থাকে।’

এদিকে, অভিযোগ আছে মশা মারতে বা তাড়াতে আগে কয়েল এবং অ্যারোসল স্প্রে ব্যবহার করলে কাজ হতো। কিন্তু এখন আর হয় না। এ বিষয়ে অভিযোগের সুরে আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার ১৭ নম্বর সড়কের বাসিন্দা শামসুন নাহার পিংকি সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রতিদিন জোয়ারের পানি উঠে ঘন্টাপাঁচেক পানি জমে থাকে বাসার সামনে। এরপর পাশের নালায় ময়লা আবজর্না তো আছেই। মশার কারণে দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়। সন্ধ্যা হতেই দরজা জানালা বন্ধ করতে হয় না হলে মশার কারণে বসা মুশকিল। কয়েল দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। আগে কয়েল দিলে অন্তত বসা যেত। এখন তাও হয় না। যার কারণে এই গরমের মধ্যে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায়। কিন্তু মশার যন্ত্রণা কমে না।’

একই বিষয়ে চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা মমতা বেগম বলেন, ‘যদি কোনোদিন বিকেলে দরজা জানালা বন্ধ করতে ভুলে যাই সেদিন আর অস্তিত্ব থাকে না। ১৫-২০ দিন পর পর মশার ওষুধ ছিটানোর সাড়া শব্দ পাওয়া গেলেও বাস্তবে আসলে তা থেকে কোন লাভ হয় না। মশা মরেও না, কমেও না।’

মশক নিধনে চসিকের ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস বলেন, ‘ইদানিং যেগুলো দিচ্ছে সেগুলো আমরা টেস্ট করিনি। তাই বলতে পারবো না। তবে ব্রান্ডের ওষুধ সঠিকভাবে প্রয়োগ না করলে তো কাজ হবে না। সমস্যা হচ্ছে, আমার যদি এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কথা পাঁচদিন আর আমি তিনদিন খেয়ে তারপর আর না খাই; তাহলে তো অসুখ ভালো হবে না। সেরকম মশাও রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়। তখন আর কাজ করে না। মোট কথা প্রোপার ডোজ প্রোপার সময়ে দিতে হবে। এখানে সময়টাও ফ্যাক্টর। আমি যদি দুপুর বেলা ফগিং করি তখন তো মশা মরবে না। কারণ সেসময় মশা থাকে না। অর্থাৎ সঠিক সময়ে ওষুধ ছিটানো হলে মশা মারা যেতো।’

মশার ওষুধ নিয়ে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘অ্যাডাল্টিসাইড হিসেবে আমরা ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড ব্যবহার করছি। আর টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি লার্ভিসাইড হিসেবে আর এলডিও ব্যবহার করছি। খুব পর্যাপ্ত না হলেও সীমিত আকারে এসব ওষুধ মজুদ আছে। তাছাড়া ব্ল্যাক ওয়েলটা এই সিজনে আর ব্যবহার হবে না। আর সবচেয়ে বেশি কার্যকর এডাল্টিসাইড ও এলডিও একত্রে ব্যবহার করা। তাই আমরা পুরো বছরের জন্য ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছি। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে বিষয়টি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন ফগিংয়ের জন্য যে লোকবল লাগবে তা শুধু চারজন লোক দিয়ে সম্ভব না। একইসঙ্গে পুরো এলাকা ফগিং করতে পারলে কার্যকারিতা বেশি হতো। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য এতো বড় এলাকা একদিনে কাভার করার মতন লোকবল বা মেশিনারী কোনোটাই আমাদের নাই। সেজন্য আমরা বেশি জোর দেই লার্ভিসাইড ও এলডিওগুলো দিয়ে ডিম অবস্থায় ও লার্ভা অবস্থায় মশা মারার। তাই যখন এসব শব্দবিহীনভাবে স্প্রে করা হয়। তখন অনেক সময় লোকেরা জানে না যে ওষুধ মারা হয়েছে।’

তবে নগরের বিভিন্ন নালা-নর্দমার বদ্ধ পানিতে প্রচুর মশা দেখা যাচ্ছে। সেখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ডিম পাড়ছে মশা। ওষুধ ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা নগরবাসীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে বলেও মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তখন ঝিমিয়ে থাকা ডেঙ্গুর প্রকোপে নাজেহাল হবে নগরবাসী। যদিও এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে মশার উৎপাত বাড়বে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

-সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়