Cvoice24.com

একদিকে পানির জন্য হাহাকার, অন্যদিকে অপচয়

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২২ মে ২০২২
একদিকে পানির জন্য হাহাকার, অন্যদিকে অপচয়

এক পাশে বঙ্গোপসাগর, অন্য পাশে কর্ণফুলী। পানির রাজ্যে থেকেও উত্তর পতেঙ্গার বাসিন্দাদের হাহাকার কিনা পানি নিয়ে। এর কারণ একটাই-এখনো যে ওয়ার্ডের সবখানে পৌঁছেনি চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি।

এ জন্য দুঃখ-কষ্টের সব শব্দ একজোট করে কাটগড় এলাকার বাসিন্দা সাহেদ মোহাম্মদ সিভয়েসকে বলে উঠেন, 'ওয়াসার পানি পানি করে কত হাহাকার করলাম। কিছুই হলো না। শহরের বাসিন্দা বটে। সুযোগ-সুবিধায় পাওয়ার দিক থেকে আমরা যেন গ্রাম থেকেও পিছিয়ে।'

শুধু এই ওয়ার্ড নয় পাশের দক্ষিণ পতেঙ্গা, উত্তর-মধ্যম হালিশহর,  দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মোহরা, দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এখনো আছেন পানির কষ্টে।

একদিকে পানির জন্য এমন যখন হাহাকার, অন্যদিকে সেখানে চলছে দিনরাত অপচয়। শহরবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও প্রতি মাসেই ওয়াসার উৎপাদন করা পানির প্রায় এক তৃতীয়াংশই কিনা যাচ্ছে 'জলে'! ওয়াসার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) রিপোর্ট থেকেই মিলেছে এমন তথ্য।

ওয়াসার কাছে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এমআইএস রিপোর্ট তৈরি আছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি—এই পাঁচ মাসের এমআইএস রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছে সিভয়েস। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে পানি অপচয় হয়েছিল ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া নভেম্বরে অপচয় হয়েছিল ২৮ শতাংশ, ডিসেম্বরে অপচয় হয়েছিল ২৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রূয়ারিতে অপচয় হয়েছে যথাক্রমে ৩০ ও ২৫ শতাংশ।

হিসেবটা আরেকটু সহজ করে দেওয়া যাক। ওয়াসা এখন প্রতিদিন অন্তত ৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। এর মধ্যে প্রতিদিনই ১২-১৫ কোটি লিটার পানি অপচয় হচ্ছে।

এই অপচয়কে নন রেভেনিউ ওয়াটার (অরাজস্ব পানি) হিসেবে দেখাচ্ছে সংস্থাটি। অর্থাৎ এসব পানি থেকে কোনো টাকাই পাচ্ছে না ওয়াসা। অথচ এই অপচয় রোধ করা গেলে যেসব ওয়ার্ডে পানি যাচ্ছে না সেখানে পানি পৌঁছানো যেত।

তিন কারণে এই অপচয়

ওয়াসার বিভিন্ন স্তরের তিন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিন কারণেই এই অপচয় হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পানি চুরি। এই চুরি আবার দু-ভাবে হচ্ছে। কোথাও কোথাও ওয়াসার মিটার ইনস্পেক্টররা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কম ইউনিট দেখিয়ে বিল তৈরি করেন। আবার কোথাও কিছু কিছু গ্রাহক অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে লাইন থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। আরেকটি অন্যতম কারণ হলো—পাইপলাইন লিকেজ। ওয়াসার হিসেবে প্রতিদিনই বেশ কিছু লিকেজ ধরা পড়ে। এসব লিকেজ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে নালা-নর্দমায় চলে যাচ্ছে। মিটার নষ্টও কম দায়ী নয় অপচয়ের পেছনে। নষ্ট মিটারে পানি খরচ করলেও ইউনিট বাড়ে না। এসব কারণে মূলত কমানো যাচ্ছে না অপচয়।

গত বছরে পানির অপচয় ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনার টার্গেট নিয়েছিল ওয়াসা। সেই প্রচেষ্টায় সফল হতে পারেনি সংস্থাটি। এবছর ২০ শতাংশে আনার টার্গেট নিলেও সেটিতেও মিলছে না সাফল্য। উল্টো আগের বছরের মাসগুলোর চেয়ে এই বছরের প্রথম মাসে অপচয় হয়েছে বেশি।

একদিকে অপচয়, অন্যদিকে হাহাকার

একদিকে যখন পানি অপচয় হচ্ছে নিয়মিত, অন্যদিকে তখন পানির কষ্টে কাটছে দিনরাত। উত্তর কাট্টলির বাসিন্দাদের দুঃখের কথা তো আগেই বলা হলো। পানির কষ্টে থাকা দক্ষিণ পাহাড়তলীর ফতেয়াবাদের বাসিন্দা আনছারুল হক বলেন, 'রান্নাবান্নার কাজ না হয় পুকুরের পানি দিয়ে সারলাম। কিন্তু সুপেয় পানির খুব কষ্টে আছি। নলকূপ থেকে যে পানি মিলে না। এই কষ্ট কাকে বুঝাই।'

পানির কষ্টে থাকা ওয়ার্ডের মানুষদের বেশিরভাগেরই পানির ভরসা পুকুর আর গভীর নলকূপ। শীত মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়, নলকূপ থেকেও পানি উঠে কম। তখন তাঁদের কষ্ট দ্বিগুণ হয়। আবার কোথাও কোথাও ওয়াসার পানি ট্রাকে ভরে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে পানি কিনেও তাঁরা ব্যবহার করেন।

তবে এসব এলাকায় দ্রুত পানি সরবরাহে 'চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন-২' নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। 

তিনি বলেন, ‘ওয়াসার এখন দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। তবুও কিছু কিছু এলাকায় পানি যাচ্ছে না। মূলত দ্রুত নতুন করে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে। আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ি এলাকায় পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না। এসব এলাকায় পানি পৌঁছাতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পানির আর সমস্যা হবে না।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়